শেক্সপিয়র সরণি থানায় ঢুকছেন ফরেন্সিক-মনোবিদ জয়দীপ সরকার। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁর সামনেই দিনের পর দিন উপবাস করে দিদি ‘যোগ সাধনা’ করেছেন। তিনি বাধা দেননি। উপরন্তু মাসের পর মাস এক ঘরে বাস করেছেন একটি কঙ্কালের সঙ্গে, যেটি দিদি দেবযানীরই বলে তাঁর দাবি। পোষা দু’টো কুকুরের দেহও পচেছে সেখানে।
মধ্য কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের সেই দে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য পার্থ ঠিক কী মানসিক অবস্থায় এমনটা করতে পারলেন, তদন্তকারীদের কাছে তা এখনও ধাঁধা। উত্তর খুঁজতে সিঙ্গাপুর থেকে ফরেন্সিক-মনোবিদ নিয়ে এলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। জয়দীপ সরকার নামে ওই ফরেন্সিক-মনোবিদ বৃহস্পতিবার দে বাড়িতে গিয়ে অনেক কিছু খুঁটিয়েও দেখেছেন। ১০ জুন রাতে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে পার্থের বাবা অরবিন্দ দে’র অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পর দিন পার্থ পুলিশকে বলেন, ঘরে তাঁর দিদি দেবযানীর দেহও রয়েছে। পুলিশ গিয়ে এক মহিলার কঙ্কাল পায়, মেলে দু’টি কুকুরের কঙ্কালও। মানুষের কঙ্কালটি আদৌ দেবযানীর কি না, তা নিশ্চিত করতে করোটি পাঠানো হয় চণ্ডীগড়ের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। তার রিপোর্ট চলতি সপ্তাহে পুলিশের হাতে আসার কথা। কিন্তু রবিনসন-রহস্যের জট খুলতে পার্থের মানসিক অবস্থা যাচাই করা জরুরি তদন্তকারীদের কাছে। সেই সূত্রেই জয়দীপবাবুর আগমন। পুলিশ-সূত্রে খবর: এ দিন সকালে শেক্সপিয়র সরণি থানায় গিয়ে জয়দীপবাবু তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। জানতে চান, তদন্তে কী কী তথ্য উঠে এসেছে। পরে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে যান দে-বাড়িতে। পার্থের ঘরে ঢুকে ঘরের কোথায় কী রয়েছে, তা ‘নোট’ করেন। ঘণ্টাখানেক পরে পার্থের কাকা অরুণবাবু সঙ্গে দেখা করতে যান। রবিনসন স্ট্রিট থেকে ফিরে জয়দীপবাবু যান সিআইডি-র সদর অফিসে। পার্থের বাড়িতে পাওয়া একাধিক ডায়েরি ও চিরকুটের লেখা সিআইডি’র হস্তরেখা-বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যে পরীক্ষা করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে সিআইডি-অফিসারদের সঙ্গে জয়দীপবাবু কথা বলেন। গোয়েন্দারা জানান, পার্থেরা বাড়িতে কী পরিস্থিতিতে থাকতেন, তার একটা মোটামুটি ছবি পুলিশের হাতে এসেছে। যার প্রেক্ষাপটে ডায়েরি ও চিরকুটগুলির লেখা তিনি মিলিয়ে দেখবেন। বাড়িতে যে সব জিনিস, খাবার, পুতুল, বইগুলোও পরীক্ষা করবেন। আজ, শুক্রবার জয়দীপবাবু পাভলভ মানসিক হাসপাতালে গিয়ে পার্থের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, পার্থকে জেরা করেও কঙ্কাল-রহস্যের জট পুরো কাটেনি। পার্থের দাবি: গত ডিসেম্বরে দেবযানী মারা যান। শেষকৃত্য না-করে মৃতদেহটি তিনি ঘরেই রেখে দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল পোষা দুই কুকুরের মৃতদেহও।
এমতাবস্থায় পুলিশের ধারণা, পার্থ মানসিক ভাবে সুস্থ নন। মনোবিকার কোন পর্যায়ে গেলে মানুষ প্রয়াত নিকটাআত্মীয় ও পোষ্যের পচা-গলা শবের সঙ্গে বসবাস করতে পারে, মনোবিদেরা তার সম্ভাব্য নানা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তবু এখনও পার্থের মানসিক গতি-বিধির তল পাননি গোয়েন্দারা। ‘‘তাই মনোবিদের পাশাপাশি ফরেন্সিক-মনোবিদ দরকার। যিনি আনুষঙ্গিক তথ্য-প্রমাণের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করবেন, যাতে কোর্টে পার্থের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেশ করা যায়।’— মন্তব্য এক গোয়েন্দা-অফিসারের। প্রসঙ্গত, চাঞ্চল্যকর নিঠারি-হত্যা মামলায় তদন্তকারীদের সাহায্য করেছিলেন ফরেন্সিক-মনোবিদ জয়দীপবাবু। কঙ্কাল-কাণ্ড সম্পর্কে তিনি কী বলছেন?
এ দিন বিকেলে সিআইডি-র অফিস থেকে বেরিয়ে জয়দীপবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ জানতে চাইছে, ঘটনার সময়ে পার্থ দে’র মানসিক অবস্থা কী রকম ছিল। আমি সব কিছু খতিয়ে দেখে পুলিশকে রিপোর্ট দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy