অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
জনবহুল রাস্তা। জ্যাম কাটিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে একটি বিদেশি ব্র্যান্ডের এসইউভি। গাড়িতে চালক ছাড়া যাত্রী মাত্র একজন।
গাড়িটা যখন ঠিক বেকবাগান রো এবং কড়েয়া রোডের সংযোগস্থলে— তখনই দেখা যায় গাড়িটার পেছনে আসছে দু’-তিনটি বাইক।
বাইকের আরোহী বা চালক কারও মুখই দেখা যাচ্ছে না। কারণ,এক জন বাদে সবার মুখই ঢাকা কালো হেলমেটে। একজনের শুধু মুখ দেখা যাচ্ছে। তিনি কোনও যুবক নন, বরং, কালো টাইট টি-শার্ট এবং জিন্স পরা এক সুন্দরী তরুণী!
বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ কেউ কিছু বোঝার আগেই পুরো হলিউডি কায়দায় বাইকগুলো ওই বিলিতি এসইউভি-কে টপকে রাস্তা আটকে দাঁড়ায়। তারপর কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বাইকে বসা ওই যুবতীর নির্দেশে অন্য একজন বাইকে বসেই লোহার রড দিয়ে আঘাত করে এসইউভি-র উইন্ড স্ক্রিনে। চুরচুর হয়ে কাচ ভেঙে পড়তেই নিমেষে গতি বাড়িয়ে কার্যত ভ্যানিশ হয়ে যায় বাইকগুলো।তাৎক্ষণিক হতচকিত অবস্থা কাটিয়ে এসইউভি-টি ফের এগোতে থাকে।
পার্ক সার্কাস বাজারের পিছন দিয়ে ঘুরে এসে যখন এসইউভিটি ফের কড়েয়া রোডের মুখে, তখন আবারওতার গতি আটকে দাঁড়িয়ে পড়েন সেই মহিলা। এবার তার সঙ্গী বাইক আরোহীদের একজন রাস্তায় নেমে হাতের রডের ঘায়ে চুরমার করে দিয়েছে গাড়ির পেছনের কাচ। আর একজন তখন সামনের দরজা খুলে ঘুষি চালায় চালকের মুখ লক্ষ্য করে। এসইউভি-র আরোহীর মাথা লক্ষ্য করে অন্য একজনের হাতে ধরা একটি পিস্তল। আর পাশে দাঁড়িয়ে সেই যুবতী তর্জনীউঁচিয়ে উত্তেজিত স্বরে কিছু বলছেন এসইউভি-র মধ্য পঞ্চাশের আরোহীকে!
কাছেই ছিলেন এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। চোখের সামনে এমনটা হতে দেখে তিনি ছুটে এসে ওই তরুণীকে আটকাতে যান। কিন্তু, সেটা করতেই মুখে মোক্ষম ঘুষি খেতে হয় সুমিত চট্টোপাধ্যায় নামে ওই পুলিশকর্মীকে। মহিলার মারমুখী মেজাজ দেখে তারপর আর এগোনোর সাহস পাননি কেউ।
আরও পড়ুন- তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস হাত মেলালেও চাই ২৫ আসন, দলকে বার্তা দিলীপের
আরও পড়ুন- হিন্দুত্ববাদীদের উত্থানে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র খোয়াচ্ছে ভারত: রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসের
এলাকার মানুষ চেনেন গাড়ির আরোহীকে। কলকাতা শহরের বেশ নামী এক জন রিয়েলএস্টেট ব্যাবসায়ী। নাম আনোয়ার আজিম। কড়েয়া এলাকারই লোয়ার রেঞ্জে বাড়ি। তপসিয়াতে বেশ বড় অফিস। দক্ষিণ শহরতলিতে বেশ কয়েকটি বড় আবাসন তৈরি করেছেন ওই প্রোমোটার। ওই এলাকার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের এক মন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবেও পরিচিতি আছে আনোয়ারের।
কারও কিছু করার আগেই ‘প্রাণ হাতে নিয়ে’ কড়েয়া থানার দিকে ছুটতে দেখা যায় ওই ব্যবসায়ীকে। পিছনে বাইকে ধাওয়া করেছেন ওই তরুণী। কড়েয়া থানার কর্মীরাও দেখেন, ওই ব্যবসায়ী ‘পড়িমড়ি’ করে থানার সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন। বাইক থেকে নেমে তত ক্ষণেওই তরুণীপিছন থেকে তাঁকে এলোপাথাড়ি মারছে। সঙ্গে বাছাই করা গালি।আনোয়ারকে কোনও মতে উদ্ধার করেন থানার পুলিশ কর্মীরা।
ঘটনার তদন্তে নেমে প্রতক্ষ্যদর্শী, অভিযোগকারী আনোয়ার আজিম, অভিযুক্ত ওই তরুণী এবং নিগৃহীত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী সুমিত চট্টোপাধ্যায়ের বয়ান শুনেছে কড়েয়া থানা। তা থেকেই পুলিশ উপরের ঘটনাক্রম জানতে পেরেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগে আনোয়ার জানিয়েছেন, ওই তরুণীর নাম ফারহা হায়াত খান। বছর চব্বিশের ওই তরুণীকে ২০১১ সালে নিজের কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসাবে নিয়োগ করেন তিনি। শুক্রবার আনোয়ার বলেন,“সেই সময়ে ফারহার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। পরে ওর চাপে আমি রেজিস্ট্রি করে বিয়েও করি।” তবে ওই প্রোমোটারের দাবি, বিয়ের পর চারটি ফ্ল্যাট এবং একটি গাড়ি ওই ফারহাকে দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ,“পরে জানতে পারি, মেয়েটির একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আছে। তা নিয়ে আমাদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। আমি বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করি। আর সেই কারণেই আমার উপর এত রাগ।”
কড়েয়া থানার এক মহিলা আধিকারিক বলেন, “আমরা তিন-চারজন মিলেও ওই মেয়েকে রুখতে হিমশিম খেয়েছি।” থানার পুলিশকর্মীরা প্রথমে ফারহাকে আটক করেন। পরে পুলিশ এবং ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ফারহাকে। তিনি যদিও পুলিশকে বলেছেন, ‘‘আনোয়ার গোটাটাই মিথ্যে বলছেন। আমাকে প্রতারণা করেছেন আনোয়ার। এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছেন।’’
কে ঠিক বলছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে সিনেমার কায়দায়, সুন্দরী তরুণীর ওই রুদ্রমূর্তির সামনে এলাকার দাপুটে প্রোমোটারের এ রকম হাল দেখে মজা পেয়েছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy