Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আয়তনে, বৈচিত্রে বাড়ছে ধর্মতলায় ট্রামের জাদুঘর

আয়তনে, বৈচিত্র্যে বাড়বে ‘স্মরণিকা’। বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে জানালেন কলকাতা ট্রাম-কর্তৃপক্ষ (সিটিসি)। এ শহরের ছোট জাদুঘরগুলির অধিকাংশই যেখানে দর্শকের অভাবে ধুঁকছে, সেখানে ট্রামের একমাত্র সংগ্রহশালা ‘স্মরণিকা’-য় গড়ে দৈনিক ৭৫ জন আসছেন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৫:৫৫
Share: Save:

আয়তনে, বৈচিত্র্যে বাড়বে ‘স্মরণিকা’। বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে জানালেন কলকাতা ট্রাম-কর্তৃপক্ষ (সিটিসি)। এ শহরের ছোট জাদুঘরগুলির অধিকাংশই যেখানে দর্শকের অভাবে ধুঁকছে, সেখানে ট্রামের একমাত্র সংগ্রহশালা ‘স্মরণিকা’-য় গড়ে দৈনিক ৭৫ জন আসছেন। এই মন্তব্য করে সিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শান্ডিল্য বললেন, ‘‘এটাই আমাদের ‘স্মরণিকা’-কে আরও বিস্তৃত করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’’

১৮৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় ট্রাম চালু হয়। কেবল তখনকার নাগরিক জীবনে নয়, শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ছিল এই ট্রাম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম রাখা বা না রাখা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, এর স্মৃতিমেদুরতাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।

এই নস্ট্যালজিক অ্যাপিলটাকেই তুরূপের তাস করেছে সিটিসি। পরিত্যক্ত একটি পুরনো ট্রামকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ধর্মতলায়, সিটিসি-র ডিপোয়। গত বছর দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন চালু হয় ‘স্মরণিকা’ নামে এই ছোট্ট সংগ্রহশালা। পুরনো সময়ের একটা অংশকে ধরে রাখার চেষ্টা হয়েছে তাতে। প্রবেশমূল্য ৫ টাকা। দেখার সময়: মার্চ থেকে অক্টোবর দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা, শীতকালে এক ঘণ্টা কম, বন্ধ সন্ধ্যা ৭টায়। বৃহস্পতিবার বন্ধ।

কী কী আছে ‘স্মরণিকা’য়? স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্ষিতিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘‘ঘোড়ায় টানা ট্রামে কিছু আরাম ছিল, তাহা গ্রীষ্মকালের প্রভাতে হাইকোর্ট হইতে পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে যাইবার গাড়িতে। গাড়িগুলির চারদিক খোলা ছিল...।’’ ‘কলের ট্রাম’ আর ইলেকট্রিক ট্রামেও চড়েছিলেন তিনি। এই তিন অভিজ্ঞতার কথা সবিস্তার ধরা আছে ‘কলিকাতার চলাফেরা— সেকালে আর একালে’ শিরোনামে। আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাস, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের স্মৃতিচারণ।

প্রাচীন ঘোড়ায় টানা ট্রাম, স্টিম লোকোমোটিভ ট্রাম, ওয়াটারিং ট্রাম, ‘ফ্ল্যাট ওয়াগন ট্রামকার’ থেকে সর্বাধুনিক এসি ট্রাম, নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোয় রাখা ১৯৩১ সালে তৈরি #৫৬৭ নম্বর সেই বিশেষ ট্রামের মডেল আগ্রহীরা দেখতে পাবেন স্মরণিকায়। প্রায় ৮২ বছর আগের এই ট্রামটিই ২০১৩-তে ব্যবহৃত হয়েছিল ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’-তে।

কন্ট্রোলার টপ কভার, পয়েন্ট বার, কয়েন এক্সচেঞ্জার— নানা সময়ে ব্যবহৃত ট্রামের যন্ত্রাংশ ছাড়াও আগ্রহীরা ‘স্মরণিকা’য় দেখতে পাবেন ট্রামের পুরনো মাসিক ও দৈনিক টিকিট, ট্রামকর্মীদের উর্দি-ট্রেনিং ব্যাজ-টুপি-বোতাম, ট্রেজারিতে রাখা প্রাচীন মুদ্রা প্রভৃতি। ধর্মতলায় ‘স্মরণিকা’ ঘুরতে আসা দর্শকেরা চা ও কফি পানের সুযোগ পাবেন যথাক্রমে ৫ ও ১০ টাকায়। সঙ্গে মুদ্রিত মূল্যে মোড়কবন্দি কিছু খাবারও। খোলা রাস্তায় নয়, ‘স্মরণিকা’-র সঙ্গে একটি কামরায় এই রেস্তোরাঁ।

নতুন ভাবনা কী রকম? সিটিসি-র এমডি বলেন, ‘‘পরিত্যক্ত আর একটি ট্রাম ওই চত্বরে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। আমাদের সংগ্রহে ট্রামের নানা রকম বেশ কিছু ছবি আছে। সিনেমাতেও বার বার দেখা গিয়েছে ট্রামের দৃশ্য। পরিকল্পিত ভাবে এ সবও দর্শকদের কাছে পেশ করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE