Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধার ‘ঝাঁপ’ গঙ্গায়, বাঁচালেন ফুল বিক্রেতা

রিন্টু দেখেন যে বৃদ্ধাকে তিনি স্নানের ঘাটের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন সেই বৃদ্ধাই গঙ্গার জলে ডুবে যাচ্ছেন। জলে ভেসে রয়েছে বৃদ্ধার মাথার চুল।

রিন্টু গিরি। নিজস্ব চিত্র

রিন্টু গিরি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

চার বছর আগে একমাত্র ছেলে গঙ্গাঁয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল। সেই মানসিক ধাক্কা তাঁর এখনও কাটেনি। ইতিমধ্যেই শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। তাই সংসারের মায়া কাটাতে ছেলের মতো গঙ্গাতেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন গিরিশ পার্কের বাসিন্দা বৃদ্ধা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এক ফুলবিক্রেতা যুবকের তৎপরতা প্রাণ বাঁচাল বৃদ্ধার।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ন’টা নাগাদ উত্তর বন্দর থানা এলাকার মল্লিকঘাটের ঘটনা। ৬৫ বছরের বৃদ্ধা স্নান করবেন বলে ঘাটের রাস্তা জানতে চান স্থানীয় ফুলবিক্রেতা রিন্টু গিরির কাছে। প্রাথমিক ভাবে কোনও সন্দেহ না করেই রিন্টু বৃদ্ধাকে মল্লিকঘাটের স্নানের জায়গা
দেখিয়ে দেন।

কিন্তু এর খানিক পরে রিন্টু নিজে গঙ্গার ঘাটে হাত-মুখ ধুতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন। রিন্টু দেখেন যে বৃদ্ধাকে তিনি স্নানের ঘাটের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন সেই বৃদ্ধাই গঙ্গার জলে ডুবে যাচ্ছেন। জলে ভেসে রয়েছে বৃদ্ধার মাথার চুল। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় রিন্টুর। প্রমাদ গোনেন ফুল বিক্রেতা। বৃদ্ধাকে না বাঁচাতে পারলে অনুশোচনার সীমা থাকবে না রিন্টু বুঝতে পারেন। কারণ বৃদ্ধাকে ঘাটের রাস্তা তিনিই তো চিনিয়েছিলেন। কালবিলম্ব না করে গঙ্গাঁয় ঝাঁপান রিন্টুও। চুলের মুঠি ধরে বৃদ্ধাকে ঘাটের কাছে টেনে ফেরত নিয়ে আসেন।

শুক্রবার উত্তর বন্দর থানার পুলিশও রিন্টুর মানবিক এবং সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেছে। বৃদ্ধাকে বাঁচিয়েই রিন্টু নিজের মোবাইল ফোন থেকে উত্তর বন্দর থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, উদ্ধারের পরে বৃদ্ধার থেকেই ফোন নম্বর চেয়ে গিরিশ পার্কে তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মেয়ের কাছেই থাকেন বৃদ্ধা। আগে তিনি শ্রীরামপুরে থাকতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে মেয়ের কাছেই থাকেন। ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে পুলিশের মনে হয়েছে মানসিক অবসাদ থেকেই বৃদ্ধা আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বৃদ্ধার মনে হচ্ছিল তিনি মেয়ে-জামাইয়ের পরিবারে ‘বোঝা’ হয়ে উঠেছেন।

পুলিশ জানায়, ক্যানসার আক্রান্ত হলেও বৃদ্ধা চলাফেরা করেন। মন্দিরে যাবেন বলে বৃহস্পতিবার তিনি মেয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তারপরেই তিনি পায়ে হেঁটে পৌঁছে যান মল্লিকঘাটে। রাতে মেয়ে-জামাই বৃদ্ধাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান বলেই জানায় পুলিশ।

ফুল বিক্রেতা রিন্টুর কথায়,‘‘বৃদ্ধা একটাই কথা বলছিলেন। বাড়িতে অশান্তি। আমি মরে যাব।’’

তবে কি মেয়ে-জামাইয়ের পরিবারে অশান্তিতে রয়েছেন তিনি? পুলিশ অবশ্য তেমন কোনও অভিযোগ বৃদ্ধার থেকে পায়নি বলেই জানিয়েছে।

মেদিনীপুরের বাসিন্দা রিন্টু আট বছর আগে মল্লিকঘাটে এসে ফুলের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর কথায়,‘‘এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হব ভাবতে পারিনি। আমিই বৃদ্ধাকে গঙ্গার ঘাট চিনিয়ে দিলাম। তারপরে হাত-মুখ ধুতে গিয়ে দেখি সেই বৃদ্ধা ডুবে যাচ্ছেন। বৃদ্ধাকে বাঁচাতে না পারলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। তাই কিছু না ভেবেই গঙ্গায় ঝাঁপ দিই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE