Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফরজানাকে মারধরের নালিশ, কোন্দল প্রকট দলে

পুরভোটের ফল প্রকাশের পরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। দাবি করেছিলেন, তিনি অন্তর্ঘাতের শিকার হয়েছেন। এর দু’দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার বামেদের ডাকা ধর্মঘটের দিন তৃণমূলেরই কিছু কর্মী তাঁকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ তুললেন কলকাতা পুরসভার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম। কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। দায়ের হয়েছে পাল্টা অভিযোগও।

হাসপাতালে আহত ফরজানা আলম। — নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে আহত ফরজানা আলম। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

পুরভোটের ফল প্রকাশের পরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। দাবি করেছিলেন, তিনি অন্তর্ঘাতের শিকার হয়েছেন। এর দু’দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার বামেদের ডাকা ধর্মঘটের দিন তৃণমূলেরই কিছু কর্মী তাঁকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ তুললেন কলকাতা পুরসভার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম। কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। দায়ের হয়েছে পাল্টা অভিযোগও।

চল্লিশোর্ধ্ব ফরজানাকে প্রথমে পার্ক সার্কাসের এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভর্তি করা হয় দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউয়ে। নার্সিংহোমে থাকাকালীন তিনি বলেন, ‘‘পাম অ্যাভিনিউয়ের পার্টি অফিসে মাখনলাল দাস, সেলিম ও তাদের শাগরেদরা আমাকে মেরেছে। চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে মাথা ঠুকে দিয়েছে। বুকে-পিঠে সমানে ধাক্কা মেরেছে।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ফরজানার মাথা ও বুকের আঘাত বেশ গুরুতর। মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান হয়েছে। বুকের আঘাতের কারণে ওঁর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাই অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।

কারা তাঁকে এ ভাবে নিগ্রহ করল?

ফরজানা বলেন, ‘‘ওরা সব আরএসপি থেকে তৃণমূলে ঢুকেছে। দলে ঢুকে অন্তর্ঘাত করে আরএসপি-কে ভোট দিয়েছে। ওদের জন্যই ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে আমি হেরেছি।’’ অন্য দিকে মাখনলালের দাবি, ফরজানাই এ দিন শ’দেড়েক লোক নিয়ে পার্টি অফিসে ঢুকে তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর করেন। এ ব্যাপারে কড়েয়া থানায় তিনিও অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তৃণমূল নেতাদের একাংশ মনে করছেন, পুরভোটে বড় জয়ের পরেও অন্তর্দলীয় কোন্দল এ ভাবে প্রকাশ্যে এসে পড়াটা দলের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। কিছু নেতা হাবে-ভাবে এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফরজানা ইতিমধ্যে দলে বেশ কোণঠাসা। ফরজানার পাশে দাঁড়ানো দূরে থাক, তাঁরা ঘটনাটিকে ‘সাজানো’ আখ্যা দিতেও কসুর করছেন না।

যেমন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যাঁর কথায়, ‘‘ফরজানা মার খাননি। বরং যাঁর বিরুদ্ধে ওঁর অভিযোগ, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেই তৃণমূল ব্লক প্রেসিডেন্ট মাখনলাল দাসকে তিনিই মারধর করেছেন।’’ সুব্রতবাবু জানান, পুরো বিষয়টি সম্পর্কে তিনি দল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবহিত করেছেন। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’’

ফরজানা অবশ্য মাখনলালের দিক থেকে অভিযোগের আঙুল সরাতে নারাজ। ‘‘আমাকে মারতে-মারতে মাখনরা বলছিল, আপনি হেরে গিয়েছেন। হেরে যাওয়া লোকের এখানে থাকার দরকার নেই। রাজাবাজারে চলে যান।’’— ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন তিনি। মাখনলালদের ‘লাল তৃণমূল’ তকমা দিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই চক্রান্ত মমতাদিদির বোঝা উচিত। আমরা পুরনো তৃণমূল। সুখে-দুঃখে দলের পাশে থাকব। ওরা সুখের দিনে দলে ঢুকেছে।’’ কিন্তু কলকাতার বেশ কিছু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের ফল কেন আশানুরূপ হল না?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে বিদায়ী ডেপুটি মেয়র বলেন, ‘‘ববি হাকিম আর অন্য নেতারা ভাবুন, কেন ফল খারাপ হয়েছে।’’

মাখনবাবু আবার ফরজানার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘দলবল নিয়ে পার্টি অফিসে ফরজানাই চড়াও হয়েছিলেন। মহিলা বলতে থাকেন, সুব্রত বক্সী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, এমনকী খোদ মমতাও নাকি ওঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন!’’ মাখনবাবুর দাবি, ফরজানার দলবল তাঁদের পার্টি অফিস থেকে বার করে দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। তখন তাঁরা দলের স্থানীয় সমর্থকদের ডেকে পাঠান। দু’পক্ষে ধস্তাধস্তি হয়।

এ দিকে এ দিন রাতেই তৃণমূল নেতাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে এক নির্দল প্রার্থীর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে। তৃণমূল ছেড়ে নির্দল হিসেবে পুরভোটে লড়েছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মোহন গুপ্ত। স্থানীয় তৃণমূল নেতা গৌতম ভদ্রের অভিযোগ, একটি ক্লাবে ঢুকে মোহনের দলবল তাঁকে আক্রমণ করে। তাঁর নাকে-মুখে আঘাত লাগে, চশমা ভেঙে যায়। গৌতমবাবুকে আরজিকরে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহনবাবু বলেন, ‘‘আমি এলাকায় নেই। আমার হয়ে যাঁরা ভোটে কাজ করেছে, তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু হয়ে থাকতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE