Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিধায়কের কলারে পুলিশের হাত, বিতর্ক বিধানসভায়

এক বাম বিধায়ককে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হল বিধানসভায়। একযোগে প্রতিবাদে সরব হলেন সব বিরোধী পক্ষের বিধায়ক। সংশ্লিষ্ট বিধায়কের আনা স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েও শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট তলব করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার সূত্রপাত শিলিগুড়িতে। সেখানে গত ২৭ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলাকে নিয়ে কনভেনশনের পরে হিলকার্ট রোড ধরে হাসমিচক পর্যন্ত মিছিল করেছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগ।

আলি ইমরান রামজ ওরফে ভিক্টর। নিজস্ব চিত্র

আলি ইমরান রামজ ওরফে ভিক্টর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

এক বাম বিধায়ককে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হল বিধানসভায়। একযোগে প্রতিবাদে সরব হলেন সব বিরোধী পক্ষের বিধায়ক। সংশ্লিষ্ট বিধায়কের আনা স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েও শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট তলব করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঘটনার সূত্রপাত শিলিগুড়িতে। সেখানে গত ২৭ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলাকে নিয়ে কনভেনশনের পরে হিলকার্ট রোড ধরে হাসমিচক পর্যন্ত মিছিল করেছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগ। জমায়েত শেষে ফিরে যাওয়ার সময়ে যুব লিগের কর্মী-সমর্থকদের উপরে পুলিশ হঠাৎই লাঠি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে চাকুলিয়ার ফ ব বিধায়ক আলি ইমরান রামজ (ভিক্টর) ফের ঘটনাস্থলের দিকে ফিরে যেতে গেলে পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির ওসি তাঁর কলার ধরে হেনস্থা করেন বলে বিধানসভায় অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সে দিন তাঁকে গ্রেফতারও করা হেয়েছিল। শিলিগুড়ি থানায় যুব লিগের বিক্ষোভের মাঝে কিছু ক্ষণ পরে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। পুলিশ পিছন থেকে বিধায়কের কলার ধরেছে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সেই ছবির ক্লিপিং জমা দিয়েই স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছিলেন ভিক্টর। সেই নোটিস ঘিরেই সোমবার বিধানসভার এক দিনের বিশেষ অধিবেশনে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।

স্পিকার বিমানবাবু এ দিন সভায় প্রথমে বলেন, ঘটনার সময় বিধায়ক ‘কর্তব্যরত’ (অন ডিউটি) ছিলেন না। তাই প্রাথমিক ভাবে স্বাধিকার ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে না। স্পিকার স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় তুমুল ক্ষোভ তৈরি হয় বাম শিবিরে। বিরতির পরে অধিবেশন ফের শুরু হতেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিধায়কের হেনস্থার বিচার দাবি করেন। স্পিকার এ বার ওই ঘটনায় তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু তাঁর ওই বক্তব্যের কোনও রেকর্ড থাকবে না বলে জানিয়ে দেন! কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও সেই সময় ভিক্টরের প্রতি পুলিশি আচরণের নিন্দা করে সুবিচার দাবি করেন। এ সব কথাই নথিভুক্ত করা হবে না স্পিকার জানান। এর অব্যবহিত পরেই বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল নিয়ে আলাদা ভাবে ওয়াক-আউট করেন বাম ও কংগ্রেস বিধায়কেরা। সভার বাইরে এসে দুই বিরোধী পক্ষই ভিক্টরের বিচার পাওয়ার দাবিতে সরব হয়। বিধানসভা চত্বরে ‘নকল অধিবেশন’ বসান বাম বিধায়কেরা।

উত্তাপ বাড়তে থাকায় স্পিকার অবশ্য অধিবেশন শেষে সব দলের পরিষদীয় নেতৃত্বকে নিজের ঘরে আলোচনায় ডাকেন। সেখানে বিরোধীদের সম্মিলিত দাবির মুখে স্পিকার ফোনে যোগাযোগ করেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহনের সঙ্গে। তাঁর প্রাথমিক ব্যাখ্যায় স্পিকার সন্তুষ্ট হননি বলেই পরিষদীয় সূত্রের খবর। দু’দিনের মধ্যে পুলিশ কমিশনারকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন স্পিকার। তাঁর এই পদক্ষেপে দিনের শেষে বিরোধীদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।

তবে তার আগেকার ঘটনায় ক্ষোভ গোপন করেননি বিরোধী নেতারা। স্বয়ং ভিক্টরের বক্তব্য, “বিধায়কের অন ডিউটি মানে কী, বুঝিয়ে দিলে ভাল হতো! নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকে পরের ভোট পর্যন্তই তো এক জন বিধায়ক থাকেন!” বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর ক্ষোভ, “জঙ্গি এবং মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও এক জন ইমরান (তৃণমূল সাংসদ) মুখ্যমন্ত্রীর ডাইনে-বাঁয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! আর পুলিশকে জানিয়ে মিছিল করতে গেলে আমাদের বিধায়ক ইমরানকে পুলিশ কলার ধরে টানছে!” বামেদের প্রতিবাদকে সমর্থন করে মানসবাবুও বলেছেন, “আনুগত্যের প্রতিযোগিতায় পুলিশ সর্বহারা হয়েছে! সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতীদের শাস্তি দিতে পারছে না, এক জন বিধায়কের কলার ধরে টানছে!” তবে স্পিকার শেষ পর্যন্ত এক জন বিধায়কের ‘সম্মান ও নিরাপত্তা’ রক্ষায় হস্তক্ষেপ করেছেন বলে স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন মানসবাবু।

এর পাশাপাশিই প্রশ্ন উঠেছে স্পিকারের আসনে বসে রেকর্ড-বহির্ভূত বক্তব্য নিয়ে! বিধায়ক ভিক্টর থেকে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু, সকলেরই প্রশ্ন সভার মধ্যে স্পিকার নিজের বক্তব্যকে রেকর্ডের বাইরে রাখতে বলছেন, এমন হতে পারে কি? বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের ব্যাখ্যা, “এমন কখনও হয় না! স্পিকার নিজে অসংসদীয় কিছু বলে ফেলেছেন বুঝতে পারলে নথি থেকে বাদ দিতে পারেন। অন্য বিধায়কদের আপত্তিকর মন্তব্যও নথিভুক্ত না করার নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু স্পিকারের আসনে বসে নিজের সাধারণ কথা রেকর্ডে রাখতে মানা করছেন, এ আবার হয় নাকি?”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE