এই টিন নিয়েই জেলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত কর্তৃপক্ষ। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
আগুন লাগার সাত দিনের মাথাতেই পুড়ে যাওয়া বাজারের ধ্বংসস্তূপ নিয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেল ও দমদম পুরসভার মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়ে গেল।
গত রবিবার বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় গোটা গোরাবাজার। আগুনের তাপে টিনের ছাউনি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে।
গলে গিয়েছে লোহার বিমও। দমদম জেলের পাঁচিল লাগোয়া একটি ফাঁকা মাঠে এ সব রেখেছে দমদম পুরসভা। জেল সূত্রের খবর, নিরাপত্তাজনিত কারণে ডাঁই করে রাখা টিন ও লোহার বিম সরানোর কথা জানিয়ে মহকুমা শাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি কাকভোরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের আদিগঙ্গার দিকে প্রায় ১৫ ফুট পাঁচিল টপকে পালায় তিন বিচারাধীন বাংলাদেশি বন্দি। সে দিক থেকে জেল কর্তৃপক্ষের এই চিঠি তাৎপর্যপূর্ণ। যে জায়গায় সামগ্রী মজুত করা নিয়ে এই চিঠি-পর্বের সূত্রপাত, সেখান থেকে জেলের পাঁচিলের দূরত্ব সামান্যই। আলিপুরের ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তাজনিত চিঠির যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টমহলের। এ প্রসঙ্গে কারা দফতরের এক প্রতিনিধি জানান, সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই জেলের জমি থেকে আবর্জনা সরাতে বলা হয়েছে।
জেল কর্তৃপক্ষের চিঠিতে সমস্যায় পড়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রের খবর, পোড়া বাজার পুনর্গঠনে অর্থের প্রয়োজন। সরস্বতী পুজো এবং নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষে ব্যাঙ্ক ছুটি ছিল। মহাজনেদের বকেয়া মেটানোর জন্য বহু দোকানদার দোকানে নগদ টাকা রেখেছিলেন। জিনিসপত্র ছাড়া আগুন কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের সঞ্চিত অর্থও। এই পরিস্থিতিতে টিনের ছাউনি, লোহার ছাঁট নিলাম করে পাওয়া অর্থ বাজারের দু’টি ব্যবসায়ী সমিতির জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। ক্ষতির পরিমাণ এতখানি যে, সাধারণ মানুষের কাছেও আর্থিক সাহায্যের জন্য আর্জি জানানোর কথা ভাবছে পুরসভা।
চিঠি প্রসঙ্গে এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘ওগুলো এখন কোথায় নিয়ে যাব! আমাদের জেলের কাছে একটি মাঠ ছাড়া লিচুবাগান, বাদরা মাঠ রয়েছে। গ্রিন সিটি প্রকল্পে সবক’টি মাঠের সংস্কার চলছে। তাই জেলের জায়গা ফাঁকা ছিল বলে নিলাম না হওয়া পর্যন্ত ওগুলো সেখানে রেখেছিলাম। এরই মধ্যে চিঠি চলে এল!’’ টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে মজুত জিনিসপত্র কোথায় সরানো হবে, সেটাই এখন মাথাব্যথার কারণ পুরকর্মীদের।
তবে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। রবিবার পুরপ্রধান হরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘জেলের জায়গা থেকে দ্রুত সামগ্রী সরিয়ে নেব। মহকুমাশাসকদের দফতর মারফত জেলের বক্তব্য জেনেছি। আমাদের বক্তব্য সেখানেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেব।’’
এ দিকে বাজার পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পোড়া সামগ্রী সাফাই শুরু করেছেন পুরকর্মীরা। মুদিখানা, চালপট্টি, চিঁড়েমুড়ির দোকানের নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস পাঠানো হচ্ছে জেসপ কারখানা সংলগ্ন ভ্যাটে। সেখান থেকে সেগুলির ঠাঁই হচ্ছে ভাগাড়ে। দুমড়ে যাওয়া টিনের ছাউনি, ভাঙাচোরা লোহা ও যন্ত্রাংশ জেল সংলগ্ন একটি ফাঁকা জমিতে মজুত করছেন পুরকর্মীরা। যা নিয়ে চলছে জেল ও পুরসভার টানাপড়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy