পুরভোটের প্রচার নিয়ে শহর জুড়ে হইচই। পুর-পরিষেবা নিয়ে বিপুল তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু প্রতি দিন যাঁরা নাগরিকদের পরিষেবা দেন, কলকাতা পুরসভার সেই বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মী, গ্রিন পুলিশের প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) টাকা ঠিক মতো জমা পড়ছে না। এর কারণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রভিডেন্ট ফান্ড কতৃর্পক্ষ। পুর-কর্তৃপক্ষের জবাব না পেয়ে তাঁরা এ বার তদন্ত শুরু করেছেন এ নিয়ে। অভিযোগ, প্রায় হাজার চারেক কর্মীর পিএফের টাকা জমা পড়ছে না ঠিক মতো। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, কেউই পিএফ থেকে বঞ্চিত হবেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন এমন হল, নতুন পুরবোর্ড গঠনের পরে তা দেখা হবে।’’
অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মীদের পিএফের ব্যাপারে পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি চেয়েও না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ রিজিওনাল পিএফ কর্তৃপক্ষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুর-কমিশনার খলিল আহমেদকে এক চিঠি পাঠিয়েছিলেন। অ্যাসিস্টেন্ট পিএফ কমিশনার ইউ কে সামন্ত তাতে লিখেছেন, ‘পুর কর্তৃপক্ষ ঠিক মতো তথ্য না দেওয়ায় বিপুল সংখ্যক কর্মী তাঁদের বিধিবদ্ধ সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ চিঠিতে তিনি আরও বলেছেন, পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া না গেলে, যাঁদের ক্ষেত্রে বৈধ নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে, শুধু তাঁদের হিসেব রাখা হবে। বাকিদের পিএফের হিসেব আর রাখা হবে না।
পুরভোটের আগে যখন কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শহর জুড়ে নীল-সাদা রং করা, রাস্তা ও ফুটপাথ সারানো, পার্ক সাজানো হচ্ছে, তারই মধ্যে পিএফ বন্ধের আশঙ্কায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অস্থায়ী কর্মী, ঠিকা কর্মী ও গ্রিন পুলিশদের একাংশে। পুর-পরিষেবার একটা বড় অংশই সামলান এই অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে যেমন পুরসভার জঞ্জাল সাফাই, পাম্পিং স্টেশন বা শ্মশান কর্মীরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন জনা চল্লিশ চিকিৎসক ও কয়েকশো অ্যাকাউন্টটেন্ট। আর রয়েছেন এক হাজারের বেশি গ্রিন পুলিশ।
এ ব্যাপারে মেয়রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা করায় পিএফ কমিশনার বিস্তারিত জানতে চেয়ে পুর-কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন।’’ মেয়রের দাবি, ‘‘অনেক অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই পিএফের টাকা মার যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।’’ মেয়রের হিসেবে, পিএফ জমা না-পড়া নিয়ে যারা মামলা করায় পিএফ কমিশনার চিঠি দিয়েছেন, তাদের সংখ্যা বেশি নয়। মেয়র বলেন, ‘‘যদি বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা তাদের নিয়োগ করা ঠিকা কর্মীদের পিএফ জমা না দেয়, তা হলেও পুর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’’
সিটু অনুমোদিত ঠিকা কর্মীদের ইউনিয়নের নেতা রতন ভট্টাচার্যর দাবি— জঞ্জাল বিভাগ, নিরাপত্তা কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মীদের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এদের বড় অংশের পিএফের টাকাই জমা পড়ছে না।’’
কলকাতা পুলিশের আওতায় হাজারখানেকের বেশি গ্রিন পুলিশ কাজ করেন। তাঁদের ভাতা দেয় পুরসভা। মেয়রের দাবি, ‘‘গ্রিন পুলিশের ক্ষেত্রে ভাতার টাকা কলকাতা পুলিশকে দিয়ে দিয়েছে পুরসভা।’’ তাহলে কি পুলিশ তা থেকে পিএফের টাকা কেটে জমা দিচ্ছে না? এই প্রশ্নের জবাব দেননি মেয়র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy