Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Scooter

Beggar: মায়ের শখ মেটাতে বালতি ভর্তি ভিক্ষার মুদ্রা নিয়ে স্কুটার কিনতে হাজির ছেলে! তার পর...

বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে, তার ডিকিতে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের বালতিতে চকচক করছে থরে-থরে কয়েন। এক টাকার স্তূপে মিশে আছে কিছু ৫০ ও ২০ পয়সাও।

গাড়ির শো-রুমে গোনা হচ্ছে কয়েন।

গাড়ির শো-রুমে গোনা হচ্ছে কয়েন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২২ ০৭:০৯
Share: Save:

গাড়ির শো-রুমের মেঝেয় বালতি উপুড় করে ঢালা হয়েছে গুচ্ছ কয়েন। বেশির ভাগই এক টাকার। ঘেমে-নেয়ে গুনে চলেছেন কয়েক জন কর্মচারী। কী আর করা? বালতি-বালতি খুচরো টাকা নিয়েই যে প্রায় ৭০ হাজার টাকা দামের স্কুটার কিনতে হাজির এক ছোকরা খরিদ্দার!

ছোকরা একা নয়। সঙ্গে কয়েকটি ইয়ারদোস্ত নিয়ে সে এসে হাজির কৃষ্ণনগরের পালপাড়া মোড়ে একটি মোটরবাইকের শো-রুমে। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে, তার ডিকিতে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের বালতিতে চকচক করছে থরে-থরে কয়েন। এক টাকার স্তূপে মিশে আছে কিছু ৫০ ও ২০ পয়সাও। এই দিয়েই একটা স্কুটার চাই!

শো-রুমের লোক প্রথমে হতবাক! এত কয়েন গুনবেই বা কে আর নেবেই বা কে? ম্যানেজার ফোন করেন ব্যাঙ্কে। তারাও নিমরাজি। কার সময় আছে ৭০ হাজার টাকার খুচরো নগদ গোনার? কিন্তু ফেরাবেনই বা কী বলে? দেশে চালু মুদ্রা নিতে যে তাঁরা বাধ্য। অতএব বেজার মুখেই ম্যানেজারকে ঘাড় নাড়তেই হয় এবং ছোকরার দল মহা উৎসাহে শো-রুমের মেঝেয় বালতি উপুড় করে দেয়।

খরিদ্দারের নাম রাকেশ পাঁড়ে। তাঁর সাকিন নদিয়ারই ভীমপুরের গোবরাপোতা মাছবাজার এলাকা। তা এত খুচরো তিনি পেলেন কোথায়? রহস্য ভাঙেন রাকেশ— তাঁর বাবা ভুল্লুর পাঁড়ে মারা গিয়েছেন তিনি ছোট থাকতেই। মা ধুলু পাঁড়ে ভিক্ষা করে দুই ছেলেকে মানুষ করেছেন। বড় ছেলে শ্বশুরবাড়িতে থাকে, মায়ের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। রাকেশ ছোট। কলকাতার একটি ম্যানহোলের লোহার ঢাকনা তৈরির কারখানায় খুবই সামান্য বেতনে কাজ করেন তিনি। নিজেরই ভিক্ষার ঝুলি ঝেড়ে কয়েন জমিয়েছিলেন মা। তা-ই ছেলের হাতে দিয়ে বলেছেন, “যা বাপ, স্কুটার কিনে শখ মিটিয়ে নে।” লাজুক হেসে রাকেশ বলেন, “আসলে কী জানেন তো, আমার চেয়েও মায়ের বেশি শখ যে ঘরে একটা স্কুটার থাক।”

শুধু এক টাকার কয়েন কেন?

রাকেশ বলেন, “অন্য সব কয়েন মা খরচ করে। শুধু এক টাকার কয়েন জমায়। আমাদের এলাকায় ছোট এক টাকার কয়েন কেউ নিতে চায় না।” কিন্তু তাঁরও ধন্দ ছিল, দোকান কি এত কয়েন নেবে? খেদিয়ে দেবে না? বন্ধুদের শুধোন। তাঁরা ইন্টারনেট ঘেঁটে জানান, সদ্য না কি তামিলনাড়ুতে এক জন স্রেফ খুচরো দিয়ে মোটরবাইক কিনেছেন। রাকেশ পারবে না কেন?

শো-রুমের ম্যানেজার গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না, এত খুচরো নিয়ে কী করব। আমাদের ব্যাঙ্কও দোনামোনা করছিল। কিন্তু এগুলো তো অচল টাকা নয়। নেবো না বলি কী করে?” সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কৌস্তভ সিংহ অবশ্য এই বিষয়ে কথা রাজি হননি। তবে নদিয়া ব্যাঙ্ক লিড ম্যানেজার তপু দত্ত বলেন, “ছোট এক টাকার কয়েন অচল নয়। সবাই তা নিতে বাধ্য। সে কোনও ব্যাঙ্কই হোক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।”

অতএব— বিকেল গড়িয়ে সাঁঝ নামল, গুনতি চলছে। ডাকাত-গুহার মোহর গুনতে না পেরে দাদার ঘর থেকে কুনকে চেয়ে আনতে হয়েছিল আলিবাবাকে। এখানে সে উপায় নেই। ‘ভিক্ষার ধন’ গোনা হচ্ছে আর রাকেশ খোয়াব দেখছে, কখন মাকে পিছনে বসিয়ে হুশ করে স্কুটার ছোটাবে!

অন্য বিষয়গুলি:

Scooter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy