Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Pabitra Sarkar

‘ভাষা চর্চায় নীরেনদার অবদান বাঙালির পক্ষে ভোলা সম্ভব হবে না’

নির্ভুল এবং নিঁখুত লেখার ভাষা নির্মাণ করতে হলে, অনেক কিছু জানতে হয়। বানান, শব্দের প্রয়োগ ইত্যাদি।কঠিন শব্দকেও কী ভাবে সহজের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, যার ফলে শৈলিতে একটা ঢেউ তৈরি হয়, এটা নীরেনদা ছাড়া সত্যি সত্যি আর কেউ পারতেন না।

পবিত্র সরকার। ইনসেটে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

পবিত্র সরকার। ইনসেটে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

পবিত্র সরকার
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৪৪
Share: Save:

নীরেনদাকে শেষ বারের মতো দেখে এই হাসপাতাল থেকে বেরোলাম। একটা মানুষের মধ্যে যে এতগুলো গুণ থাকতে পারে, ওঁর সঙ্গে না মিশলে কখনও বুঝতেই পারতাম না।

কবিতা-ছড়ার পাশাপাশি তিনি অসাধারণ বাংলা গদ্য লিখতেন। সব মানুষের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে কী ভাবে কথা বলতে হয়, সেটাও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন।

নির্ভুল এবং নিঁখুত লেখার ভাষা নির্মাণ করতে হলে, অনেক কিছু জানতে হয়। বানান, শব্দের প্রয়োগ ইত্যাদি।কঠিন শব্দকেও কী ভাবে সহজের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, যার ফলে শৈলিতে একটা ঢেউ তৈরি হয়, এটা নীরেনদা ছাড়া সত্যি সত্যি আর কেউ পারতেন না। কারণ, ভাষাটাকে তিনি স্রষ্টার জায়গা থেকে তো বটেই ভাষা-ভাবুকের দিক থেকেও সৃষ্টি এবং ব্যবহার করতেন।

বাংলা ভাষা নিয়ে তাঁর নানা ধরনের চিন্তা ছিল। ছিল ভাষাসংক্রান্ত নানান কাজকর্মও। সেটা আশির দশকের গোড়ার দিক। নীরেনদা তখন আনন্দমেলার সম্পাদক। কিছু দিন আগেই শঙ্খ ঘোষ তাঁর অনুরোধে কুন্তক ছদ্মনামে ‘ভাষার খেলা’ লিখেছেন। আমাকে নীরেনদা বললেন, ছোটদের জন্য লিখতে। বিষয়টাও বলে দিলেন। কী ভাবে বাংলা উচ্চারণ করতে হবে, সেই বিষয়েই প্রকাশিত হল ‘বাংলা বলো’।এ সব লেখা তিনি ভেবে আমাদের দিয়ে লেখাতেন। তাঁর নির্দেশেও আমরা বাংলা ভাষার নতুন নতুন কাজ করতে পেরেছি।

আরও পড়ুন: ‘সিগারেট-চা দিয়ে বসিয়ে আমাকে তালাবন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন’

পরে নীরেনদা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি হয়েছিলেন। তখন বেশ কয়েকটা ভাল ভাল অভিধান বেরিয়েছে। সবগুলোর প্রুফ নীরেনদা নিজে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, যত্ন করে দেখে কোন শব্দ অভিধানে দরকার নেই, আর কোন শব্দ যোগ করার প্রয়োজন— সেগুলো তিনি আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশ দিতেন। খানিকটা নেপথ্যে থেকে কাজ করলেও বাংলা ভাষা নিয়ে তার কাজ কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

আমিও বাংলা ভাষা এবং বানান নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু, নীরেনদার সঙ্গে কখনও মতের অমিল হয়নি। তিনি যখন আনন্দবাজারের জন্য বানান সংক্রান্ত বই সম্পাদনা করেছেন, আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বানান নিয়ে আমার যুক্তি মেনেও নিয়েছেন।

আরও পড়ুন: কাঁধে হাত রেখে ওই নিরুচ্চার হাসির দাম মেটাতে পারবে না কবিতাও

কবি হিসাবে নীরেনদাকে মনে রাখবে বাঙালি। কিন্তু, বাংলা ভাষা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের তো বাঙালি তেমন করে চেনে না। বিশেষ খেয়ালও রাখে না তারা। তবে, নীরেনদা গোটা কাজটা এমন পর্যায়ে গিয়ে করেছেন, তাতে বাঙালি তাঁকে এই ক্ষেত্রেও মনে রাখবে।

আরও পড়ুন: ‘পিতৃস্নেহে আগলে রেখেছিলেন, সেই আশ্রয়টাই আমার চলে গেল’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE