পুলিশের সঙ্গে বামেদের খণ্ডযুদ্ধ। বৃহস্পতিবার ধর্মতলা চত্বরে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
রাখে দিদি, মারে কে!
ফের বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিল তৃণমূল রাজ্য প্রশাসন! বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভায় বাধা দিয়ে সম্প্রতি গেরুয়া শিবিরকে অস্ত্র দিয়েছিল তারা। এ বার বামেদের অবস্থান কর্মসূচির আগে মিছিলের পথ আটকে তাদের ব্যারিকেড ভেঙে প্রতিবাদী হওয়ার সুযোগ করে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ!
কেন্দ্র-বিরোধী যে অবস্থান বামেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পুলিশের ‘অতি-সক্রিয়তা’য় বৃহস্পতিবার সেটাই তৃণমূল-বিরোধী জমায়েতে পরিণত হল! ধস্তাধস্তি বাধল বাম-পুলিশে। ভিড়ের চাপে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আহত হলেন দুই বাম কর্মী। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল। আহত হলেন আরএসপি-র প্রবীণ নেতা ক্ষিতি গোস্বামী। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পুলিশের উদ্দেশে বললেন, “আপনারা আমাদের আটকাচ্ছেন। আর তৃণমূল আপনাদের মারছে!” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু প্রশ্ন তুললেন, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের কি গোপন বোঝাপড়া হয়েছে? তা হলে কেন কেন্দ্র-বিরোধী কমর্সূচিতে রাজ্য এ ভাবে বাধা দিচ্ছে?
মূলত বিজেপি-বিরোধী শান্তিপূর্ণ অবস্থান পুলিশের আচরণে যে ভাবে বদলে গেল তৃণমূল-বিরোধী জমায়েতে, তাতে বাম নেতা-কর্মীরা খুশি। রাস্তায় নেমে বামেরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চাঙ্গা রাখছে, এমনই দেখতে চান কর্মী-সমর্থকেরা। কলকাতার রাস্তায় পুলিশের বাধা পাওয়া এবং সেই বাধা অগ্রাহ্য করে দুই ম্যাটাডর জোড়া করে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে অবস্থান-বিক্ষোভ করা এ দিন বামেদের সেই সুযোগই দিয়েছে। বীরভূমের মাখড়ায় গিয়ে ১৪৪ ধারা ও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কর্মী-সমর্থকদের যে বার্তা দিতে পেরেছিল বিজেপির প্রতিনিধিদল, এ দিন বিমানবাবুরা তা-ই করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সূর্যবাবু বলেন, “আগামী দিনে কোনও ব্যারিকেড আমাদের আটকাতে পারবে না! জোয়ার আসছে। আপনাদের আর বেশি দিন নেই!” তাঁর এই কথায় প্রবল উচ্ছ্বাস দেখায় রাস্তার জমায়েত।
এনআরএসের হস্টেলে মানসিক প্রতিবন্ধী কোরপান শাহের হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে গত সপ্তাহে রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর মিছিলের দিনও দেখা গিয়েছিল অতি-সক্রিয় পুলিশকে। ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে পুলিশ সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েক জন প্রতিবন্ধী। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অমিত শাহের সভাকে কেন্দ্র করেও প্রশাসনের মুখ পুড়েছিল। আর বামেরা যেখানে কয়েকশো লোকের অবস্থানের কথা বলেছিল, সেখানে সমাবেশের স্থান নিয়ে প্রথম থেকে প্রশাসনিক টালবাহানা এবং এ দিন ঘটনাস্থলে পুলিশের বাধায় কয়েক হাজার মানুষ উৎসাহে তৃণমূল-বিরোধী সভা করে গেলেন! তবে তার মধ্যেও বিরোধী দলনেতা বুঝিয়েছেন, সাধারণ পুলিশ-কর্মীদের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও আক্রোশ নেই। তাঁদের ক্ষোভ পুলিশের পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে।
আগাম জানা সত্ত্বেও ব্যারিকেড করে কেন বামেদের আটকাতে গেল পুলিশ? যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব কুমার মিশ্র বলেন, “রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বিকেল চারটের পরে কর্মসূচি ছিল। তার আগেই জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আরও আগে সভা করার জন্য ওরা ব্যারিকেড ভাঙে।” যদিও ধস্তাধস্তির আগেই অন্য সভা শেষ হয়েছিল।
বুধবার রাতে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া সময় এবং পথ ধরে এগোতে গিয়েও এ দিন বাধার মুখে পড়তে হয় বাম দলগুলিকে। ইতিমধ্যেই ধর্মতলায় এসে পড়ে এসএফআইয়ের মিছিল। ছিল এসইউসি, লিবারেশনও। বাধা পেয়ে প্রথমে দু’টি ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় বামেরা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তি। ভেঙে যায় আরও একটি ব্যারিকেড। একাধিক বাম কর্মী আহত হন। বেহালার সমর প্রামাণিক ও কসবার চাঁদু ঘোষ গুরুতর আহত হন। সূর্যবাবু তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের হ্যান্ড মাইক নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন সূর্যবাবুই।
মঞ্চ থেকে ক্ষিতিবাবু অভিযোগ করেন, “আমার বুকে অস্ত্রোপচার হয়েছে আগে। পুলিশ প্রায় আমার বুকে বসে পড়েছিল! আমরা কিন্তু শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালন করতে এসেছিলাম।” এসইউসি নেতা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ যা করেছে, সবাই দেখতেই পেলেন। আমাদেরও শুধু আলোচনা বা কনভেনশনের জন্য এই আন্দোলন নয়!” বিমানবাবু অভিযোগ করেন, “মাদ্রাসার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ না থাকলেও পুলিশ দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল!” দিনের শেষে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “আমরা আইন অমান্য করলেও ঘোষিত কর্মসূচির বাইরে যাই না। তবে এই রকম প্রশাসন থাকলে কর্মীরা তো রসদ পাবেনই!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy