Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বুদ্ধির জোরে বাঁচলেন ভেসে যাওয়া তিন জন

জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এক সময়ে হাফ ধরে হয়তো ওরা তলিয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। কয়েক মিনিটের উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জলের স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এলেন ওঁরা তিন জন।

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তিন জনকে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তিন জনকে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

একেই বলে রাখে হরি, মারে কে!

জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এক সময়ে হাফ ধরে হয়তো ওরা তলিয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। কয়েক মিনিটের উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জলের স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এলেন ওঁরা তিন জন। আর তাই শুক্রবার সকালে মেটিয়াবুরুজের বিচালি ঘাট থেকে ভেসে যাওয়া এক তরুণ এবং দুই বালকের ‘জল অভিযান’-এর অভিজ্ঞতা শুনে স্তম্ভিত পুলিশকর্তারাও।

এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিচালি ঘাটে গঙ্গায় নেমে দুর্গার কাঠামো জড়ো করছিলেন মহম্মদ রফিকুল (২০), হাসিম আলি (১০) ও মহম্মদ আমন (১০) নামে ওই তিন জন। পনেরোটা মতো কাঠামো জড়ো করে দড়ি দিয়ে বাঁধাও হয়ে গিয়েছিল। অন্য সঙ্গীরা তাঁদের জানিয়েছিলেন, ওগুলি ঘাটের কাছে রেখে দিলে পুলিশের বকা খেতে হবে। তাই মেটিয়াবুরুজ জেটির পাশ দিয়ে ঘুরে বিচালি ঘাটের অন্য দিকে কাঠামো টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই তিন জন। আচমকাই চলে এল বান। তাতেই জলের স্রোত আচমকা বেড়ে যাওয়ায় থই হারিয়ে ফেলে তিন জনই। দ্রুত গতিতে বাবুঘাটের দিকে ভেসে যেতে থাকে কাঠামো। তা ধরে হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে যেতে থাকেন রফিকুল, হাসিম ও আমন। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁরা বুঝে যান, এ ভাবে ভেসে গেলে বিপদ। তাই দেরি না করে কোনওমতে তিন জনই কাঠামোয় উঠে শুয়ে পড়েন।

এ দিকে তিন জনকে ভেসে যেতে দেখে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে দশ বছরের আর এক বালক ইমরাজ মোল্লা। কিন্তু বেশ কিছুটা দূর সাঁতরে গিয়েও ওই তিন জনকে দেখতে না পেয়ে রণে ভঙ্গ দেয় সে। এর পরেই মেটিয়াবুরুজ থানা ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর তল্লাশি শুরু করে। তাঁদের খুঁজতে বেরিয়ে পরেন হুগলি নদী জলপথ পরিবহণের কর্মীরাও। সেই দলের এক জন আজিজুর রহমান বলেন, ‘‘বাবুঘাট গিয়ে মাঝিদের থেকে জানতে পারি, তিন জন কাঠামোয় ভেসে যাচ্ছিলেন। তখন বুঝতে পারি ওঁরা বেঁচে আছেন।’’

বিকেল চারটে নাগাদ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের একটি দল ওই তিন জনকে নিমতলা ঘাটের কাছে সাঁতার কাটতে দেখে উদ্ধার করে। তিন জনকেই নিজেদের জামাকাপড় পরিয়ে দেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। এর পরে রিভার ট্র্যাফিক তিন জনকে নিয়ে এসে পশ্চিম বন্দর থানার হাতে তুলে দেয়। সেখানে আসার পরে তিন জনকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করেন থানার বড়বাবু। মুড়ি চপও খাওয়ানো হয় তাঁদের।

থানা থেকে বেরিয়ে তিন জন জানান, কাঠামো চেপে ধরে শুয়ে থেকে ভেসে অনেক দূর যাওয়ার পরে একটা জেটিতে ধাক্কা লাগে। সেখানেই ওঁরা দড়ি দিয়ে কাঠামোটা বেঁধে নিয়েছিলেন। এর পরে ভাটা শুরু হতেই তিন জনে সাঁতরে ফের বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

মেটিয়াবুরুজ Metiaburuz
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE