প্রতীকী ছবি
এ যেন ‘বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা’!
ঘটনাস্থল হরিদেবপুর থানা। তাঁর দায়ের করা প্রতারণার মামলার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন পলাশ দত্ত নামে এক ব্যবসায়ী। থানায় বসেই ‘পুলিশের সাহায্যে’ এক আইনজীবীর খোঁজ পেয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, পলাশের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন সেই আইনজীবীই!
এখানেই শেষ নয়। ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায় জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ, সেই আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলায় কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে হরিদেবপুর থানা। সে কারণেই শেষমেশ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন পলাশ। তাঁর আর্জি, মামলাটি হরিদেবপুর থানা থেকে সরিয়ে সিআইডি বা অন্য কোনও নিরপেক্ষ সংস্থার হাতে দেওয়া হোক।
মামলায় অভিযোগের তালিকায় ওই আইনজীবী ছাড়াও নাম রয়েছে হরিদেবপুর থানার ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টরের। ওই সাব-ইনস্পেক্টরই থানার ভিতরে বসে সেই মহিলা আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়েছিলেন বলে মামলার আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন পলাশ। মামলায় যুক্ত করা হয়েছে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) এবং ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট)-কেও। তবে ঘটনার সময়ে হরিদেবপুর থানার দায়িত্বে থাকা ওসি সম্প্রতি বদলি হয়েছেন বলে খবর।
পলাশ তাঁর আবেদনপত্রে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের জুন মাসে হরিদেবপুর থানায় ব্যবসা সংক্রান্ত একটি জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। থানার এক এসআই ওই মামলার তদন্ত করছিলেন। কিন্তু অভিযুক্তেরা আলিপুর আদালত থেকে জামিন পান। সে সময়ে পলাশ যখন মামলাটি হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনজীবীর খোঁজ করছিলেন, তখন ওই এসআই এক দিন থানার ভিতরেই তাঁর সঙ্গে এক মহিলাকে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। পলাশের অভিযোগ, সেই মহিলা আইনজীবী মামলার খরচ বাবদ কয়েক দফায় মোট ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা নেন। কিন্তু তার পরে মামলাটি দায়ের না-হওয়ায় পলাশ খোঁজখবর শুরু করেন। কিন্তু ওই আইনজীবী আরও টাকা দাবি করলে পলাশ দেননি।
মামলার আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, কিছু দিন ধরে খোঁজখবর করার পরে ওই মহিলা আইনজীবী হোয়াটসঅ্যাপ মারফত আদালতের একটি রায়ের কপি পাঠান এবং জানান, পলাশ মামলা জিতে গিয়েছেন। কিন্তু ওই রায়ের কপিতে কোনও মামলার নম্বর, বিচারপতির সই কিছুই ছিল না। অভিযোগকারী মামলার ‘সার্টিফায়েড কপি’ দাবি করলে সেই মহিলা আইনজীবী কয়েক জন বিচারপতি ও পুলিশকর্তার নাম করে অভিযোগকারীকে হুমকি দেন বলে সূত্রের দাবি।
পলাশের আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু হরিদেবপুর থানার ওই সাব-ইনস্পেক্টর বিষয়টি নিয়ে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করা ছাড়া তদন্ত এগোননি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের (অপরাধ দমন) কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন পলাশ। থানা থেকে শুধু জানানো হয়েছে, ওই মহিলা পলাতক। তাই কিছু করা যাচ্ছে না। মহিলা আইনজীবী হিসেবে যে ভিজ়িটিং কার্ড দিয়েছিলেন, তাতে উল্লেখিত ঠিকানাও ভুয়ো বলে আবেদনপত্রে জানানো হয়েছে।
পুলিশের কয়েকটি সূত্রের দাবি, এক শ্রেণির আইনজীবীর সঙ্গে পুলিশের একাংশের ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ থাকে। সেই সূত্রেই তাঁরা মক্কেল জোগাড় করেন। বিভিন্ন থানায় ওই আইনজীবীদের যাতায়াতও থাকে।
কিন্তু সেই সব আইনজীবীর বিরুদ্ধে এমন জালিয়াতির অভিযোগ উঠতে শোনা যায়নি। হরিদেবপুর থানায় যে মহিলা আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন তিনি আদৌ আইনজীবী কি না, তা নিয়েও সন্দেহ অনেকের। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওই মহিলা আইনজীবীর একটি ফেসবুক প্রোফাইল রয়েছে। সেখানে তিনি নিজেকে আইনজীবী বলে পরিচয় দিয়েছেন এবং আইনজীবীর পোশাকে ছবিও দিয়েছেন। যদিও ২০১৯ সালের শেষ থেকে সেই প্রোফাইলে আর কোনও তথ্য পোস্ট করা হয়নি।
প্রশ্ন উঠছে, সব রকমের খোঁজ না-নিয়ে কেন ওই আইনজীবীকে থানায় বসতে দেওয়া হল? কেনই বা এক জন পুলিশ অফিসার সরাসরি আইনজীবীকে মক্কেল জোগানোর দায়িত্ব নিলেন? এ-ও প্রশ্ন উঠছে, পলাশবাবুর মতো এমন ‘শিকার’ কি আরও রয়েছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy