আয়লার পর থেকেই সাইক্লোন ‘ফণী’ নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় থাকে কলকাতা পুর প্রশাসন। বুধবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
দেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ধেয়ে আসা সাইক্লোন ‘ফণী’র মোকাবিলায় ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসন। পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিকাশি, জল সরবরাহ, জঞ্জাল অপসারণ, আলো এবং পার্ক ও উদ্যান দফতরের কর্মীদের যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী মজুত করতে বলা হয়েছে পুরসভার সচিবের দফতরকে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার ‘ফণী’র প্রভাবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। যার গতি ক্রমে বাড়তে থাকবে। শুক্র ও শনিবার তা ৮৫ কিলোমিটার থেকে ১১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে প্রবাহিত হতে পারে। ওই দু’দিনে ৭০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’ থেকে জানানো হয়েছে।
আয়লার পর থেকেই এই ধরনের সাইক্লোন নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় থাকে কলকাতা পুর প্রশাসন। এ শহরে এমন বহু গাছ রয়েছে, সামান্য ঝড়েই যেগুলি পড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, এমন অনেক পুরনো বাড়ি রয়েছে, যেগুলি বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও তাতে বসবাস করছেন অনেকে। পুরকর্তাদের চিন্তা সে সব নিয়েই। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, ইতিমধ্যেই পুর ভবনের কন্ট্রোল রুমকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সাইক্লোনের সময়ে তিনি পুর ভবনের কন্ট্রোল রুমে হাজির থাকবেন। মেয়র জানান, শহরের প্রতিটি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন ঠিকঠাক আছে কি না, সেটাও এখনই দেখে নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন মতো পাম্পের ব্যবস্থা রাখতে। যদি ভাড়া করতে হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। কিন্তু শহরে যাতে জল না জমে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গঙ্গার ধারের লকগেটগুলিতেও নজর রাখতে বলা হয়েছে নিকাশি দফতরকে।
বুধবার মে দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকলেও পুর ভবনে একাধিক বৈঠক করেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। প্রায় সব ক’টি দফতরের ডিজি ও পদস্থ আধিকারিকেরা হাজির ছিলেন। এমনিতেই ভোটের মরসুম বলে প্রশাসনের চিন্তা রয়েছে। তার উপরে ‘ফণী’র প্রভাবে শহর বেসামাল হলে জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা পুরকর্তাদের। এ দিন পুর কমিশনার জানান, ‘ফণী’র জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে সিইএসসি-কে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ঝড়ে বাড়ি বা গাছ ভেঙে পড়লে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য তৈরি থাকবে পুরসভার বিল্ডিং দফতর ও গাছ কাটার দল। ঝড়ের দাপটে বাতিস্তম্ভ পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আলো দফতরের কর্মীরা যাতে সেখানে পৌঁছে যান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পুর কমিশনার আরও জানান, পুর ভবন এবং বরো অফিসগুলিতে খাবার, পোশাক, ত্রিপল, পানীয় জলের বোতল-সহ ত্রাণসামগ্রী মজুত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে লঙ্গরখানা খোলার ব্যবস্থাও থাকছে। ঝড়বৃষ্টিতে এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্কুল, অতিথি আবাস এবং কমিউনিটি হল প্রস্তুত রাখছে পুরসভা।
উপকূলে বায়ুসেনা ও নৌসেনাকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, জাহাজ ও বিমানে টহলদারির পাশাপাশি ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রাখছে তারা।
আজ, বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুরীর সব হোটেল খালি করতে বলেছে প্রশাসন। পুরীর একটি হোটেলের কর্মচারী প্রহ্লাদ পণ্ডা জানান, শুক্রবার থেকে সব বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
তবে শঙ্কায় ভুগতে রাজি নন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং ট্রাস্টির সদস্য রামচন্দ্র দয়িতাপতি। ‘‘পুরীতে জগন্নাথ আছেন। আমাদের বিশ্বাস, শেষ মুহূর্তে ঝড়ের মুখ ঘুরিয়ে তিনিই পুরীকে রক্ষা করবেন,’’ বলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy