সোনালি আইকত
গত বছরের ১৮ মার্চ তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, আত্মহত্যা হাসির বিষয় নয়। এ নিয়ে মজা করার কিছু নেই। মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করা এক সহকর্মীর সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে দুর্ব্যবহারের উদাহরণ দিয়ে সমাজ বদলের আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি। ঠিক তার এক বছরের মাথায় শনিবার যাদবপুর থানা এলাকার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের এক বহুতল আবাসনের আঠেরোতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হল ওই মহিলার। পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা।
পুলিশ জানায়, মৃতার নাম সোনালি আইকত (৪৫)। এ দিন বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ ওই আবাসনের তিন নম্বর টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দেন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ময়না-তদন্তের জন্য দেহটি বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন সোনালি। চিকিৎসাও চলছিল। আগেও কয়েক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর পরিবারও সে কথাই জানিয়েছে পুলিশকে। পুলিশের হাতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনও তুলে দিয়েছে সোনালির পরিবার। পুলিশের আর একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই আবাসনে মহিলার ফ্ল্যাট থেকে এমন কিছু বই মিলেছে, যাতে আত্মহত্যার নানা পন্থার বিষয়ে লেখা রয়েছে।
পুলিশ ও আবাসন সূত্রে খবর, অবিবাহিতা সোনালি পেশায় ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কর্মসূত্রে কিছু দিন আমেরিকায় ছিলেন। কিছু দিন ধরে আর চাকরি করছিলেন না। ওই আবাসনের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন বালিগঞ্জ পার্ক রোডের বাড়িতে। মাসে এক বার আসতেন ওই ফ্ল্যাটে। ডেকে নিতেন পরিচারিকাকে। কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে যেতেন বাড়িতে।
মৃতার বাবা অশোক আইকত পুলিশকে জানিয়েছেন, এ দিন সকালের দিকে ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন সোনালি। পরিচারিকাকে ডেকেছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতেই সোনালি বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীরা কথা বলেছেন পরিচারিকা শেফালি মণ্ডলের সঙ্গে। ওই মহিলা জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটের ঘরে কাজ করছিলেন তিনি। সোনালি ছিলেন অন্য ঘরে। কিছু ক্ষণ পরে সোনালির ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, ঘর ফাঁকা। বারান্দার কাছে গিয়ে শেফালি দেখতে পান, সেখানে সোনালির জুতো রাখা। নীচে তাকিয়ে দেখেন, বারান্দার ঠিক নীচে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে সোনালির দেহ। এর পরে তিনিই প্রতিবেশীদের খবর দেন। তাঁরাই ফোন করেন যাদবপুর থানায়।
এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে মা ও বোনকে নিয়ে ওই আবাসনের চৌত্রিশ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন পরিবেশকর্মী মুকুতা মুখোপাধ্যায়। ওই বছরেরই জানুয়ারি এবং ২০১৩-এ একই ভাবে আত্মঘাতী হন কৌশিক দে নামে এক যুবক ও রুশা মুখোপাধ্যায় নামে এক কিশোরী। তালিকায় এ বার নাম জুড়ল সোনালির। একের পর এক এই ধরনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন আবাসিকদের অনেকেই। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘বারবার এ রকম ঘটছে। ছেলেমেয়েরা কী হয়েছে, জানতে চাইছে। নিরাপত্তা বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy