Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

টক্কর দিতে গিয়ে ফুটপাথে উঠে গেল বাস

সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ গড়িয়াহাট বাজারের সামনে এই ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছেন কয়েক জন হকার ও পথচারী। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিনের ওই দুর্ঘটনায় বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত। প্রাণহানি হতে পারত একাধিক মানুষের। চালক-সহ বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ।

তছনছ: বাসের ধাক্কায় এমনই অবস্থা ফুটপাথের। সোমবার, গড়িয়াহাট বাজারের কাছে। নিজস্ব চিত্র

তছনছ: বাসের ধাক্কায় এমনই অবস্থা ফুটপাথের। সোমবার, গড়িয়াহাট বাজারের কাছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০৪
Share: Save:

ঘড়ঘড় করে একটা আওয়াজ কানে আসছিল। কিন্তু সেটা কীসের আওয়াজ, তা বোঝার আগেই দোকানিরা দেখলেন, রেলিং ভেঙে ফুটপাথে উঠে পড়ল একটি বেসরকারি বাস। পরপর গুঁড়িয়ে দিল কয়েকটি স্টল। কয়েক জন দোকানি দেখলেন, বাসের চাপে তাঁরা আটকে পড়েছেন নিজেদেরই জিনিসপত্রের মধ্যে।

সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ গড়িয়াহাট বাজারের সামনে এই ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছেন কয়েক জন হকার ও পথচারী। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিনের ওই দুর্ঘটনায় বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত। প্রাণহানি হতে পারত একাধিক মানুষের। চালক-সহ বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেলা ১২টা নাগাদ এক নম্বর রুটের একটি বেসরকারি বাস ফুটপাথের রেলিং ভেঙে কয়েকটি স্টল সমেত গড়িয়াহাটের স্থায়ী বাজারের গেটের ভিতরে ঢুকে যায়। তিনটে স্টল পুরোপুরি গুঁড়িয়ে যায় ওই ঘটনায়। আহত হন দু’জন হকার, এক জন পথচারী ও এক জন বাসযাত্রী। ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্ষতিগ্রস্ত স্টলগুলির মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই বাসটি ৩সি/১ রুটের একটি বেসরকারি বাসের সঙ্গে রেষারেষি করছিল। তা করতে গিয়েই এক নম্বর রুটের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং রেলিং ভেঙে ফুটপাথে উঠে পড়ে।

ওই ফুটপাথেই স্টল তারাপদ বৈদ্য নামে এক হকারের। রোজের মতো এ দিনও পেয়ারার ডালা নিয়ে একটি স্টলের পাশে বসেছিলেন তিনি। ঘটনার পরে তারাপদবাবু বলেন, ‘‘বাসটিকে ঘাড়ের কাছে দেখেই পড়িমড়ি করে দৌড়েছি প্রাণ বাঁচাতে। না হলে হয়তো পিষেই যেতাম চাকায়।’’

অমিত দাস এবং পরিমল হালদার নামে অন্য দুই হকার অবশ্য ক্ষোভ চেপে রাখেননি। তাঁদের দু’জনেরই দাবি, ‘‘প্রাণে বেঁচে গেছি ঠিকই। কিন্তু দোকান-সহ সব জিনিসপত্র নষ্ট
হয়ে গিয়েছে। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। না-হলে রাস্তায় নেমে অবরোধ করব।’’

এঁরা প্রাণে বাঁচলেও প্রবীর সরকার ওরফে বাবু নামে এক হকার দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বাসের নীচে গুঁড়িয়ে গিয়েছে তাঁর স্টল। রেডিমেড জামাকাপড়ের দোকান তাঁর। ওই জামাকাপড়ের স্তূপের ভিতরে চাপা পড়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর বুকে এবং পায়ে লেগেছে। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুমঙ্গল হাসপাতালে।

শুধু প্রবীর নন, আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন হকার। তাঁদের চোট অবশ্য গুরুতর নয়। পুলিশ জানিয়েছে, হকারেরা ছাড়াও এক জন পথচারী ও এক বাসযাত্রী আহত হয়েছেন। ‘বালিগঞ্জ হকার্স অ্যাসোশিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক ননীগোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে ক্ষতিগ্রস্ত স্টল ও হকারদের তালিকা দিয়েছি। প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়, দেখে নিয়ে পরের পদক্ষেপ করব।’’

এ দিন আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে রাসবিহারী মোড়ে। পুলিশ জানায়, একটি এসি বাসকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায় আর একটি এসি বাস। এই ঘটনায় পিছনের আসনে বসা এক বাসযাত্রী আহত হয়েছেন।

এ দিন শহরের বুকে পরপর দু’টি ঘটনাতেই উঠে এসেছে বাসের রেষারেষির কথা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বারবার বেপরোয়া গতির জন্য নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরে স্পিড ব্রেকার বসিয়েও কী লাভ হল? যাত্রী তোলার জন্য বেসরকারি বাসগুলির রেষারেষি তো রয়েই গেল। তা আটকাবে কে! সে উত্তর অবশ্য পুলিশের কাছ থেকে মেলেনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE