Advertisement
E-Paper

বিলুপ্তপ্রায়

নিজ ধর্মসমাজের রক্ষণশীল বৃত্ত অতিক্রম করে কী ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, পোপ ফ্রান্সিস বারংবার তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৪৭
Share
Save

মরণোত্তর স্মৃতিচারণে সাধারণত প্রয়াত ব্যক্তির প্রশংসা ও গুণকীর্তনই করা হয়। তবে পোপ ফ্রান্সিস কিংবা হোর্হে মারিয়ো বের্গোলিয়োর ক্ষেত্রটি অন্য রকম। ২১ এপ্রিল তাঁর মৃত্যুসংবাদ আসার পর থেকে বিশ্বের প্রায় সমস্ত প্রচারমাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে প্রায় একই ভাবে: এক ব্যতিক্রমী, প্রগতিমনস্ক, উদারচেতা ধর্মনেতা হিসাবে। বলতেই হবে, আজকের ক্রমশ বিভাজিত, তিক্ত, আক্রমণসর্বস্ব পৃথিবীতে এ এক অত্যন্ত বিরল ঘটনা। আর কোনও নৈতিক বা রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে দেশে দেশে এই সম্মেলক শোকজ্ঞাপন শোনা যেত বলে মনে হয় না। পোপ ফ্রান্সিস জীবদ্দশায় যত না ইতিহাসের চরিত্র ছিলেন, মৃত্যুপ্রহরে তিনি দেখিয়ে গেলেন, সত্যিই যাঁরা একান্ত মনে মানুষের দুর্দশা কিংবা দুরবস্থা মোচনের কথা ভাবেন, আজও সকলের কাছে তাঁরা শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। অনেক আদর্শগত দূরত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। এ একটা বড় কাজ বইকি।

নিজ ধর্মসমাজের রক্ষণশীল বৃত্ত অতিক্রম করে কী ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, পোপ ফ্রান্সিস বারংবার তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সমকামী থেকে শুরু করে নারী শিশু উদ্বাস্তু, সমস্ত রকম প্রান্তিক ও দুর্বল জনগোষ্ঠী বিষয়ে তিনি সরব থেকেছেন। এক ‘বড়’ ধর্মদৃষ্টি ছিল তাঁর, যা তাঁকে অন্য মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছিল, অন্য মানুষের জীবনধারা চয়ন বা নির্বাচনকে সম্মান করতে শিখিয়েছিল, এবং যাঁরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিষ্পেষণের লক্ষ্য, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস ও সহযোগিতা জোগাতে শিখিয়েছিল। ১৯৬০ সালের দ্বিতীয় ভ্যাটিকান কাউন্সিলের বাণীটিকে তিনি অনেক দিন পর ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন— তাঁর পথটি ছিল, ‘হু অ্যাম আই টু জাজ’ বা ‘অন্যের বিচার করার আমি কে’? অযথা বিচার ও মতদানের পরিবর্তে তিনি পাশে দাঁড়ানোর কাজটিকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। আজকের পৃথিবীতে যখন সব ধর্মেরই সঙ্কীর্ণ ও বিদ্বেষপ্রবণ রূপ সমানে জিতে যাচ্ছে, মানুষ ক্রমশই অসহিষ্ণু এবং বিচারসর্বস্ব হয়ে উঠছে, সেখানে রোমান ক্যাথলিক চার্চের মতো সর্বমান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে দাঁড়িয়ে পোপ ফ্রান্সিস লাগাতার এই বার্তা দিয়ে এক জরুরি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন।

গত জানুয়ারি মাসে সিস্টার সিমোনা ব্রামবিলাকে প্রথম বড় কোনও ভ্যাটিকান অফিসের শীর্ষপদের জন্য বেছে নিলেন পোপ ফ্রান্সিস। মনে রাখতে হবে সারা পৃথিবীতে ছয় লক্ষের বেশি ‘নান’ থাকলেও কোনও মহিলা এত দিন এই গুরুত্বে বৃত হননি। চার্চের দুর্নীতি দূরীকরণ ও আধুনিকীকরণ ছিল তাঁর লক্ষ্য, যদিও এ কাজ যে কত কঠিন, তা বার বার তিনিই বলেছেন। ‘দাঁতখড়কে দিয়ে মিশরের স্ফিংক্স’-কে পরিষ্কার করার মতো অসম্ভব ব্রত বলে মনে হয়েছিল তাঁর, এই কাজকে। তাও হাল ছাড়েননি, বলেছেন যে চার্চের কাজটাকে যদি হাসপাতালের মতো করে দেখা যায়, তা হলেই যথার্থ ধর্মপালন হবে— অর্থাৎ দুর্গত ও দুঃস্থের প্রতিপালনই হবে প্রধান কাজ, নিজের পোষণ, রক্ষণ ও প্রসারের জন্য ব্যস্ত হতে হবে না। এর পরও লক্ষ্যসাধন হয়নি নিশ্চয়। কিন্তু ব্যর্থতাতেই কোনও দর্শনের গুরুত্ব কমে না। ধর্মের প্রকৃত অর্থ যে সহমর্মিতা ও করুণা— এই গোড়ার কথাটি মেনে চলার মতো ‘ধার্মিক’ই বা আজ কত জন অবশিষ্ট?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pope Francis Religion Harmony vatican church

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}