মালয়েশিয়ার বিমানসংস্থা এয়ার এশিয়ার সঙ্গে দুই যাত্রীর বিবাদ গড়াল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে। দফতরের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি দুই যাত্রী বিমানসংস্থার থেকে সম্প্রতি টাকা ফেরতও পেলেন। মালয়েশিয়ার এই বিমানসংস্থা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা-ব্যাঙ্কক উড়ান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা কলকাতা-কুয়ালালামপুর রুটে নিয়মিত উড়ান চালায়। সম্প্রতি টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে এয়ার এশিয়া ভারতের অভ্যন্তরেও উড়ান পরিষেবা শুরু করেছে।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রে খবর, দু’টি ভিন্ন ঘটনায় দুই যাত্রী টিকিটের দাম ফেরত চান এয়ার এশিয়ার কাছে। দু’টি অভিযোগই ছিল কলকাতা-ব্যাঙ্কক রুটের টিকিট নিয়ে। কিন্তু দুই যাত্রীরই দাবি, তাঁদের অভিযোগ উড়িয়ে দেয় সংস্থাটি। দফতর সূত্রে খবর, চাপের মুখে সম্প্রতি দু’জনকে ৭২ হাজার টাকারও বেশি ফেরত দেয় সংস্থা। সংস্থার জানিয়েছে, দু’ক্ষেত্রেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। টাকা ফেরত দেওয়াই হতো। তার আগেই ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ জানিয়ে দেন ওই যাত্রীরা।
একটি ঘটনায় বনহুগলির ব্রজগোপাল চট্টোপাধ্যায় গত ৫ মার্চ রাতে সপরিবার কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে জানতে পারেন, ব্যাঙ্ককের উড়ান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা হলে টিকিট? দেখা যায়, টিকিট ঠিকই আছে। কিন্তু উড়ান না থাকলে যাবেন কী করে? এ দিকে পরের দিনই ব্যাঙ্কক থেকে ক্রাবির উড়ান ধরার কথা। হোটেল বুকিং হয়ে গিয়েছে। অগত্যা ক্রেডিট কার্ডে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ব্যাঙ্ককের টিকিট কেটে সপরিবার ওঠেন অন্য সংস্থার উড়ানে।
ব্রজগোপালবাবুর কথায়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে টিকিট কাটেন তিনি। এ বছর ৬ মার্চ যাওয়া, ১৮ মার্চ ফেরা। অক্টোবরে ই-মেল করে এয়ার এশিয়া জানায়, ১ মার্চ থেকে কলকাতা-ব্যাঙ্কক উড়ান বন্ধ করা হচ্ছে। শুরু হয় টাকা ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া। কল সেন্টারে ফোন করায় সংস্থার এক কর্মীই জানান, উড়ান তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে। ৬ মার্চ উড়ান যাবে। তাই ৫ মার্চ বিমানবন্দরে পৌঁছে যান তিনি। পরে কলকাতায় ফিরে টিকিটের ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ব্রজগোপালবাবু। তাঁর কথায়, “মালয়েশিয়ার ওই সংস্থার সঙ্গে মেল চালাচালি হয়। কিন্তু পুরো টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়নি।” ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হওয়ার পরে তাঁকে ফেরত দিয়েছে এয়ার এশিয়া।
উত্তরপাড়ার এক স্কুলশিক্ষক তন্ময় করের পরিকল্পনা ছিল গত বছর ২৯ ডিসেম্বর সপরিবারে ব্যাঙ্কক যাওয়ার। ফেরার কথা ছিল এ বছরের ৫ জানুয়ারি। যাওয়ার আগেই তিনি জানতে পারেন ফেরার উড়ান ২৪ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। তন্ময়বাবুর কথায়, “আমি পিছিয়ে আসি। টিকিট বাতিল করে দিই।” টাকা ফেরতের জন্য এর পর ক্রমাগত মেল চালাচালি হয় তাঁর সঙ্গে বিমানসংস্থার। তন্ময়বাবুর দাবি, বেশ কয়েক বার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য তাঁকে পাঠাতে বলার পরেও টাকা আসেনি। শেষে ২৯ ডিসেম্বর উড়ান ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁকে ফোনে জানানো হয়, উড়ান ধরতে পারলে ধরুন। টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।
বিমানসংস্থা জানাচ্ছে, এমনিতে যাত্রা বাতিল করলে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। যেহেতু মার্চ থেকে ওই উড়ান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয় এবং জানুয়ারি থেকে উড়ান কমানো হয়, তাই তখন ঠিক হয়েছিল টিকিট বাতিল করলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। যাত্রীর ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল। টাকা ফেরত দিতে মাসখানেকের বেশি সময়ও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার আগেই ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে নালিশ জানান। ওই দফতরের মধ্যস্থতায় টিকিটের ২২ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy