মিঠুন বাগচী।
কাজের শেষে সপ্তাহের মজুরি পাওয়ার কথা ছিল। সেই টাকা দিয়ে স্ত্রী এবং মেয়ের জন্য চাউমিন কিনে আনবেন বলে সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে ছিলেন তিরিশ বছরের যুবক। কিন্তু দুপুর হতেই বাড়িতে খবর এল, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে গিয়ে কংক্রিটের চাঙড় চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন তিনি!
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দুপুরে বরাহনগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনচন্দ্র দাস রোডে। পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম মিঠুন বাগচী। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকায় মানিক মণ্ডলের পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে তৈরির কাজ চলছিল। পাঁচ-ছ’দিন ধরে কাজ চলছিল। পুরনো বাড়ির প্রায় সবটা ভাঙা হয়ে গিয়েছিল। শুধু বাকি ছিল একটি দেওয়াল। তাতে মিটার বক্স-সহ বিদ্যুতের তার ছিল। এ দিন সেটিই ভাঙছিলেন মিঠুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই পাঁচিলের উপরেই একটি লম্বা ঢালাই ছিল। তার নীচের অংশটিই মিঠুন তখন ভাঙছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ সেটি আলগা হয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাঁর উপরে। আচমকা ভেঙে পড়ায় আর সরে যাওয়ার সময় পাননি ওই যুবক। বিকট আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয় যুবকেরা। তাঁদের সঙ্গে অন্যান্য মিস্ত্রিরা মিলে চাঙড় সরিয়ে উদ্ধার করেন মিঠুনকে। তত ক্ষণে তাঁর মাথা, মুখ থেঁতলে গিয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর অঞ্জন পাল। তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা।
তবে উপরের ঢালাই না ভেঙে মিঠুন কেন নীচের পাঁচিল ভাঙতে শুরু করলেন, বুঝতে পারছি না। ছেলেটার অসহায় পরিবারের পাশে সকলকে থাকতে হবে।’’
এ দিন দুপুরে মিঠুনের মৃত্যুর খবর পৌঁছনোর পর থেকেই থম মেরে রয়েছে বরাহনগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নিরঞ্জন সেন নগর। সাড়ে চার বছর ও দেড় বছরের দুই মেয়ে এবং স্ত্রী সরস্বতীকে নিয়েই সংসার মিঠুনের। এলাকায় পরিশ্রমী ছেলে বলেই পরিচিত। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন সরস্বতী। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা চাউমিন খাওয়ার বায়না করেছিল। সকালে কাজে যাওয়ার সময়ে বলে গেল, বিকেলে নিয়ে আসবে।’’ অন্য দিকে, বাবা চাউমিন নিয়ে আসবে ভেবে দরজায় বসে বড় মেয়ে। মাকে কাঁদতে দেখে মাঝেমধ্যেই অবাক চোখে তাকাচ্ছে কোলের মেয়েটাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy