করোনা সংক্রমণের শঙ্কা থাকলেও দূরত্ববিধি নিয়ে থোড়াই কেয়ার। সোমবার। হাওড়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় পাঁচ মাস পর ফের চালু হল লোকাল ট্রেন পরিষেবা। গত কাল, অর্থাৎ রবিবার থেকে এই পরিষেবা চালু হয়। তবে সোমবার যে হেতু সপ্তাহের শুরু, তাই এ দিন ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে হাওড়া-শিয়ালদহ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে। দূরত্ববিধি মানার কোনও ছবি অন্তত সপ্তাহের প্রথম দিন চোখে পড়েনি। ট্রেনের কামরায় ভিড়, গেটে ভিড়। ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি—বর্ধমান থেকে বনগাঁ, খাগড়াঘাট থেকে খড়্গপুর—সর্বত্রই এক ছবি। এই দৃশ্য যেমন চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে, তেমন স্বস্তির দিক হকারদের জীবিকা ফিরে পাওয়া। একই সঙ্গে, রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হতে না হতেই রেল অবরোধের সাক্ষী থাকল বাংলা। সব মিলিয়ে, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পর এটাই বহুবর্ণ কোলাজ।
স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ দিতে হবে, এই দাবিতে রেল অবরোধ হল সোমবার। ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখায় ইসলাম পাড়া হল্ট স্টেশনে। সকাল ৮.২০ মিনিটের ডাউন কাটোয়া লোকাল কে-৬ বেশ কিছু ক্ষণের জন্য আটকে থাকে। পরে ব্যান্ডেল জিআরপি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ায় দৃশ্যতই খুশি হকাররা। শেওড়াফুলি স্টেশনের হকাররা যেমন ট্রেনের সামনে নারকেল ফাটিয়ে পুজো করলেন। লোকাল ট্রেন যদি শহরতলির জীবনরেখা হয়, তবে হকারদের জীবিকা নির্বাহ হয় লোকাল ট্রেনের উপর নির্ভর করে।
দীর্ঘদিন ট্রেন বন্ধ থাকায় হকারদের রোজগারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন হকাররা। ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি তাঁরা। সোমবার সকালে শেওড়াফুলির হকার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নারকেল ফাটিয়ে ধূপ, মালা দিয়ে পুজো করা হল ট্রেনকে। হকাররা জানান, আর যেন আগের মতো পরিস্থিতি না হয়। এর জন্য তাঁরা ট্রেনে ওঠার সময় যাত্রীদের মাস্ক দিলেন এবং স্যানিটাইজার স্প্রে করলেন।
হাওড়া ডিভিশনে পূর্ব রেলের ৪৮৮টি ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ১৯১টি ট্রেন চলা শুরু হয়েছে সোমবার। ট্রেন চালু হতেই সকাল থেকে দেখা গেল হাওড়া স্টেশনের পুরনো ছবি। অফিস টাইমে উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনের কামরাতেও ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে সফর করছেন যাত্রীরা। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে নিরাপদ দূরত্ববিধি বজায় রাখার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। অনেককে মাস্ক না পরেও সফর করতে দেখা গেল। অন্য দিকে, ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন চালানোর যে ঘোষণা করা হয়েছিল, তা যে কার্যত সম্ভব নয় সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন যাত্রীরা। রুটি রুজির টানে বেরোতেই হবে! তাই ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। তবে যাত্রীদের একাংশের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগও চোখে পড়েছে। রেল কিংবা প্রশাসনও স্বাস্থ্য বিধির বিষয়টি পরোক্ষ ভাবে যাত্রীদের উপর ছেড়ে দিয়েছে।
বেশি সংখ্যক ট্রেন চললে ভিড় কমতে পারে বলে যে অনুমান করা হয়েছিল, সেই ধারণাকে প্রথম দিনই ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছে বনগাঁ লোকাল। প্রতিটি ট্রেন চালু হলেও ভিড় ছিল আগের মতোই। বিশেষ করে বনগাঁ থেকে মাঝেরহাট যাওয়ার লোকাল, যা বরাবরই ভিড় ট্রেন হিসেবে পরিচিত, সেই ট্রেনে সোমবারও পা রাখার জায়গা ছিল না। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন কী ভাবে করোনা বিধি মেনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব?
সোমবার শিয়ালদহ দক্ষিণের ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর, বারুইপুর ও ক্যানিং এমনকি বজবজ লোকালেও ঠাসাঠাসি করে মানুষ উঠেছিলেন। অনেক জায়গায় করোনাবিধি না মেনে ট্রেনে উঠতে দেখা গিয়েছে যাত্রীদের। রেল পুলিশের নজরদারি থাকলেও যাত্রীরা নিয়ম মানেননি বলে অভিযোগ। বারুইপুরের এক ট্রেন যাত্রী সুভাষ দাস বললেন, ‘‘অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন যাওয়ার কথা। কিন্তু কে কাকে আটকাবে! এত দিন পর ট্রেন চালু হয়েছে। কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া সবার।’’ নিয়ম না মানায় করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করে অসন্তুষ্ট যাত্রীদের একাংশ। যেমন ডায়মন্ড হারবারের মানসী মণ্ডল বলেন, ‘‘লোকাল ট্রেন চালু হল বটে, কিন্তু বেশির ভাগ যাত্রীই নিয়ম মানছেন না। বাদুড়ঝোলা ভিড়ে করোনার সংক্রমণ বাড়বে। আমাদের তো রোজ যেতে হয়। করোনা নিয়ে তাই দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’’
হুগলির উপর দিয়ে ব্যান্ডেল, নৈহাটি, কাটোয়া, বর্ধমান মেন এবং কর্ড, তারকেশ্বর-আরামবাগ শাখায় ট্টেন চলে। ঠিক করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগের মতো। নৈহাটি-রানাঘাট-কৃষ্ণনগরেও একই ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy