Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
Black Glasses of Vehicles

ধর্ষণ থেকে পাচার! কালো কাচের আড়ালের অপরাধ বন্ধ কবে

এই মুহূর্তে শহরে এমন কোনও উপ-নগরপালের অফিস নেই, যার সামনে গেলে এমন কালো কাচে ঢাকা গাড়ি চোখে পড়ে না। একই ছবি রাজভবন, বিধানসভা চত্বরের বহু গাড়ির ক্ষেত্রেও।

কালো কাঁচে ঢাকা গাড়ি।

কালো কাঁচে ঢাকা গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৯
Share: Save:

কখনও শীতের রাতে হোম থেকে বেরিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে। তদন্তে নেমে লালবাজার দেখছে, গাড়ির কাচ কালো থাকায় মোড়ে মোড়ে পথ নিরাপত্তায় থাকা ট্র্যাফিক পুলিশ কিছুই বুঝতে পারেনি। কখনও এমন কালো কাচের গাড়িই ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ সামগ্রী পাচারে। আবার কখনও এই কালো কাচের সুযোগ নিয়েই অপরাধ ঘটিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে দুষ্কৃতীরা। বছরের পর বছর গাড়িতে এমন কালো কাচ ব্যবহার না করা নিয়ে আলোচনা চলেছে। এ নিয়ে কড়া নির্দেশও দিচ্ছে দেশের শীর্ষ আদালত। তবু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শুধু সাধারণ মানুষই নন, মোটা কালো ফিল্মে ঢাকা কাচের গাড়ি পুলিশ থেকে আমলা, নেতা থেকে অভিনেতা সকলেই যথেচ্ছ ব্যবহার করে চলেছেন।

বছরের এই সময়ে রাতের দিকে অনুষ্ঠান বেশি হয়। পাব, পানশালা থেকে রাত করে বাড়ি ফেরেন অনেকে। সেই সময়ে এমন কালো কাচের বিপদ নতুন করে ভাবাচ্ছে পুলিশকে। কলকাতা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, দিন কয়েক আগে এমনই একটি কালো কাচে ঢাকা গাড়িতে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয় ময়দান এলাকা থেকে। কোনও মতে সেটি রোখে পুলিশ। মাদক পাচারের ক্ষেত্রেও এই ধরনের গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ আলাদা করে পেয়েছে পুলিশ। ফলে এমন গাড়ি দেখলেই পদক্ষেপ করার নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে সমস্ত ট্র্যাফিক গার্ড এবং থানায়। কিন্তু যে নির্দেশ পুলিশ দিচ্ছে, সেই নির্দেশ তারা নিজেরাই মানছে তো?

অভিযোগ, এই মুহূর্তে শহরে এমন কোনও উপ-নগরপালের অফিস নেই, যার সামনে গেলে এমন কালো কাচে ঢাকা গাড়ি চোখে পড়ে না। একই ছবি রাজভবন, বিধানসভা চত্বরের বহু গাড়ির ক্ষেত্রেও। ফলে প্রশ্ন উঠছে, যে জিনিস সমাজের প্রভাবশালীরা নির্দ্বিধায় ব্যবহার করে চলেছেন, তা করতে সাধারণ মানুষকে আটকানো যাবে কী করে? এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (ট্র্যাফিক) তথা বর্তমানে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রূপেশ কুমার বললেন, ‘‘নিয়ম সকলের জন্য একই। কে কী করছে, দেখা হবে।’’

কিন্তু এর ফাঁক গলেই শহর জুড়ে গাড়ি সাজানোর ব্যবসার নামে দেদার এমন কালো কাচ করানো চলছে বলে অভিযোগ। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড ধরে বাইপাসের দিকে যাওয়ার পথেই চোখে পড়ে এমন নানা ‘কার পার্লার’। যেখানে নানা মানের ফিল্ম রাখা হয়েছে। গাড়ির কাচে এই কালো ফিল্ম লাগিয়েই তা কালো করানো হয়। এমনই একটি গাড়ি সাজানোর দোকানের মালিক রমেন ঘোষ বললেন, ‘‘দেড় হাজার থেকে দশ হাজার টাকা দাম পর্যন্ত ফিল্ম রয়েছে। এগুলো লাগালে গাড়িতে রোদ একটু কম ঢোকে, গাড়ি ঠান্ডা থাকে।’’ আর এক দোকানের মালিক সাহিল হোসেনের দাবি, ‘‘কাচ কালো করানোর বড় কারণ, গাড়ি দেখতে ভাল লাগে। অনেকে শুধু সেই কারণেই চার দিক এমন কালো করিয়ে ফেলেন যে, বাইরে থেকে গাড়ির ভিতরের কিছুই দেখা যায় না।’’

কিন্তু মোটর যান নিয়ম অনুযায়ী, গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন এবং পিছনের কাচ দিয়ে অন্তত ৭০ শতাংশ আলো চলাচলের ব্যবস্থা রাখতেই হবে। চার দিকের বাকি কাচগুলির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ আলো চলাচলের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালে নির্ভয়া মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ির কাচ কালো করানোর ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু অভিযোগ, সেই নির্দেশ উড়িয়ে দেদার চলছে গাড়িতে কালো কাচের ব্যবহার। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশ এ ব্যাপারে ফের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু তার পরেও কিছুই হয়নি। এখন বর্ষশেষের উৎসবের আগে তাই নতুন করে কড়া হচ্ছে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy