কুণ্ডলী: সল্টলেকে বাতিস্তম্ভের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
কালবৈশাখীর ঝড়ে গত বছর লন্ডভন্ড হয়েছিল সল্টলেক। জড়ানো কেব্লের তার-সহ একের পর এক বাতিস্তম্ভ এবং গাছ উপড়ে পড়েছিল সল্টলেকের রাস্তায়। বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দীর্ঘ ক্ষণ পুরকর্মীরা রাস্তা সাফাইয়ের কাজও শুরু করতে পারেননি। তার পরেও অবশ্য কেব্ল ও ব্রডব্যান্ড সংস্থার তারের জাল পরিষ্কার হয়নি সল্টলেকের রাস্তায়। গাছ ও বাতিস্তম্ভের সঙ্গে কেব্লের তার জড়িয়ে রয়েছে আগের মতোই। এর জেরে হচ্ছে ঠেকানো যায়নি দৃশ্যদূষণও। এই সমস্যার সমাধানে বিধাননগর পুরসভা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করলেও বিষয়টি পুরসভারই দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় দৃশ্যদূষণ ঠেকাতে এক সপ্তাহের মধ্যে কেব্ল সংস্থাগুলিকে অকেজো তার চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সংযোগ নেই এমন তার বিপুল সংখ্যায় পেঁচিয়ে রয়েছে কলকাতার বিভিন্ন বাতিস্তম্ভে। আগামী সপ্তাহ থেকে কলকাতা পুরসভা সেই তার কাটার কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি।
ফলে প্রশ্ন, কলকাতারই পাশে সল্টলেক-সহ বিধাননগর পুর এলাকায় এ ভাবে তারের জঙ্গলের কারণে দৃশ্যদূষণ আর কত দিন চলবে? সল্টলেকের বাসিন্দা তথা বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধুর কথায়, ‘‘সল্টলেক বা বিধাননগর এলাকা যে ভাবে সেজে উঠছে তার সঙ্গে এই তারের জঙ্গল একেবারেই বেমানান। কলকাতার মতো ব্যবস্থা সল্টলেকেও কার্যকর হওয়া প্রয়োজন।’’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে রাজারহাট এলাকা বিধাননগরের সঙ্গে জুড়ে বিধাননগর পুরসভা (কর্পোরেশন) তৈরি হয়েছিল। তখনই কেব্ল ও ইন্টারনেটের লাইন ভূগর্ভস্থ পথে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরে পুরসভার অভ্যন্তরীণ গোলমালে সেই প্রকল্প ভেস্তে যায়। পুর কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, ‘ওভারহেড কানেকশন’ সরাতে বিধাননগর পুরসভা অপারেটর এবং রাজ্যের পুর বিষয়ক দফতর— সব তরফের সঙ্গেই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হয়নি।
মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘আমরা পুর বিষয়ক দফতরের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এখন তাঁরা কী করবেন, তাঁদের ব্যাপার।’’ তিনি জানান, একটি সংস্থাকে দিয়ে ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডিপিআর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগের অভাবে সেই পরিকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য, নিউ টাউনে কেব্ল পরিষেবার লাইন গিয়েছে মাটির নীচে দিয়েই।
কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেব্ল অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার মাটির নীচে দিয়ে নিয়ে যেতে। অথবা সুন্দর ফাইবার দিয়ে ওভারহেড তার ঢেকে দিতে।
কেব্ল ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী একটি সংস্থার সভাপতি ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তার চিহ্নিতকরণের কাজ সময়সাপেক্ষ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে এক ভাবে চিহ্নিতকরণের কাজ হচ্ছিল। আবার এখন অন্য ভাবে করতে হচ্ছে। তবে আমরা বিধাননগরে তার চিহ্নিতকরণের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি।’’
দেবাশিস কর নামে এক কেব্ল অপারেটরের কথায়, ‘‘রাতারাতি তার কাটলে পরিষেবা বিপর্যস্ত হবে। ভূগর্ভস্থ পরিকাঠামো তৈরি না করে দিলে মাটির নীচে দিয়ে তার নিয়ে যাওয়া খরচসাপেক্ষ। সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। তবে এ নিয়ে একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা করলেই ভাল হয়।’’
এ নিয়ে পুরমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘সব বিষয়ে রাজ্য সরকারের মুখাপেক্ষী না হওয়াই ভাল। বিধাননগর পুরসভা আপাতত অকেজো লাইনগুলি
শনাক্ত করার কাজটা তো করতেই পারে। তার জন্যও কি পুরমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy