এই বাড়িতেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। —ফাইল চিত্র।
মোবাইলের পর্দায় ছবি দেখেই মহিলা বললেন, ‘‘এই ছেলেটা এখানেই থাকত। দু’-একবার মুখোমুখি হয়েছে। কথা হয়নি।’’ ‘ছেলেটা’ খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে (২০১৪) অন্যতম অভিযুক্ত কওসর শেখ ওরফে বোমা মিজান। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তাকে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করেছে জেনে মঙ্গলবার এক বার ঢুঁ মারা গেল খাগড়াগড়ের উল্টো দিকের রাস্তা ধরে বাবুরবাগে কওসরের ‘ডেরা’য়। সেখানে যে পাকাবাড়িতে ভাড়া নিয়েছিল কওসর, তার চত্বরের মধ্যেই টালির ঘরে ভাড়া থাকে দু’টি পরিবার। মহিলা তেমনই এক পরিবারের সদস্য।
‘ডেরা’য় কওসরের ছায়াসঙ্গী ছিল হবিবুর, যার খোঁজ এখনও পায়নি এনআইএ। সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, “হবিবুর আসলে কে, সেটা নিয়ে এখনও ধন্দ রয়েছে। আমাদের ধারণা, কওসরের ঘনিষ্ঠ কোনও আত্মীয় হচ্ছে হবিবুর।’’ তাঁর দাবি, স্থানীয় এক জনের মাধ্যমে বাবুরবাগের বাড়িটি ভাড়া নেয় হবিবুর। তিন তলা বাড়ির দোতলায় তিন জন মহিলা ও দু’জন পুরুষ থাকত। প্রায় দু’মাস তারা বাবুরবাগে ছিল। বাবুরবাগের আগে বর্ধমান শহরের হাটুদেওয়ানের একটি বাড়িতেও কওসরেরা কিছু দিন ছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা।
বাবুরবাগের ওই বাড়ির মালিকের ভাগ্নে উমর হোসেন বলেন, “ওরা কারও সঙ্গে মিশত না। কথা বলতে গেলে বিরক্ত হত। বলত, ওরা নাকি নার্সিংহোম-হাসপাতালে ছুরি-কাঁচি সরবরাহ করে।’’ বাবুরবাগের কিছু বাসিন্দার দাবি, লাল রঙের, একটি নম্বরবিহীন মোটরবাইকে চেপে ঘুরে বেড়াত কওসর। ঘাড়ে কালো রঙের ব্যাগ থাকত তার। তার সঙ্গী মহিলারা সব সময় বোরখা পরে থাকত। খাগড়াগড়ের বাড়ির মালিক হাসান চৌধুরীও জানাচ্ছেন, বিস্ফোরণের আগে বেশ কিছু দিন নিয়মিত বিকেলের দিকে তাঁর বাড়িতে মোটরবাইক নিয়ে আসত কওসর।
বাবুরবাগের বাড়ির ভাড়াটে সলমা বিবি, হেনা বিবিদের স্মৃতিচারণ, ‘‘সে দিন দুপুরে (২ অক্টোবর, ২০১৪) ওদের ঘরে মাংস রান্না হচ্ছিল। আচমকা সব ফেলে চলে গেল ওরা।’’
বিস্ফোরণের পরে ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা বীরভূমের নানুরে কওসরের শ্বশুরবাড়ির কথাও জেনেছিলেন। মঙ্গলকোটের শিমূলিয়া মাদ্রাসায় নানুরের নিমড়া মাঠপাড়ার লক্ষ্মী ওরফে রুম্পা ওরফে জিন্নাতুরের বিয়ে হয়েছিল কওসরের সঙ্গে। পাত্রীর দাদা কদর গাজি কওসরের অন্যতম ঘনিষ্ঠ অনুগামী। এ দিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সব দরজায় তালা। প্রতিবেশী রশিদা বিবি, হামশেদ শেখেরা জানান, খাগড়াগড়-কাণ্ডের পর থেকে বাড়িতে একাই থাকেন কদরের বৃদ্ধা মা শরিফা বিবি। তবে এ দিন দুপুরের পর থেকে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। সামান্য দূরে নিমড়া দক্ষিণপাড়ায় বাড়ি খাগড়াগ়ড়-কাণ্ডে আর এক অভিযুক্ত মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন ওরফে শাহিনের। তুহিনকে গত শুক্রবার কেরলে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। তুহিনের বাবা সিরাজুল রহমান এ দিন বলেন, ‘‘ছেলে যদি অপরাধ করে থাকে, তা হলে ওর যা হওয়ার হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy