Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Kalatan Dasgupta

বাম যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তকে মুক্তি দিল হাই কোর্ট, আদালতের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না

বাম যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তকে মুক্তি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ৫০০ টাকার বন্ডে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি ছাড়া এই সংক্রান্ত মামলায় কলতানকে গ্রেফতার করা যাবে না।

Calcutta High Court gives bail to DYFI leader Kalatan Dasgupta

বাম যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৬
Share: Save:

বাম যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তকে মুক্তি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ৫০০ টাকার বন্ডে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, আদালতের অনুমতি ছাড়া এই সংক্রান্ত মামলায় কলতানকে গ্রেফতার করা যাবে না। আদালতের অনুমতি ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও করতে পারবে না পুলিশ। এই মামলায় চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। পাল্টা চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে পারবেন কলতানও। আগামী ১৮ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চে কলতানের মামলার শুনানি ছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণ, গ্রেফতারির পর কলতানের বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। তাঁর মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আপাতত এই মামলায় আদালতের অনুমতি ছাড়া কলতানের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত করারও প্রয়োজনীয়তা নেই।

আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সিপিএমের তরফেও লালবাজার অভিযানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই আবহে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ একটি অডিয়ো প্রকাশ করেন। তাতে শোনা গিয়েছিল, কেউ বা কারা সল্টলেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে হামলার ছক কষছেন। কুণালের অভিযোগ ছিল, ধর্নাস্থলে হামলা চালিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে তার দায় চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। (এই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )। ওই অডিয়ো প্রকাশের পরেই পুলিশ তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে। গ্রেফতার করা হয় কলতানকে।

কুণালের অডিয়ো মামলায় সঞ্জীব দাস নামের আরও এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানিয়েছিল, অডিয়োর সত্যতা তারা যাচাই করে দেখেছে। তাতে যে গলা শোনা যাচ্ছে, তার একটি কলতানের। তবে আইনানুগ পদ্ধতিতে কলতানের গলার স্বর পরীক্ষা করে এ বিষয়ে প্রমাণ নির্দিষ্ট করা হবে, জানিয়েছিল পুলিশ। কলতান নিজে অবশ্য গ্রেফতারির পরেই দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।

কলতানের মামলায় এর আগে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল আদালত। কিসের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালত জানতে চেয়েছিল। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, পেনড্রাইভটি যে ভাবে পাওয়া গিয়েছে তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। সেটি যাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল না কেন? বিচারপতি ভরদ্বাজ বলেন, ‘‘যদি হামলার ছক কষা হয়েই থাকে, তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? পুলিশ কেন কোনও পদক্ষেপ করল না? ১৮-১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের তুলে আনা হচ্ছে। ওদেরও ভবিষ্যৎ রয়েছে!’’ গ্রেফতারির আগে অডিয়ো ক্লিপ কী ভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তি হাতে পেলেন, সে প্রশ্নও তোলে আদালত। প্রশ্ন ওঠে, সঞ্জীবের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হলেও কলতানের বিরুদ্ধে কেন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হল?

রাজ্যের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, সঞ্জীব এবং কলতানের মধ্যে গত ১০ মাসে ১৭১ বার ফোনে কথা হয়েছে। ফলে দু’জনে একে অপরকে চিনতেন। সল্টলেকের ধর্নাস্থলে হামলার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সঞ্জীব যদি অর্জুন হন, কলতান তবে কৃষ্ণের ভূমিকা পালন করেছেন। কলতানের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উনি তো কোনও হামলার নির্দেশ দেননি। একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে হামলার কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নির্দেশ মতো কাজ করতে। কিন্তু কোনও নির্দেশ তো দেওয়া হয়নি!’’ অডিয়োতে আদৌ কি কলতানের গলা শোনা গিয়েছে? সে প্রসঙ্গে তাঁর আইনজীবী কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কলতানের জামিনের পর তাঁর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘দু’জন ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথনের ক্ষেত্রে তাঁদের কাছ থেকেই সেই রেকর্ডিং পেতে হবে। যদি তৃতীয় ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া যায়, তবে ফোনে কেউ আড়ি পেতেছিল, এটা নিশ্চিত। ফোনের কথোপকথন ব্যক্তিগত। তার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। কেউ এক জন পেনড্রাইভ দিলেন, তার ভিত্তিতে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিল যাচাই না করে, তা হতে পারে না। এ ভাবে তো যে কোনও ব্যক্তিকেই ফাঁসিয়ে দেওয়া যায়। এই তদন্তভার এই রাজ্যের পুলিশের হাতে থাকা উচিত নয়। যিনি এই অডিয়ো প্রকাশ করেছিলেন, তিনি তা কোথা থেকে পেলেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁকেও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE