Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Howrah Station

হাওড়া স্টেশন মোবাইল চুরির ‘স্বর্গরাজ্য’! কী ভাবে চুরি? চক্রে কারা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন

হাওড়া জিআরপির অবশ্য দাবি, মোবাইল চুরি এখন অনেকটা কমে গিয়েছে। তবে পাশাপাশিই জিআরপি আধিকারিকদের স্পষ্ট বক্তব্য, মানুষ ‘সচেতন’ না হলে এই চুরি আটকানো যাবে না।

Increase in mobile theft at Howrah station, what is GRP saying

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ১৭:০৭
Share: Save:

গত এক-দেড় মাস ধরেই শোনা যাচ্ছে হাওড়া স্টেশনে মোবাইল চুরির বাড়বাড়ন্তের কথা। মূলত সন্ধ্যার পর অফিস টাইমেই এই ঘটনা ঘটছে। হাওড়া-বর্ধমান মেন, কর্ড, ব্যান্ডেল, তারকেশ্বর, কাটোয়া— প্রায় সব লাইনের ট্রেন থেকেই দেদার মোবাইল চুরি হচ্ছে। সাধারণ যাত্রী তো বটেই, নিত্যযাত্রীরাও হতবাক। এই দেখছেন পকেটে মোবাইল রয়েছে। পরের মুহূর্তেই নেই! লেডিস কামরার সামনের ভিড় থেকেও খোয়া যাচ্ছে মোবাইল। কিন্তু করছে কারা? কী ভাবে হচ্ছে এই চুরি?

কী ভাবে হচ্ছে চুরি?

জিআরপির এক বড়কর্তার বক্তব্য, ‘‘হয়তো ঘোষণা করা হল, ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যান্ডেল লোকাল ছাড়বে। ঘোষণা শুনে বা ডিসপ্লে বোর্ড দেখে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে চলে গেলেন। তখনও হয়তো ট্রেন ঢোকেনি। এর পর হয়তো তারকেশ্বর থেকে ভিড় নিয়ে একটি ট্রেন ওই ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকল। অর্থাৎ, সেটাই ব্যান্ডেল লোকাল হয়ে ছাড়বে। কিন্তু যাত্রীদের নামতে না দিয়ে ওঠার যে হুড়োহুড়ি হয়, সেখানেই মিশে থাকছে মোবাইল চোরেরা। ওই হুড়োহুড়ির সময়েই খোয়া যাচ্ছে মোবাইল।’’

মোবাইল চুরি হচ্ছে হাওড়া স্টেশনের ফোন চার্জ দেওয়ার ‘পয়েন্ট’ থেকে। সেটা কী ভাবে? এই ক্ষেত্রে মানুষের অসচেনতার কথাই বলছেন জিআরপি আধিকারিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, অনেকেই এমন আছেন, যাঁরা মোবাইল চার্জে দিয়ে স্টেশনে চাদর পেতে ঘুমিয়ে পড়ছেন বা অন্যত্র খাবার কিনতে চলে যাচ্ছেন। চোরেরা গোটাটা নজর করেই কাজ সেরে চম্পট দিচ্ছে। এক জিআরপি কর্তার বক্তব্য, ‘‘অনেক সময়েই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা তাদের ধরি। কিন্তু এমনও হয় যে, অনেকে মোবাইল চুরি হওয়ার বিষয়টি খেয়াল করেন পরে। তখন কিছু করার থাকে না।’’

শুধু হাওড়া স্টেশনের মধ্যে নয়। আশপাশের তল্লাটেও মোবাইল চোরেদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি নিত্যযাত্রীদের। এলগিন রোডের একটি নামী প্রসাধনী স্টোরের কর্মী, চন্দননগরের বাসিন্দা দ্বৈপায়ন বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে রাতে যে বাসে ফিরছিলাম, তাতে জানলার ধারে বসে এক জন মহিলা মোবাইল ঘাঁটছিলেন। হাওড়া ব্রিজ পার করার পরে বাস বাঁ দিকে ঘুরতেই মহিলা চিৎকার করেন, তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে কেউ। যদিও সেখানে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারেরা সঙ্গে সঙ্গে তিন জনকে ধরে ফেলেন।’’

কারা রয়েছে চুরির চক্রে?

জিআরপির বক্তব্য, মূলত নিষিদ্ধ নেশা করে, এমন অংশের তরুণেরাই গোটা চক্র চালাচ্ছে। একটা সময়ে হাওড়া স্টেশনের বাইরের বিভিন্ন কোনাখামচিতে ডেনড্রাইটের নেশার রমরমা ছিল। ইদানীং সেটাই হেরোইন এবং গাঁজায় রূপান্তরিত হয়েছে। হাওড়া জিআরপির এক বড়কর্তার কথায়, ‘‘ক্যাপ রোডের ব্রিজের নীচে নেশার ডেরা চলত। হাওড়া জিআরপি এবং গোলাবাড়ি থানার যৌথ অভিযানে তা তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাইরে তা চলছে। তারাই এসে এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে।’’ ওই পুলিশকর্তা আরও বলেন, ‘‘পাতাখোরদের নিয়ে আমাদেরও বিড়ম্বনার শেষ নেই। ওদের ধরে লক আপে রাখা মানে পকেটের পয়সা খরচ হয়ে যাওয়া। পিটিয়েও লাভ হয় না। এক সপ্তাহ হয়তো এই দিকে ঘেঁষে না। আবার শুরু করে। ফলে মানুষ একটু সচেতন না হলেই এই সমস্যা একেবারে নির্মূল হওয়া সম্ভব নয়।’’

হাওড়া জিআরপির অবশ্য দাবি, মোবাইল চুরি এখন অনেকটা কমে গিয়েছে। তবে জিআরপি আধিকারিকদের স্পষ্ট বক্তব্য, মানুষ ‘সচেতন’ না হলে এই চুরি আটকানো যাবে না। কখন, কী ভাবে চুরি হচ্ছে তাঁরাও জানেন। কিন্তু তার জন্য মূলত মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন তাঁরা। হাওড়া জিআরপির সুপার পঙ্কজ দ্বিবেদীর বক্তব্য, ‘‘যাঁদের মোবাইল খোয়া যায়, তাঁরা অভিযোগ করলে আমরা পদক্ষেপ করি। মাসে গড়ে ৫০০-৫৫০টি মোবাইল উদ্ধারও করি। তবে মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক সময়ে তাঁরা জিআরপিকে জানান না। তাঁদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Station Mobile Theft GRP Mobile Thief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy