Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

ডাঁই হওয়া গাড়িতে বাড়ছে মশা

অতীনবাবু জানান, গত ৫ বছর ধরে থানার সামনে রাখা ছোট-বড় গাড়ি সরানোর আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কোনও সাড়া নেই।

আঁতুড়: জমে আছে অসংখ্য বাজেয়াপ্ত মোটরবাইক। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাতেই জমছে মশার লার্ভা। বেলেঘাটা থানার সামনে, রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

আঁতুড়: জমে আছে অসংখ্য বাজেয়াপ্ত মোটরবাইক। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাতেই জমছে মশার লার্ভা। বেলেঘাটা থানার সামনে, রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৮
Share: Save:

শুধু বিক্রমের গাড়িই নয়, কলকাতা শহরের অধিকাংশ থানার সামনে রাখা বাজেয়াপ্ত গাড়ি মশার আতুঁড়ঘর হয়ে উঠেছে। এমনই তথ্য খোদ কলকাতা পুরসভার। আর সে সব গাড়ি সরিয়ে ফেলার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনও ফল হয়নি— বলছেন পুরকর্তারা। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ সরাসরি ওই প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘মশাবাহিত রোগ নিবারণে পুরসভার দায় আছে ঠিকই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে জল জমানোর দায়ও পুরসভাকে নিতে হবে। নিজের ঘরে, অফিসে, কারখানায় বা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থানে ক্রমাগত জল জমতে দেব আর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া হলেই পুরসভার ঘাড়ে বদনাম চাপাব— এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’

অতীনবাবু জানান, গত ৫ বছর ধরে থানার সামনে রাখা ছোট-বড় গাড়ি সরানোর আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কোনও সাড়া নেই। পুলিশের কাছে কি জানতে চেয়েছিলেন? মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘তাঁরা একটাই উত্তর দেন, বাজেয়াপ্ত গাড়ি রাখার জায়গা নেই। আইনগত সমস্যাও রয়েছে। তাই হুট করে সরিয়ে দেওয়া যায় না।’’ কালীঘাট থানার সামনে বিক্রমের গাড়ির সঙ্গেই আছে ম্যাটাডর, মিনিবাসও। হাজি মহসীন খান রোড যেন পুরনো-ভাঙাচোরা গাড়ির গ্যারাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একই অবস্থা গড়িয়াহাট, লেক থানাতেও। উত্তর কলকাতার মানিকতলা, উল্টোডাঙা, নারকেলডাঙা— সর্বত্র এক চিত্র। আর বেলেঘাটা থানার সামনের রাস্তা অর্ধেকটা আটকে আছে বাজেয়াপ্ত করা বাইক আর গাড়ির ভিড়ে। ক্রমশই তা বাড়ছে। বৃষ্টি হলেই জল জমছে ভাঙা চাকায়, বনেটে এবং গাড়ির ছাদে। তা থেকেই জন্ম নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ মশার লার্ভা। পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘টায়ার-টিউবে জমে থাকা জল মশার বংশবৃদ্ধির প্রকৃষ্ট জায়গা। সেই হিসেবে কলকাতার যে সব থানার সামনে বাজেয়াপ্ত গাড়ির ভিড়, সেখানে মশার চাষ বেড়েই চলেছে।’’

তা হলে উপায়?

পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায় চিন্তিত তাঁর ওয়ার্ড এলাকায় থাকা কালীঘাট থানার বাজেয়াপ্ত গাড়ি নিয়ে। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ)-এর সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। মালাদেবী বলেন, ‘‘ডিসি-কে বলেছি, পুলিশ পরিবারের সদস্যরাও মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খুবই সমস্যার বিষয়।’’ যত শীঘ্র সম্ভব গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মালাদেবী আরও জানান, তিনি জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ থাকাকালীন পুলিশের বাজেয়াপ্ত গাড়ি রাখার জন্য ধাপার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে একটি জায়গা ছিল। অনেক গাড়ি সেখানে পাঠানো হতো।

পুলিশ কি এই সব গাড়ি সরাতে পারে না? পেশায় আইনজীবী তথা ৮ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ কোনও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করলে সেটি আইনের আওতায় চলে আসে। তাতে বলা আছে, গাড়ির চরিত্র বদলানো যাবে না। গাড়িচালককে যেমন জামিন নিতে হয়, গাড়িরও জামিন দরকার হয়। মেকানিক্যাল টেস্ট করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অযথা সময় ব্যয় হয়। তাই গাড়ি বসেই থাকে।’’

কী বলছেন পুলিশ কর্তারা? অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘বেশ কিছু থানার সামনে থেকে ডাঁই হওয়া গাড়ি সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাকি থানা থেকেও সেগুলি ধাপে ধাপে সরানো হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Police Station Mosquitoes Motor Bikes Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE