সচেতনতায়: স্কুলে চলছে ছবির প্রদর্শন। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
আদর করে মা খাইয়ে দিতে গেলেও খাবার পছন্দ না হওয়ায় উঠে যায় ছেলেটি। রাগ করে বসে থাকার সময়ে হঠাৎই হাজির হয় চার্লি। মানে চার্লি চ্যাপলিন। ছেলেটিকে নিয়ে শহরে ঘুরতে থাকে চার্লি, পথশিশুদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খায়। ছেলেটিকে অবশ্য কিছুই খেতে রাজি করানো যায় না, দামী আইসক্রিমের জন্য বায়না ধরে সে। কম দামের আইসক্রিমের দিকে ফিরেও তাকায় না। আর তখনই এক পথশিশু এসে আইসক্রিমটি নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেতে শুরু করে। কিছু ক্ষণ পরে হাসি ফোটে ছেলেটির মুখেও। একই আইসক্রিম খেতে শুরু করে সে-ও। বাড়িতে খাওয়া নিয়ে তার আপত্তি তখন উধাও।
ক্লাসরুমের পর্দায় চার্লির চেনা ভঙ্গি দেখে অষ্টম ও নবম শ্রেণির যে পড়ুয়ারা মাঝেমধ্যেই হেসে গড়িয়ে পড়ছিল, তারা তখন চুপ। পরক্ষণেই নিস্তব্ধতা ঝেড়ে ফেলে ঘর ফেটে পড়ল স্বঃতস্ফূর্ত হাততালিতে। যোগ দিলেন উপস্থিত শিক্ষিকারাও।
বৃহস্পতিবার এমনই ছবি দেখা গেল যোধপুর পার্কের এ কে ঘোষ মেমোরিয়াল হাইস্কুলে। খাবার নষ্ট না করা নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এ দিন সেখানে দেখানো হল ‘হাফ অ্যান আওয়ার উইথ চার্লি’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। এই বিষয় নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় ছবিটি পরিচালনা করেছেন চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে বাস্তবের সঙ্গে পরিচয় করালে পড়ুয়াদের মধ্যে খাবার নষ্ট না করার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে বলে আশা করছি।’’ আগে পরিকল্পনা না থাকলেও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়াদেরও ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় এ দিন।
ছবি দেখার পরে নবম শ্রেণির আয়ুস্মিতা ধর ও অষ্টম শ্রেণির বিস্মায়ন রায় জানায়, আগে পথশিশুদের খাবারের খোঁজ করতে দেখলেও বিষয়টি সে ভাবে মনে দাগ কাটেনি তাদের। তবে ছবিটি দেখে তারা খাবার নষ্ট না করার গুরুত্ব বুঝতে পারছে। দশম শ্রেণির শ্রীবন নায়েকের আবার প্রশ্ন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েক জন পথশিশুর খাবারের ব্যবস্থা করা গেলেও সে ভাবে কি অনাহারের সমস্যার সমাধান করা যাবে?
ওই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা চন্দ্রিমা সেন বলেন, ‘‘এখন বাচ্চারা সারাক্ষণ নানা রকম নির্দেশ শুনতে থাকে। কিন্তু এই ছবিটির মাধ্যমে ওদের তেমন কিছু বলা হয়নি, শুধু চারপাশের ছবিটা তুলে ধরা হয়েছে। এতে পড়ুয়ারা নিজেরাই বিষয়টি উপলব্ধি করে ভাবার সুযোগ পাবে।’’
এর আগে ছবিটি দেখানো হয়েছে যোধপুর পার্ক গার্লস হাইস্কুল এবং আসানসোলের একটি স্কুলে। কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতার আরও দু’টি স্কুলে ছবিটি দেখানোর কথা। যোধপুর পার্ক গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মাধবী নন্দী বিশ্বাস জানান, ছবিটি দেখার পরে তাঁদের ছাত্রীরা উৎসাহিত হয়ে একটি ‘ফুড ব্যাঙ্ক’ গড়তে চেয়েছে স্কুলে। ইচ্ছুক ছাত্রীরা বাড়ি থেকে আনা খাদ্যশস্য তুলে দেবে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। এ নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক হবে অভিভাবকদের সঙ্গে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে চন্দ্রশেখর কুন্ডু বলেন, ‘‘এ দেশে বহু শিশু অপুষ্টিতে মারা যায়। অথচ খাবার নষ্ট করা ঠেকাতে সরকারি তরফে সংগঠিত উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন স্কুলে এই ছবিটি দেখানো হলে সচেতনতা বাড়বে বলেই আমাদের আশা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy