ট্যাংরার দে পরিবারের সদস্য ১৪ বছরের প্রিয়ম্বদা দে। মা এবং কাকিমার সঙ্গে তার দেহও উদ্ধার করা হয়েছে বুধবার। কিশোরীর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানান, ওই কিশোরীর ঠোঁট এবং নাকের নীচে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। কী ভাবে সেই আঘাত লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া, কিশোরীর মা এবং কাকিমার (রোমি দে এবং সুদেষ্ণা দে) হাতের শিরা কাটা ছিল। দু’জনের গলাতেই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তার বাবা, কাকা (প্রণয় দে এবং প্রসূন দে) এবং খুড়তুতো ভাই (প্রতীপ দে) পথদুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ইএম বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে তাঁদের গাড়ি পিলারে ধাক্কা মারে বুধবার ভোর রাতে।

সিপি জানিয়েছেন, ট্যাংরার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। যে হেতু পরিবারের দুই সদস্যই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাই সেই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। এখনই পুনর্নির্মাণ করা যাচ্ছে না। প্রণয় এবং প্রসূন সুস্থ হলে তাঁদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন:
ট্যাংরার দে পরিবারের বাড়িটি চার তলা। তার মধ্যে দোতলার তিনটি পৃথক ঘরে দুই মহিলা এবং এক কিশোরীর দেহ পাওয়া গিয়েছে। ছিল কাগজ কাটার একটি ছুরিও। সেটি হাতের শিরা কাটতে ব্যবহার করা হতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। সিপি জানিয়েছেন, পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। তার তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য পুলিশ অপেক্ষা করছে। কী ভাবে তিন জনের মৃত্যু, ওই রিপোর্ট থেকেই তা আরও স্পষ্ট হবে।
তবে ট্যাংরাকাণ্ডে যা যা তথ্য পুলিশ পেয়েছে, তার সবটা এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সিপি বলেন, ‘‘আরও কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। হাসপাতাল থেকে আহতেরা যা বয়ান দিয়েছেন, তা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই আমরা সব তথ্য প্রকাশ করতে পারছি না। কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।’’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যে শিশু, তার হাতেও আঘাতের চিহ্ন আছে। সিপি জানান, প্রণয় এবং প্রসূনের মধ্যে এক ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু অন্য ভাইয়ের তেমন কিছু হয়নি। দুর্ঘটনার আগে না পরে ওই আঘাত লেগেছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করছে পুলিশ।
কিশোরী-সহ দুই মহিলার মৃত্যুর সময় নিয়েও ধন্দে পুলিশ। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এক দিন আগে থেকেই ওই বাড়ির কাউকে ডাকাডাকি করে সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে মৃত্যুর সময়ের জন্যেও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে তদন্তকারীরা।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
- সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
-
ট্যাংরাকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কিশোর প্রতীপের বয়ান! গোপন জবানবন্দি নিতে নির্দেশ কোর্টের
-
কাকে কখন খুন? সব ঠিক বলছেন কি? প্রসূনকে ট্যাংরার বাড়িতে নিয়ে গেল পুলিশ, হল ঘটনার পুনর্নির্মাণ
-
কন্যা প্রিয়ম্বদার পা চেপে ধরেছিলেন মা রোমি, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন তিনিই! দাবি প্রসূনের
-
আইনজীবী রাখতে চাইছেন না ট্যাংরাকাণ্ডের প্রসূন! বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠাল আদালত
-
স্ত্রী, মেয়ে ও বৌদিকে খুন! দে বাড়ির ছোট ছেলে ট্যাংরাকাণ্ডে গ্রেফতার, সোমেই ছাড়া পান হাসপাতাল থেকে