এই পোস্টটি ভেঙে পড়েই মৃত্যু হয় তরুণবাবুর ।
নিয়ম ভাঙাটাই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্দারমণিতে। মন্দারমণির সৈকতে যে কোন যান চলাচলের উপর জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে বহাল তবিয়তেই মন্দারমণির সৈকতে পর্যটকদের বিনোদনের নামে অবৈধভাবে প্যারাসেইলিং, বিচ বাইক, ওয়াটার জেট স্কি, প্যারাগ্লাইডিং-সহ নানাআয়োজন চলে আসছে।
সৈকতের উপর বেআইনি ভাবে যান চলাচলে সৈকতের উপকূলীয় বাস্তু তন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণুতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিজ্ঞানী ও গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৪ সালের জুন মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিঘা, মন্দারমণি ও তাজপুর সৈকতে সবরকম যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংশ্লিষ্ট থানাগুলির ওসিদের কাছে নিদের্শিকা পাঠানো হয়। মন্দারমণির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু হোটেল ব্যবসায়ী-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই নির্দেশিকাকে পাত্তা না দিয়েই সৈকতের উপর দিয়ে যান চলাচল থেকে প্যারাসেইলিং, বিচ বাইক, সৈকতের জলে জলক্রীড়ার নামে ওয়াটার স্কি, সব কিছু চলছে।
বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে প্যারাগ্লাইডিংয়ের সরঞ্জাম। রবিবার মন্দারমণিতে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘাকে ‘গোয়া’ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তারপরই দিঘায় সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় আসে মন্দারমণি, তাজপুর। ইতিমধ্যে ২০১২-১৩ সাল নাগাদ মন্দারমণিতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে শুরু হয় প্যারাগ্লাইডিং, প্যারাসেইলিং-এর মতো পরিষেবা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, কোনও প্রশিক্ষক ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই পরিষেবা চালাত সংস্থাগুলি। ছিল না কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা। এমনকী সংস্থাগুলির লাইসেন্স নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে বহুবার। এর আগে দিঘাতে স্নানে নেমে স্পিড বোটের ধাক্কায় জখম হয়েছিলেন এক পর্যটক। মন্দারমণির সৈকতে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয়েছিল দুই পর্যটকের। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলেই দায় এড়িয়েছিল পুলিশ। স্থানীয় মন্দারমণি পুলিশ ক্যাম্প বা রামনগর থানাকে কখনও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কখনও কখনও দিন কয়েকের জন্য পরিষেবা বন্ধ থাকলেও ফের তা চালু হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা জারি রেখেছে সংস্থাগুলি।
রবিবার প্যারাগ্লাইডিং করা অবস্থায় তরুণ ঘোষ (৩৬) নামে পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ক্ষোভ জমেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। স্থানীয় বাসিন্দা মদন জানা বলেন, ‘‘এরকম বহুদিন ধরেই চলছে। পুলিশ শুধু অবৈধ নির্মাণ ভাঙা অভিযানকরে। এসবে পুলিশের নজরই নেই।’’
সৈকতে তখনও রয়েছে রক্তের দাগ, পড়ে রয়েছে তরুণবাবুর ঘড়ি ।
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য তথা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা বারবার রামনগর থানাকে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীও সরাসরি পুলিশ প্রশসনকে দায়ী করে বলেন, “সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশের একাংশের মদতেই সৈকতের উপর এইসব বেআইনি ব্যাপার চলে আসছে। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান উৎকোচ দিয়েই এসব চালিয়ে আসছে। অবিলম্বে সৈকতের উপর যাবতীয় বেআইনি কাজকর্ম বন্ধ করার জন্য জেলার পুলিশ সুপারকে বলব। আগামী দিনে দিঘা মন্দারমণি ও তাজপুর সৈকতে বেআইনি কাজকর্ম রুখতে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ উদ্যোগী হবে।’’
রামনগর থানার ওসি অমিয় ঘোষের কথায়, ‘‘কেউ কখনও এসব বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে না। তাই আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না।’’ কিন্তু সরকারি নিযেধাজ্ঞা না মানার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? উত্তর মেলেনি।
সোহম গুহর তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy