পুড়ে ছারখার। শনিবার পাতিপুকুর বস্তিতে স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
জতুগৃহর রসদ মজুত ছিলই। তাই আগুন ভয়াবহ চেহারা নিল পাতিপুকুরের সুভাষ কলোনিতে। শুক্রবার গভীর রাতে সেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হল এক পরিবারের দু’জনের। পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে মৃতেরা হলেন প্রিয়া অধিকারী (১৬) এবং নিমাই অধিকারী (২৭)। সম্পর্কে তাঁরা কাকা-ভাইঝি। নিজেদের ঘরের ভিতরেই তাঁরা অগ্নিদগ্ধ হন। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ আগুন লাগে পাতিপুকুরের সুভাষ কলোনিতে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আগুনে ভস্মীভূত হয় বস্তির ২০টি ঝুপড়ি ঘর।
বছরের পর বছর ধরে সুভাষ কলোনির ওই বস্তিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি ঘরই রয়েছে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। বস্তির ভিতর থেকে বড় রাস্তায় সরাসরি পৌঁছনো যায় না। বস্তি থেকে বেরিয়ে পাতিপুকুর রেল লাইন হয়ে নামতে হয় যশোহর রোডে। এমনই এক বস্তির বিভিন্ন ঘরের কোনওটি বাঁশ, দরমার তৈরি, কোনওটি আবার প্লাস্টিকের ছাউনির। প্রায় প্রতিটি ঘরেই মজুত গ্যাস সিলিন্ডার। প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকলের ধারণা, লন্ঠন থেকেই আগুন লাগে ঝুপড়িতে।
বস্তিবাসীরা জানান, প্রিয়াদের বাড়িতেই প্রথম আগুন লেগেছিল। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বস্তির অন্যান্য ঘরে। তেমনই কোনও একটি ঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার আগুনে ফেটে যায়। তার পরেই দ্রুত গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বস্তিতে।
মৃত নিমাই অধিকারীর ভাই প্রশান্ত অধিকারী জানান, ঘরে আগুন দেখেই প্রিয়ার বাবা দিলীপ ও মা সুমা তাঁদের এক বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু কেউ খেয়াল করেননি যে নিমাই এবং প্রিয়া ঘর থেকে বেরোয়নি। প্রশান্তর কথায়, ‘‘দাদা-বৌদি এক বছরের মেয়েকে নিয়ে বেরোনোর সময় প্রিয়াকে বলেছিল ঘরে আগুন লেগেছে। কিন্তু প্রিয়া যে সেটা শোনেনি তা কেউ বুঝতে পারেনি। নিমাই নিজের ঘরে শুয়েছিল।’’
বস্তির লোক জানান, আগুনের ভয়ে সবাই রেল লাইনের উপরে উঠে যান। ইতিমধ্যেই দেখা যায় প্রিয়াদের ঘরের উপরের চাল আগুন লেগে ভেঙে পড়েছে। প্রিয়ার বাবা দিলীপ বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে ভেবেছিলাম যে হয়তো মেয়ে আর ভাই এ দিক-সে দিকে রয়েছে। কিন্তু পরে বুঝলাম ওরা ঘরে আটকা পড়ে গিয়েছিল।’’ বস্তিতে মেধাবী ছাত্রী হিসেবে প্রিয়ার পরিচিতি ছিল। স্থানীয় শিল্পকলা শিক্ষা সদন থেকে এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সে ফর্ম ভরেছিল।
দমকল আধিকারিকেরা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই খবর এলেও ভুল তথ্য পেয়ে অন্য রাস্তায় চলে যায় বিধাননগর দমকল কেন্দ্র থেকে আসা ৮টি ইঞ্জিন। ভুল রাস্তায় ঢুকে পাতিপুকুর মেট্রো চ্যানেলের কাছে গাড়িগুলি আটকে যায়। এর পর ফের বারাসত, মধ্যমগ্রাম থেকে ৭টি গাড়ি ওই ঘটনাস্থলে যায়। যশোহর রোড দিয়ে এসে রেলব্রিজের আগে গাড়িগুলি ডান দিকে ঢুকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তার পরেও বস্তিতে ঢোকার জায়গা না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দমকলকে।
উত্তর ২৪ পরগনার দমকলের বিভাগীয় অফিসার সমীর চৌধুরী বলেন, ‘‘জলের ব্যবস্থা ওই এলাকায় একেবারেই ছিল না। তাই পরে ভুল পথে যাওয়া গাড়িগুলি ফিরিয়ে এনে ও আরও গা়ড়ি বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।’’ যদিও বস্তির পিছনের নয়ানজুলি থেকে বালতি করে জল এনে বস্তিবাসীরাই প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জিনিসপত্র কিছু যদি পাওয়া যায় সেই আশায় ধ্বংসস্তূপ ঘাঁটছেন বস্তির বাসিন্দারা। কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, যাঁদের ঘর পুড়ে গিয়েছে, তাঁদের স্থানীয় শিল্পকলা শিক্ষা সদনে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy