Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বাড়িতে মজুত ধূপকাঠির বাক্সে আগুন, আতঙ্ক

সুগন্ধ যে আসলে আতঙ্কের বার্তা বয়ে আনছে, বোঝা যায়নি প্রথমে। না হলে শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় ম ম করা গন্ধে কসবার প্রান্তিকপল্লির বাসিন্দাদের অনেকেরই মন ভরে গিয়েছিল। গৃহবধূ সুমিতা দাসের মনে হয়েছিল, পুজো আসতে তো আরও সপ্তাহ দুয়েক দেরি, তা হলে এখনই এই পুজো পুজো গন্ধ কেন?

চলছে আগুন নেভানোর কাজ। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

চলছে আগুন নেভানোর কাজ। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৯
Share: Save:

সুগন্ধ যে আসলে আতঙ্কের বার্তা বয়ে আনছে, বোঝা যায়নি প্রথমে।

না হলে শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় ম ম করা গন্ধে কসবার প্রান্তিকপল্লির বাসিন্দাদের অনেকেরই মন ভরে গিয়েছিল। গৃহবধূ সুমিতা দাসের মনে হয়েছিল, পুজো আসতে তো আরও সপ্তাহ দুয়েক দেরি, তা হলে এখনই এই পুজো পুজো গন্ধ কেন? ব্যাপারটা যে আসলে অন্য কিছু, তা বোঝা গেল আশপাশের চিৎকারে। ততক্ষণে প্রতিবেশীদের অনেকেই চেঁচাচ্ছেন ‘আগুন আগুন’ বলে। সুমিতাদেবীর দু’টি বাড়ি পরেই একটি বাড়ির দোতলা থেকে তখন গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

ওই বাড়ির দোতলায় অবশ্য তখন কেউ ছিলেন না। পরিবারের অধিকাংশ পুরুষ বেরিয়ে গিয়েছেন কাজে। এক বৃদ্ধা, মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি ও এক তরুণী ছিলেন একতলায়। পড়শিরা তড়িঘড়ি তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে আনেন। তার পর জল ছিটিয়ে নিজেদের সাধ্য মতো আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন নেভেনি।

আসলে ১৭৫/১ প্রান্তিক পল্লির ওই বাড়ি ধূপ ব্যবসায়ীদের। দোতলায় মজুত ছিল কয়েকশো ধূপের প্যাকেট। পুজোর মুখে সরবরাহের জন্য রাখা ছিল সেগুলি। সঙ্গে ছিল বাড়ির নতুন সজ্জার জন্য রাখা প্লাইউডও। ওই সব দাহ্য বস্তুতেই ধরে গিয়েছিল আগুন। তাই যেমন সুগন্ধ ছড়িয়েছিল গোটা পাড়াময়, তেমনি একই কারণে জ্বলছিলও দ্রুত। তার উপরে সরু ওই রাস্তায় বাড়িগুলিও পাশাপাশি। এক সময়ে বাসিন্দারা ভেবেছিলেন আশপাশের বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়বে আগুন। আতঙ্ক ছড়ায় তাতেই।

এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের চারটি ইঞ্জিন। কিন্তু রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ি প্রায় দেড়শো মিটার দূরে রেখে দমকলকর্মীরা জলের পাইপ টেনে এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। মই দিয়ে দোতলার কার্নিশে উঠে জানালার গ্রিল খুলে হোস পাইপ দিয়ে জল দিতে থাকেন। ঘণ্টা দেড়েক পরে দমকলের গাড়ির জল ফুরিয়ে গেলে স্থানীয় একটি ট্যাঙ্ক থেকে পাইপের মাধ্যমে জল টেনে এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান দমকল কর্মীরা। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বাড়িটি ধূপ ব্যবসায়ী দুই ভাই অজয়কুমার সাউ ও কালীচরণ সাউয়ের। এ দিন তাঁরা ও তাঁদের ছেলেরা কাজ বেরিয়ে গিয়েছিলেন। দমকলের অনুমান, দোতলার একটি ঘরে রাখা প্লাইউডে প্রথমে ক‌োনও ভাবে আগুন লাগে, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে ধূপকাঠির বাক্সগুলিতে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের তাপে বেঁকে গিয়েছে বাড়ির দোতলার জানালার গ্রিল। তাপে ভেঙে পড়েছে সানশেডও। বা়ড়ির একতলায় অবশ্য কোনও ক্ষতি হয়নি। আগুন যাতে না ছড়ায় তাই ধূপের প্যাকেটগুলি বাইরে বার করেআনেন দমকলকর্মীরা।

অজয়বাবুর ছেলে সুধীরকুমার সাউয়ের কথায়, ‘‘আমাদের ভবানীপুরের দোকানে কিছু ধূপকাঠির প্যাকেট পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। আগুন লাগার খবর শুনে ফিরে এসে দেখি সব শেষ।’’

কিন্তু এ ভাবে কি বাড়িতে দাহ্য পদার্থ মজুত করা যায়? পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ধূপ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্যবসার লাইসেন্স-সহ প্রয়োজনীয় কাগজ চাওয়া হয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Fire panic Incense box
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE