Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
নেতাই মামলা

সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর আদালতের

শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে লালগড়ের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে-সহ নেতাই-মামলার জেলবন্দি ৭ অভিযুক্তকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করল ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালত। বুধবার বিচারক টিকেন্দ্রনারায়ণ প্রধান দু’পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শোনার পরে অনুজ-সহ ৭ সিপিএম নেতা-কর্মীকে সিবিআই হেফাজতে পাঠান।

আদালতে অনুজ পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

আদালতে অনুজ পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে লালগড়ের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে-সহ নেতাই-মামলার জেলবন্দি ৭ অভিযুক্তকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করল ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালত। বুধবার বিচারক টিকেন্দ্রনারায়ণ প্রধান দু’পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শোনার পরে অনুজ-সহ ৭ সিপিএম নেতা-কর্মীকে সিবিআই হেফাজতে পাঠান। বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, অভিযুক্তদের আইনজীবীর উপস্থিতিতে তাঁদের জেরা করতে পারবে সিবিআই। অনুজ ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হলেন তাঁর সম্পর্কিত ভাই ডালিম পাণ্ডে, লালগড়ের সিপিএম নেতা চণ্ডী করণ, শেখ খলিলুদ্দিন, তপন দে, জয়দেব গিরি ও সিপিএম কর্মী রথীন দণ্ডপাট।

সিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে জানায়, আইনের বিধান মেনে নিম্ন আদালত মনে করলে অনুজদের সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে জেলবন্দি সাত অভিযুক্তকে হাজির করে এ দিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছিল ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালত। এ দিন অভিযুক্তপক্ষের তরফে সওয়াল করার জন্য ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির ছিলেন মেদিনীপুরের দুই প্রবীণ আইনজীবী রঘুনাথ ভট্টাচার্য ও দাশরথি নন্দ এবং হাইকোর্টের আইনজীবী বিশ্বজিত্‌ মান্না।

সিবিআইয়ের আইনজীবী অরুণকুমার ভগত আদালতকে জানান, গত বছর অনুজ-সহ সাত অভিযুক্তদের সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদন নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সুপ্রিম কোর্ট আবেদন খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের সিবিআই হেফাজতে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতকেই আইনের বিধান মেনে পদক্ষেপ করতে বলেছেন। অরুণবাবু বলেন, “নেতাই-কাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য ও মামলার আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের স্বার্থে অভিযুক্তদের চোদ্দ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়ে জেরা প্রয়োজন।”

অভিযুক্তপক্ষের তিন আইনজীবী রঘুনাথ ভট্টাচার্য, দাশরথি নন্দ ও বিশ্বজিত্‌ মান্না সিবিআইয়ের আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, “মামলার মূল নথিপত্র মেদিনীপুরে বিচারাধীন দায়রা আদালতের হেফাজতে রয়েছে। ওই নথিতেই মামলার চার্জশিট ও সিবিআইয়ের মূল আবেদনপত্রটি রয়েছে। মূল নথি ছাড়া সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করা আইনত বৈধ নয়। গ্রেফতার হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে পুলিশ অথবা তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে নেওয়ার আইনি বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে এক বছর পরে অভিযুক্তদের সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদনটি মঞ্জুর হওয়া কোনও মতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। তাছাড়া ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশের পরে নেতাই-মামলাটি দায়রা সোপর্দ হয়ে মেদিনীপুর বিশেষ দায়রা আদালতে বিচারাধীন। এই মামলায় নতুন করে আর তদন্তের প্রয়োজন নেই।”

দুপুর বারোটা থেকে ১ টা পর্যন্ত টানা এক ঘন্টা এজলাসে সওয়াল-জবাব পর্ব শোনেন বিচারক। বিকেলে অবশ্য বিচারক সাত অভিযুক্তকেই চোদ্দ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

এ দিন অনুজদের দেখার জন্য সকাল থেকেই ভিড়ে ঠাসা ছিল আদালত প্রাঙ্গণ। লালগড় থেকে বহু সিপিএম কর্মী অনুজদের দেখার জন্য এসেছিলেন। এসেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিনপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শম্ভুনাথ মাণ্ডি।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে থাকা সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। নিহত হন চার মহিলা-সহ ৯ জন সাধারণ গ্রামবাসী। তদন্ত শুরু করে সিআইডি। কিন্তু ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিআইডির হাত থেকে নেতাই-মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়া হয়। সিবিআই তদন্তে নেমে ওই বছরেই ১২জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত সিপিএমের তত্‌কালীন বিনপুর জোনাল সম্পাদক অনুজ পাণ্ডে ও তাঁর সম্পর্কিত ভাই ধরমপুর লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক ডালিম পাণ্ডে-সহ ৮ জন নেতা-নেত্রী ফেরার ছিলেন। গত বছর অনুজ ও ডালিম-সহ পলাতক থাকা ৭ অভিযুক্ত ধরা পড়েন। আরও এক ফেরার অভিযুক্ত সিপিএম নেত্রী ফুল্লরা মণ্ডল পরে মেদিনীপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এই ৮ নেতা-নেত্রী-সহ কুড়ি জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৮ জন বর্তমানে জেলবন্দি রয়েছেন। দু’জন নাবালক অভিযুক্ত জুভেনাইল আদালতের নির্দেশে জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। ওই দু’জন অভিযুক্ত নাবালক নয় দাবি করে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় গত বছর জুলাইয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে তদন্তের ক্ষেত্রে কোনও স্থগিতাদেশ নেই। সিবিআই সূত্রের খবর, সাত অভিযুক্তকে জেরা করে নিম্ন আদালতে অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

CBI Netai accused police supreme cour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE