অটিজম আক্রান্তদের জন্য এ বার হোম চালু হতে চলেছে কলকাতায়। যে অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের অভিভাবকেরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, বা যাঁদের পক্ষে অটিস্টিক সন্তানকে বাড়িতে রেখে বড় করা সম্ভব হয় না, তাঁদের ছেলেমেয়েরা এই হোমে থাকার সুযোগ পাবেন। হোমটি যাঁরা চালাবেন, তাঁদের একটা বড় অংশও অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবক।
চিকিত্সকেরা জানান, অটিজমের মাত্রাভেদ থাকে। কম মাত্রায় থাকলে সেই শিশু সাধারণ স্কুলে আর পাঁচ জনের সঙ্গেই পড়াশোনা করতে পারে। কিন্তু মাত্রা বেশি হলে অনেকের জন্যই দরকার হয় ‘স্পেশ্যাল স্কুল’। কিন্তু শুধু স্কুল নয়, বাড়িতেও তাদের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। অভিভাবকেরা তা দিতে অপারগ হলে সেই শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে তা বড় সমস্যা তৈরি করে। হোমটি চালু করতে চলেছে যে সংগঠন, তাদের কর্ণধার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রধান মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর ছেলে অটিজমের শিকার। ছেলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে গিয়েই তিনি টের পেয়েছিলেন, পরিকাঠামো বলে আসলে কিছুই নেই। তখনই জন্ম নেয় সংগঠন গড়ে তোলার তাগিদ। ২০০০ সালে আরও কয়েক জন অটিস্টিক শিশুর বাবা-মায়ের সহায়তায় তাঁরা তৈরি করেন একটি সংগঠন। সেই সংগঠনে স্পেশ্যাল স্কুল চালানো হয়। চলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও। মল্লিকাদেবী বলেন, ‘‘স্কুল চালাতে গিয়েই বুঝি, একটা হোমের প্রয়োজন কতটা বেশি। ১৫ বছরের চেষ্টায় সংগঠনের নিজস্ব ভবন তৈরি হয়েছে। স্কুলের পাশাপাশি সেখানেই চালু হবে এই হোম।’’
বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য সরকারি-বেসরকারি স্তরে একাধিক হোম আছে। বহু ক্ষেত্রে অটিস্টিকদেরও সেখানে রাখা হয়। যদিও তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, অটিস্টিকদের জন্য বিশেষ পরিচর্যা দরকার। রাজ্য প্রতিবন্ধী কমিশনের কর্তারা জানান, অটিস্টিকদের পৃথক হোমের প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁরা জানেন। কিন্তু এখনই সরকারি তরফে তা তৈরি করা সম্ভব নয়। কোনও সংস্থা এলে তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
এ দেশে প্রতি হাজারে এক জন এই সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কোনও তরফেই অটিজম নিয়ে তেমন প্রচার নেই। সে কারণেই অভিভাবকেরা সমস্যাটা ধরতে পারছেন অনেক দেরিতে। বিশেষত গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম এক স্নায়ুগত সমস্যা, যা মস্তিষ্কের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। শিশুটি সামাজিক ভাবে মেলামেশা করতে পারে না, নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না, অন্যের বক্তব্য বুঝতেও চায় না। বহু ক্ষেত্রে ডাক্তারেরাও সমস্যাটা গোড়ায় ধরতে পারেন না। কথা শিখতে দেরি হলে ‘ও কিছু নয়, ঠিক হয়ে যাবে’ বলে ছেড়ে দেন। এতে সময় নষ্ট হয়। শিশুটির শিখতে আরও দেরি হয়ে যায়। বহু ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পরেও অভিভাবকেরা মূল সমস্যাটা বুঝতে সময় নেন। তাই অটিস্টিকদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণ জরুরি।
অটিজম সোসাইটি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর প্রতিষ্ঠাত্রী ইন্দ্রাণী বসুর মতে, হোম খুবই জরুরি ঠিকই। কিন্তু এটা যেন সমাজ থেকে তাদের আরও বিচ্ছিন্ন না করে। তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু এই সমস্যাা সম্পর্কে সচেতনতা কম, তাই পারিপার্শ্বিক সহায়তা খুব কম পাওয়া যায়। এই কারণেই হোমের প্রয়োজন। তবে সেখানে যেন খোলামেলা পরিবেশ থাকে, বাইরের জগতের সঙ্গে কাজকর্মের সুবিধা থাকে— তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’’
মল্লিকাদেবী জানিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে অটিস্টিকদের জন্য বৃদ্ধাবাস তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy