গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বর্ধমান শহরের এক সিপিএম নেতা ফোন করেছিলেন উত্তর হাওড়ার এক যুব নেতাকে। ফোন করেই প্রথম কথা, “তোর ফোনের নেট অন কর। হোয়াট্সঅ্যাপ কল করছি।” তার পর হোয়াট্সঅ্যাপ কলে কথা হয় দু’জনের।
অশোক ভট্টাচার্য-ঘনিষ্ঠ শিলিগুড়ির এক সিপিএম নেতাকে রবিবার সকালেই ফোন করেছিলেন হুগলির এক সিটু নেতা। সেই ফোনের বিষয়বস্তু ছিল সিকিম বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা। কিন্তু হুগলির নেতা ফোন করে প্রথমেই শিলিগুড়ির নেতাকে বলেন, “তুমি হোয়াট্সঅ্যাপটা খোলো। ওখানে ফোন করছি।” তার পর তাঁদের কথা হয় নভেম্বরে সিকিম ঘুরতে যাওয়া নিয়ে।
রবিবার বিকালে শ্যামবাজারে সিপিএমের ছাত্র-যুবদের অবস্থান মঞ্চের সামনেই সমাবেশের ডাক দিয়েছেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরা। বৃষ্টির কারণে সেই জমায়েতে কী ভাবে লোকলস্কর নিয়ে যাওয়া হবে, দক্ষিণবঙ্গের নেতারা সেই আলোচনাও করছেন হোয়াট্সঅ্যাপ কিংবা ফেসবুকের মেসেঞ্জার কলে।
গত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাবেই আচমকা বদলে গিয়েছে সিপিএমের অন্দরের পরিবেশ। অডিয়ো ক্লিপ-কাণ্ডে যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তের গ্রেফতারির পরে এ ভাবেই সাবধানতা অবলম্বন করছেন সিপিএমের লোকজন। দলের মধ্যেও অলিখিত ভাবে প্রায় নির্দেশিকা জারি হয়ে গিয়েছে, যথাসম্ভব ফোন এড়িয়ে চলুন। সিপিএমের এক নেতার কথায়, “প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্তের সময়ে এই সাবধানতা আগে থেকেই নেওয়া উচিত ছিল।”
সিপিএমে এখনও কিছু নেতা অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহার করাকেও ‘বিলাসিতা’ মনে করেন। দলের অনেকেরই বক্তব্য, সেই নেতারা ভাবেন বাংলার রাজনীতি এখনও আশির দশকে পড়ে রয়েছে। সেই কারণেই তাঁরা সময়টা বুঝতে পারছেন না। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে লেখালিখির আগেও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে মৌখিক ভাবে সতর্কতা অলম্বনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে সিপিএমের তরফে।
ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী জমানায় উত্তাল হয়েছিল সর্বভারতীয় রাজনীতি। ইজ়রায়েলি হোয়াট্সঅ্যাপ পেগাসাস ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই তালিকায় ছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের নাম। পেগাসাস বিতর্কে যখন জাতীয় রাজনীতি সরগরম, সেই সময়ে দেখা যেত তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের আইফোনের ক্যামেরায় টেপ লাগিয়ে রাখছেন। মমতা বলেছিলেন, “পেগাসাস ফেরোসাস ডেঞ্জারাস।” উল্লেখ্য, এর আগে মমতার সরকারের বিরুদ্ধেও ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ তুলতেন বিরোধীরা। বেশ কয়েক বছর আগে এ নিয়ে প্রথম সরব হতে শোনা গিয়েছিল কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে। পরবর্তী কালে সিপিএম, বিজেপির অনেক নেতাই এই অভিযোগ করেছেন। এক পদস্থ পুলিশকর্তাকে ‘ব্যবহার’ করে রাজ্য সরকার তথা পুলিশ ফোনে আড়ি পাতার কাজ করছে বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের।
তবে কলতানের অডিয়ো ক্লিপ কী প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে এটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল অভিযোগ করেছিলেন, ওই অডিয়ো ক্লিপে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই অডিয়ো ক্লিপের ভিত্তিতে কলতানেরা গ্রেফতার হয়েছেন। কলতানের গ্রেফতারি নিয়ে সিপিএমের মধ্যেও বিবিধ মত রয়েছে। সুজন চক্রবর্তী যেমন এটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নির্মিত ক্লিপিং বলে অভিযোগ করেছেন। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ওই অডিয়ো ক্লিপটিকে ‘ডিপ ফেক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে সিপিএমের ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠনের বিবৃতিতে আবার এ সব তত্ত্বের অবতারণা করা হয়নি। এ সবের মধ্যেই সিপিএম নেতা-কর্মীদের নতুন অভ্যেস রপ্ত করতে হচ্ছে।
সবার মুখেই এক কথা, “সাবধান! খুব সাবধান!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy