Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

জল বিক্রির টাকা ঢুকছে না কোষাগারে, সরব মেয়র

কলকাতা পুরসভার জল নিয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরে বিক্রি করা হচ্ছে, অথচ পুরসভার রাজকোষে ঢুকছে না এক টাকাও। এমনই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারির সুরে বুধবার তিনি ওই জল সরবরাহ বন্ধ করার কথাও বলেছেন। তবে সেখানে জল বন্ধের ব্যাপারে তত কঠোর নন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার আর্জি মতো তিনি বিষয়টির দ্রুত মীমাংসা করতে নির্দেশ দিয়েছেন পাঁচ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নবদিগন্তের প্রশাসনকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

কলকাতা পুরসভার জল নিয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরে বিক্রি করা হচ্ছে, অথচ পুরসভার রাজকোষে ঢুকছে না এক টাকাও। এমনই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারির সুরে বুধবার তিনি ওই জল সরবরাহ বন্ধ করার কথাও বলেছেন। তবে সেখানে জল বন্ধের ব্যাপারে তত কঠোর নন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার আর্জি মতো তিনি বিষয়টির দ্রুত মীমাংসা করতে নির্দেশ দিয়েছেন পাঁচ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নবদিগন্তের প্রশাসনকে।

কেন ক্ষুব্ধ কলকাতা পুর প্রশাসন? মেয়র জানান, কলকাতা পুরসভা পলতা থেকে দৈনিক ২ কোটি গ্যালন জল দেয় সল্টলেক, দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে। অথচ সেই বাবদ কোনও টাকা তারা পায় না। ওই জলের মধ্যে ২৫ লক্ষ গ্যালন জল আবার পাঁচ নম্বর সেক্টরে বাণিজ্যিক দরে বিক্রি করে মুনাফা করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। এর জন্যও পুরসভা কোনও পয়সা পায় না। মেয়রের কথায়, ‘‘কয়েক কোটি টাকা পাওনা। কলকাতা পুরসভার জল বিক্রির টাকা আমাদের দিতে হবে।’’ তা না হলে আর জল দেওয়া হবে না বলে বুধবার নবদিগন্ত এবং ওই বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

নবদিগন্ত ও কেএমডিএ সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে কেএমডিএ, নবদিগন্ত এবং ওই বেসরকারি সংস্থা জুসকোর মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে পাঁচ নম্বর সেক্টরে জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলে জুসকো। বাম আমলে পিপিপি মডেলে এই প্রকল্প তৈরি হয়। চুক্তি মোতাবেক, পাঁচ নম্বর সেক্টরে জুসকো ওভারহেড ট্যাঙ্ক, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং প্রায় ২০ কিমি পাইপলাইন থেকে শুরু করে নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করে। চুক্তিতে ছিল, ৩০ বছর পর্যন্ত এই ব্যবস্থার দেখভাল করবে জুসকো। তার পরে তাঁরা রাজ্য সরকারকে হস্তান্তর করবে। তবে চুক্তিতে কলকাতা পুরসভাকে যুক্ত করা হয়নি।

নবদিগন্ত ও জুসকো সূত্রে খবর, শুরুতে ৫ লক্ষ গ্যালন থেকে বর্তমানে ১৫ লক্ষ গ্যালন জল নবদিগন্তকে দেয় কলকাতা পুরসভা। নবদিগন্তের থেকে তা কেনে জুসকো। এর জন্য নবদিগন্ত প্রশাসন জুসকোর থেকে জলের দাম নেয় প্রতি কিলোলিটারে ৪ টাকা। জুসকো সূত্রের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই চুক্তি মেনে নবদিগন্তকে আড়াই কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু পুর-প্রশাসনের দাবি, সেই টাকা তাদের কোষাগারে ঢোকেনি।

পুরমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘৫ নম্বর সেক্টরে জল দেওয়া নিয়ে বছর তিনেক আগেই মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। কলকাতা পুরসভাকে জলের দাম মেটানোর বিষয়ে জুসকো ও কলকাতা পুরসভার মধ্যে বৈঠকের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু এত দিনেও তা হয়নি জানতাম না। মেয়রও কিছু বলেননি।’’ নবদিগন্তের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারকে সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে বলেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কত জল নেওয়া হয়েছে, কত বিক্রি হয়েছে, জল বিক্রি করে কত আয় হয়েছে, তার হিসেব কলকাতা পুরসভাকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’

তবে কলকাতা পুরসভাকে টাকা দিতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সমস্যা বাড়বে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, প্রায় ২৫০টি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠানগুলি বাদে অধিকাংশেরই ব্যয়বরাদ্দ কম। এখন তাঁদের জলের জন্য যে টাকা দিতে হয়, কলকাতা পুরসভা জলের দাম নিলে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন নবদিগন্ত ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে, শহর জুড়ে পানীয় জলের সমস্যা যখন প্রবল, তখন ফের পাম্প দিয়ে পুরসভার জলের লাইন থেকে জল টানার কারবার চলছিল বাঁশদ্রোণীর ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদার গত দু’দিনে জল চুরির জন্য ৬টি বাড়ির পাম্প খুলে নিয়েছেন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, পুলিশের কাছে ওই সব বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE