রাজ্যে এখনও একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের বরাদ্দ অমিল। পঞ্চায়েত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নে সেই কাজ বন্ধ থাকায় এখন একমাত্র ভরসা কেন্দ্রীয় (পঞ্চদশ) ও রাজ্য (পঞ্চম) অর্থ কমিশন তহবিলের কাজগুলি। সম্প্রতি এই দুই তহবিলের কাজেও নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তা রুখতে এ বার পঞ্চায়েত ও ব্লক স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ পরিদর্শক দল গঠন করে ধারাবাহিক পরিদর্শনের নির্দেশ দিল রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। সেই মতো হুগলিতে যৌথ পরিদর্শন দল গঠন করে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
সোমবার জেলাগুলিতে ওই নির্দেশ পাঠান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সচিব পি উলগানাথান। এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি জেলাগুলিতে চিঠি পাঠিয়ে তিনি ‘সতর্ক’ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের রাজ্যস্তরের আধিকারিকদের পরিদর্শনে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্পে দরপত্র ডাকা-সহ নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। কঠোর ভাবে সরকারি মানদণ্ড অনুসরণ করার নির্দেশও দেন তিনি।
হুগলি জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আর্থ কমিশনের কাজে ক্ষেত্রে অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকে রূপায়ণ পর্যন্ত প্রতি স্তরে সরকারি নির্দেশিকা বজায় রেখে স্বচ্ছতা এবং গুণমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার বেশি বাজেটের কাজে ব্লক তথা পঞ্চায়েত সমিতির এক জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক এবং পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ প্রকল্পের (আইএসজিপি) অধীন এক জন কর্মী ওই পরিদর্শক দলে থাকছেন। দলটি প্রকল্প পরিদর্শন পরিচালনার পরের দিনই বিডিওর কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। পঞ্চায়েতও নির্ধারিত পোর্টালে তা দেখতে পারবে। বিডিও পরিদর্শক দলের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ত্রুটি সংশোধন বা পঞ্চায়তেকে কাজের বিল মেটানোর অনুমতি দেবেন।
প্রকল্পের বরাদ্দ ২ লক্ষ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে ঠিকাদারকে টাকা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক এবং আইএসজিপি কর্মীকে যৌথ পরিদর্শন করতে হবে। একই সঙ্গে যৌথ কমিটিগুলিকে দেখতে হবে রূপায়িত প্রকল্পগুলির মাধ্যমে জনকল্যাণমুখী এবং টেকসই সম্পদ তৈরি হচ্ছে কিনা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে কিনা, ইত্যাদি। পরিদর্শনের দু’দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন পোর্টালে আপলোড করতে হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরে বিডিওকে দু’দিনের মধ্যে সেই কাজ ত্রুটিপূর্ণ নাকি সরকারি নির্দেশিকা মতোই হয়েছে সে ব্যাপারে পঞ্চায়েতকে জানাতে হবে। কোনও ভাবেই যৌথ পরিদর্শনে পাঁচ দিনের বেশি সময় নেওয়া যাবে না।
যৌথ পরিদর্শনের মাপকাঠিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পরিকল্পনাটি পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় ছাড়পত্র পেয়েছে কিনা। এ ছাড়া, দরপত্র ডাকার ক্ষেত্রে যথাযথ বিজ্ঞাপন, দরপত্রদাতার নথি-সহ অন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে তুলনামূলক বিবৃতি, চুক্তিপত্রের সময়সীমা, সরঞ্জামের উপযুক্ত পরীক্ষার নথি ইত্যাদি দেখতে হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)