—প্রতীকী চিত্র।
শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী তৃণমূল সদস্য শেখ রমজান এ বার পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী। ‘দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত’ গড়ার ডাক দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি বলছেন, জমি ও মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করায় দল প্রার্থী করেনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রার্থিপদ বিক্রি করা হয়েছে। খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগড়ি পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী সুবেশ মান্না তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে বলছেন, দুষ্কৃতী এবং দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দলকে বাঁচাতেই তাঁর লড়াই। প্রার্থিপদ বিক্রির অভিযোগ তুলছেন।
দলের প্রতীক না পেয়ে হুগলিতে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন রমজান, সুবেশের মতো এমন অনেক তৃণমূল কর্মী। তাঁদের একাংশ প্রচারে গিয়ে দলের দুর্নীতির কথাই বলছেন। ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থীদের সঙ্গে এই ‘গোঁজ’প্রার্থীদের লড়াই নিয়ে ভোটের ময়দান সরগরম। বিড়ম্বনায় পড়ছেন নির্দলদের প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থীরা। অস্বস্তি দলেও। অনেক জায়গায় ‘গোঁজ’ প্রার্থীরা প্রতিপক্ষকে বেগ দিতে পারেন বলে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক মহলের ধারণা। লিফলেট বিলি করে তাঁরা যাতে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েন, সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতে কাজ না হলে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আম-জাম-কাঁঠাল প্রতীকের প্রার্থীরা যাই বলুন, মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। নির্দল হিসাবে এখনও যাঁরা লড়ে যাচ্ছেন, দলের দরজা তাঁদের জন্য চিরকালের মতো বন্ধ।’’ তবে ‘গোঁজ’দের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন, দল ব্যবস্থা নিলেও, ‘কুছ পরোয়া নেহি’।
এর মধ্যেই বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন, দলের প্রতীক না পেলেও তাঁর অনুগামী প্রার্থীদের হাত ছাড়বেন না। বিধায়কের বক্তব্য, বিষয়টি নির্দলদের হয়ে প্রচারের নয়। তিনি ২৫ শতাংশ টিকিট পেয়েছেন। তাঁদের হয়েই প্রচার করবেন। ‘টাকা দিয়ে টিকিট কেনা দুর্নীতিগ্রস্ত’ প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে যাবেন না।
গোঘাট পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান মনীষা সেন, কামারপুকুর পঞ্চায়েতের মোহরচাঁদ আহমেদ জানান, দলের একাংশের দুর্নীতি এবং জনবিরোধী কাজের কথা প্রচারে বলছেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জনপ্রতিনিধি যাচাইয়ের কথা বলা হচ্ছে। চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ‘গোঁজ’ ৭ জন। তাঁরা প্রচারে বলছেন, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য পেতে আমাদের ভোট দিন।’’ বলাগড়ের ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর ২ পঞ্চায়েতের ২০৯ নম্বর বুথের ‘গোঁজ’ প্রার্থী দীপকুমার দাস বলেন, ‘‘বিদায়ী প্রধান এখানে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেননি।’’
নির্দলের প্রচার অস্বস্তিতে ফেলেছে, তৃণমূল প্রার্থীদের একাংশ মানছেন। সুবেশের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ সানকি বিদায়ী উপপ্রধান। তার আগে প্রধান ছিলেন। তিনি বলছেন, ‘‘গোঁজদের বিভ্রান্তিকর প্রচারে খুবই খারাপ পরিস্থিতি। দলকে জানিয়েছি।’’ পিয়ারাপুরে রমজানের বিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী মদন বাগের দাবি, ‘‘এখানে কোনও জমি ও মাটি মাফিয়া নেই। অভিযোগের ভিত্তিও নেই। নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দলে জমা পড়েছিল।’’
বহু ক্ষেত্রেই তৃণমূলের প্রকল্পকেও প্রচারের হাতিয়ার করছেন ‘গোঁজেরা’। গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি অনিমা কাটারি ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ প্রতীকে নির্দল। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, খাদ্যসাথী প্রভৃতি প্রকল্প রূপায়নে নিজের অবদানের কথা তিনি প্রচার করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, তৃণমূলের মিতা পণ্ডিত বলেন, ‘‘অনিমাদি যেটা ভাল বুঝছেন, করছেন। তবে ওঁর প্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না।’’ অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূলের ‘সার্বিক উন্নয়ন’ প্রচার করছেন সুবেশও।
দলের প্রতীক না পেয়ে সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান দীপঙ্কর ঘোষ নির্দল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জয় অবধারিত। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষ আমার কাজ দেখেছেন। গোবর গ্যাসের প্লান্ট তৈরির ভাবনা আছে। মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy