ফাইল চিত্র।
এক সময়ে পরিষ্কার জলাশয় ছিল। সেখানে স্নান করতেন এলাকার বাসিন্দারা। এখন আবর্জনায় ভরা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেটি এক কালে পুকুর ছিল।
এ চিত্র কলকাতা পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, একেবারে মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে চত্বরটি। স্থানীয় বাসিন্দা নরেশ বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘কাউন্সিলরকে জানিয়েছি পুকুরটা পরিষ্কার করা দরকার। কিন্তু এখনও কাজ হয়নি।’’ আর এক বাসিন্দা জানান, মশার উপদ্রব বেড়েছে। অনেকেই জ্বরে ভুগছেন।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ড। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের পাশে মহাত্মা গাঁধী রোড মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে অটো পথের পাশেই সন্ধ্যের পর ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে আবর্জনার স্তূপ। অথচ পাশেই আছে কম্প্যাক্টর স্টেশন। কিন্তু সাফাইয়ের নাম নেই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়াল বরাবর রাজা এস সি মল্লিক রোডের উপরে ফুটপাত জুড়ে বেশ কিছু খাবারের দোকান। দোকানে ব্যবহৃত চায়ের কাপ ছড়িয়ে থাকে রাস্তার ধারেই। পতঙ্গবিদেরা বলছেন, একটি চায়ের কাপেও অসংখ্য এডিসের লার্ভা জন্ম নেয়।
বাদ নেই শিয়ালদহ চত্বরও। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাঁচিলের পাশ দিয়ে গেলেও নজরে পড়ে যত্রতত্র জমে থাকা প্লাস্টিকের কাপ। মানিকতলা, রাজাবাজার খালপাড়ে জঞ্জালের সঙ্গেই জমে ডাবের খোলা। খালপাড়ে কোথাও আবার লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে লরি। তার আশপাশে দেখা যায় রিসোল টায়ারও। পতঙ্গবিদদের মতে যা হল ভয়ঙ্কর। ওই এলাকার একটি অংশ কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এ বার সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সেখানেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সম্প্রতি বিভিন্ন পুরসভার কর্তাদের ডেকে সতর্ক করার কাজ শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তেমনই এক বৈঠক হয় বিধাননগরের উন্নয়নে ভবনে। গত বছরের হিসেব অনুযায়ী যে সব জায়গায় ডেঙ্গি ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি, তেমন ১৮৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের ডাকা হয়। এর মধ্যে কলকাতারই ৭৮টি ওয়ার্ড ছিল। যদিও এ বার তার মধ্যে অনেকগুলি ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ভাল বলে দাবি পুরসভার। কিন্তু এ বছর বর্ষার গতিপ্রকৃতি যা, তাতে ওই রোগ যে কোনও সময়ে মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা পতঙ্গবিদদের। পুরসভা সূত্রে খবর, এ বার ডজন খানেক ওয়ার্ড নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। সেগুলি হল ৬, ১৪, ৩৬, ৪৪, ৪৭, ৫৯, ৭৪, ৬৯, ৭৯, ৮১, ৮২ এবং ১০৯। তবে ওই সব এলাকায় জমা জল, কাগজের কাপ, ছাদে ফুলের টবে জমা জলে মশার ‘চাষ’ পুরসভাকে ভাবাচ্ছে।
পুরসভার তথ্য বলছে, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মূল সমস্যা নির্মাণস্থলে জমা জল ও জঞ্জাল। উন্নয়ন ভবনের বৈঠকে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল। নথি বলছে, এখনও পর্যন্ত ৬৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। ওই এলাকার মানুষ সচেতন না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে আবার জঞ্জাল জমার প্রবণতা থেকেই বাড়ছে মশাবাহী রোগ বলে পুর সূত্রের খবর। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭। কলকাতা পুরসভার ৭৪, ৮১ ও ৮২ নম্বর ওয়ার্ড হল নিউ আলিপুর ও চেতলা এলাকায়। ওই সব ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৫, ২০ ও ৪৩ জন।
পুর সূত্রের খবর, সচেতনতার বার্তা ছড়াতে একটি করে হ্যান্ড মাইক ও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের। নরেশবাবুরা অবশ্য জানাচ্ছেন, কাউন্সিলরকে হ্যান্ড মাইক নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়নি। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমলবাবুর বক্তব্য, ‘‘আপ্রাণ চেষ্টা করেও মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না।’’ ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবলীনা চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আমার ওয়ার্ডে অনেক লোক বাইরে থেকে আসেন। তাঁরা এখানকার ঠিকানা ব্যবহার করেন বলেই তথ্য ঠিক মেলে না।’’ ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাসের বক্তব্য, কিছু বহুতলের ছাদে জল জমে মশার জন্ম হয়। অনেক বাড়ি বন্ধ থাকায় সেখানে ঢোকা যায় না। ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ জানান, অনেক ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় কর্মী না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি উন্নয়ন ভবনের বৈঠকে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও জানানো হয়েছে। তবে চিন্তার অবকাশ যে আছে যথেষ্টই, তার ইঙ্গিত মিলছে স্পষ্ট। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ যেমন বলছেন, ‘‘এ বার ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে ঠিকই। তবে চলতি মাসটা নিয়েই দুশ্চিন্তা বেশি। সেটা ধরেই কাজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy