Advertisement
E-Paper

‘আতঙ্কে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল বাচ্চাদের অনেকে’

স্কুলে ছোটদের কী অবস্থা, বুঝতে পারছিলাম না। সৌরনীলকে ওই ভাবে রেখেই ফিরলাম স্কুলে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাইরে শুরু হল তুমুল গোলমাল।

behala.

বেহালায় দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং ব়্যাফ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রণয় মিস্ত্রি (সহকারী শিক্ষক, বড়িশা উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দির, প্রাথমিক বিভাগ)

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৪৩
Share
Save

এমন একটা দিনও যে কখনও দেখব, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্কুল থেকে ছুটে যখন রাস্তায় গেলাম, সৌরনীলের বাবা তখনও বাক্‌রুদ্ধ হয়ে ছেলের পিষে যাওয়া, রক্তমাখা দেহের পাশে বসে আছেন। বাচ্চাটার মাথার দিকটা ছোট একটি কাপড়ে ঢেকে দিয়েছিলেন কেউ। ইউনিফর্ম রক্তে ভেজা। রাস্তার অনেকটা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে রক্ত।

শুক্রবার স্কুলে পরীক্ষা ছিল। প্রশ্নপত্র গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনলাম গেটের দিক থেকে। শুনলাম, রাস্তার ও-পারে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদেরই স্কুলের এক ছাত্রকে নাকি লরি ধাক্কা মেরেছে। পড়িমরি করে ছুটলাম। সঙ্গে প্রধান শিক্ষক অর্জুনবাবুও (রায়)। তত ক্ষণে অবশ্য সব শেষ। ভিড় জমে গিয়েছিল। দু’জন পুলিশকর্মীকে দেখলাম, উত্তেজিত লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু জনতা তাঁদের কথা শুনতে নারাজ। অভিভাবকেরা তো ছিলেনই, স্থানীয় লোকজনও অনেকে চলে এসেছিলেন। শিশুটির রক্তাক্ত দেহ বিছানার চাদরে ঢেকে দিয়েছিলেন কেউ। স্কুলের পুরনো একটি ব্যানার নিয়ে এসে তার উপরে চাপা দিয়ে দিলেন এক জন। লরির চালককে ধরে না নিয়ে এলে দেহ ছাড়া হবে না বলে দাবি উঠল। তখনই পুলিশের একটা প্রিজ়ন ভ্যান দেখে রে-রে করে সে দিকে ছুটে গেলেন কয়েক জন।

স্কুলে ছোটদের কী অবস্থা, বুঝতে পারছিলাম না। সৌরনীলকে ওই ভাবে রেখেই ফিরলাম স্কুলে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাইরে শুরু হল তুমুল গোলমাল। অভিভাবকদের ভিড় জমে গিয়েছিল স্কুলে। ভিতরে তখন প্রায় সাড়ে চারশো পড়ুয়া। কয়েকটি ক্লাসে পরীক্ষাও চলছিল। এরই মধ্যে রাস্তায় ভাঙচুর চলার আওয়াজ পেলাম। ‘মার মার’ চিৎকারও হচ্ছিল। শুনলাম, বাইরে লাঠিচার্জ শুরু করেছে পুলিশ। দুমদাম ফাটতে শুরু করল কাঁদানে গ্যাসের শেল। স্কুলের একদম পাশেই।

ধোঁয়ায় ভরে গেল চার দিক। টিচার্স রুমে টেকা যাচ্ছিল না। বীরেন রায় রোডের দিকের ক্লাসঘরগুলিতেও ধোঁয়া ঢুকতে শুরু করল। আতঙ্কে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল বাচ্চাদের অনেকে। শিক্ষকেরা সকলে মিলে কোনও ভাবে ওদের পাশের নিরাপদ ঘরে সরিয়ে নিয়ে যাই।

তখনও ওই ভাবেই রাস্তায় পড়ে আছে সৌরনীলের দেহ। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে অভিভাবকদের ডেকে বাচ্চাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুধু এক জনই আজ আর বাড়ি ফিরতে পারল না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Behala Accident

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}