বিচারক উপস্থিত এজলাসে। হাজির বাদী-বিবাদী পক্ষের উকিলেরাও। মামলার রায় দান হবে। কিন্তু দেখা নেই অভিযুক্তের।
বিচারকের প্রশ্নের সামনে অভিযুক্তের উকিলের জবাব, তাঁর মক্কেলকে হাজির হওয়ার সমন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতে সে নেই। বীজপুর থানার পুলিশ গিয়ে ঘুরে এসে জানিয়েছে, পালিয়েছে অভিযুক্ত মিহির (বুড়ন) সেন।
ক্ষুব্ধ বিচারক বুধবার দুপুরে এর পরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার খুনের দায়ে বুড়নকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। শুক্রবার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান ব্যারাকপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তাপসকুমার মিত্র। যে খুনের দায়ে তারা সাজা হল, তা ঘটেছিল ২১ বছর আগে।
সরকারি আইনজীবী অসীমকুমার দত্ত জানান, বীজপুর থানার নবনগরে বাড়ি ছিল বছর ছাব্বিশের বুড়নের। একই পাড়ায় থাকতেন ২৪ বছরের তারকনাথ সাহা। ১৯৯৭ সালে এক তরুণীর সঙ্গে গল্প করাকে কেন্দ্র করে বুড়নের হাতে খুন হন তারক। খুনের আগে বুড়ন মারধর করেন তারককে। ছেলেকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তারকের মা সুনীতি সাহা। তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন বুড়ন। তার পরেই তারকের পেটে এবং গলায় ছুরি চালিয়ে দেন তিনি। রক্তাক্ত তারক পুলিশকে ঘটনার বয়ান দেন। পরে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে তারক মারা যান। বুড়ন গ্রেফতার হন।
আদালত থেকে তিন মাসের মধ্যে জামিন পেয়ে যান বুড়ন। তার পরে শুনানি শুরু হলেও কোনও অজানা কারণে দীর্ঘদিন শুনানি বন্ধ ছিল। মাস কয়েক আগে ফের শুনানি শুরু হয়। তার মধ্যেই বুড়নের দীর্ঘদিনের আইনজীবী এই মামলা ছেড়ে দেন। তিনি আর আইনজীবী পাননি। শেষে আদালত ‘স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল’ থেকে উকিল দেয় তাঁকে।
আদালত সূত্রের খবর, বুধবারই মামলার রায় দেওয়ার কথা ছিল আদালতের। কিন্তু সাজা ঘোষণার দিনই পালিয়ে যান বুড়ন। অভিযুক্ত কোথায়, তা তার আইনজীবীও জানাতে পারেননি। আদালতের নির্দেশে বুধবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে ভোরে বীজপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিচারক ৩০৪ এবং ৩২৬ ধারাতে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। শুক্রবার আদালতে হাজির তারকের বাবা শ্যামসুন্দর সাহা বলেন, ‘‘মামলা শেষ হতে দেরি হওয়ায় একটা সময় হতাশ লাগছিল। তবে আদালতের প্রতি আস্থা ছিল। আজ সুবিচার পেলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy