দুর্ঘটনাগ্রস্ত ভাইপোকে হাসপাতাল থেকে দেখে কালীঘাটের বাড়িতে ফিরছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল রোড এবং গোখেল রোডের সংযোগস্থলে তাঁর গাড়ির সামনে চলে আসে একটি বেপরোয়া সেডান গাড়ি। চালকের তৎপরতায় কোনওক্রমে রক্ষা পান মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনার পরেই কনভয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা বিষয়টি জানান কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশকে। ওয়াকিটকিতে সেই বার্তা পেয়ে এক্সাইড মোড়ে যাত্রী ভর্তি ওই সেডানটিকে আটক করেন ট্র্যাফিকের আধিকারিকেরা। চার যাত্রী-সহ গাড়িটিকে ময়দান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, ময়দান থানার কর্মীরা ট্রাফিক পুলিশের ওই আধিকারিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি। ঘটনাটি তাঁদের এলাকার নয় বলে এড়িয়ে যেতে থাকেন। বিস্তর টালবাহানার পরে লালবাজারের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশে সেডান গাড়িটির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে ময়দান থানার পুলিশ।
ঘটনা তাদের এলাকায় নয় বলে অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দিয়েছে থানা— এমন অভিযোগ বারবারই উঠেছে কলকাতার বিভিন্ন থানার বিরুদ্ধে। শনিবার মাঝরাতের ঘটনা সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে গাড়ি বেপরোয়া হলেও যে পুলিশের একাংশ উদাসীন থাকে, তা টের পেয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। ক্ষুব্ধ পুলিশের শীর্ষকর্তারা ট্র্যাফিকের সঙ্গে থানার পুলিশকর্মীদের সমন্বয় বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন।
লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার কালীপুজো নিয়ে থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে ওই সমন্বয়ের অভাব নিয়ে সকলকেই সর্তক করেছেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, বৈঠকে রাজীব কুমার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শহরে ট্র্যাফিক পুলিশ বা থানার পুলিশ বলে পৃথক কিছু নেই। সকলেই কলকাতা পুলিশ। তাই ট্র্যাফিক গার্ড এবং থানার সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাতে এলাকায় কোন কোন ট্র্যাফিক বিভাগের কমী কোথায় ডিউটিতে রয়েছেন, তার সবিস্তার তথ্য সংশ্লিষ্ট থানাকে রাখতে বলা হয়েছে বৈঠকে। সেই সঙ্গে থানার মোবাইল ভ্যান কোন এলাকায় নজরদারি করছে, তার বিবরণও ট্র্যাফিক গার্ডের হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একাংশের মতে, এ দিনের বৈঠকে পুলিশ কমিশনার শনিবার রাতের ঘটনার কথা তোলেননি। কিন্তু প্রতিটি থানার আধিকারিকদের তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ট্র্যাফিকের ব্যাপার বলে কোনও ঘটনায় দায় এড়িয়ে যেতে পারে না থানা। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এর মাধ্যমে সিপি তাঁর অধীনস্থ কর্তাদের পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন।’’
পুলিশের একাংশের দাবি, এ দিন বৈঠকে কমিশনার জানিয়েছেন— রাতের শহরে যা ঘটবে, তা দুই বিভাগই দেখবে। থানা ট্র্যাফিক আইনের বিষয়ে ততটা সড়গড় না হওয়ায় ট্র্যাফিকের কর্মীরা তাঁদের মামলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন। আবার কোনও ঘাতক গাড়ি বা অভিযুক্ত পালিয়ে যাওয়ার সময়ে ট্র্যাফিকের কর্তাদের থানাকে পাশে প্রয়োজন। তাই দু’পক্ষই যাতে পরস্পরকে সহযোগিতা করে চলে, তা দেখতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন কমিশনার।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে রাত-পথে থাকেন ট্র্যাফিক পুলিশের এক অফিসার-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। মূলত এলাকায় টহল দেওয়াই তাঁর কাজ। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক ভাবে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশেই ট্র্যাফিকের এক অফিসারকে পথে রাখার সিদ্ধান্ত লালবাজারের। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির সামনে বেপরোয়া গাড়ি চলে আসার ঘটনাতেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেডান গাড়িটিকে আটক করেন ট্র্যাফিক অফিসারেরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy