Advertisement
E-Paper

আত্মীয়াকে খুন মধ্যমগ্রামে, দেহ টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে ভরে কলকাতায়, ফেলার চেষ্টা গঙ্গায়, ধৃত মা-মেয়ে

পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষকে কেন খুন করেছেন ফাল্গুনী এবং তাঁর মা? সম্পত্তির জন্যই কি খুন? এই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। পুলিশ জানতে পেরেছে, যোরহাট এবং কলকাতায় কিছু সম্পত্তি রয়েছে সুমিতার।

প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার মা আরতি ঘোষ এবং মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষ।

প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার মা আরতি ঘোষ এবং মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৩
Share
Save

অসমের যোরহাট থেকে এসেছিলেন পিসিশাশুড়ি। তাঁর সঙ্গেই ঝগড়া বেধেছিল বৌমার। সেই ঝগড়ার জেরেই মধ্যমগ্রামের ভাড়াবাড়িতে পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষকে খুন করেন বৌমা ফাল্গুনী ঘোষ এবং তাঁর মা আরতি ঘোষ। তার পরে ট্রলি ব্যাগে ভরে দেহ নিয়ে যান কলকাতায়। সেই দেহ কুমোরটুলিতে ফেলতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যান তাঁরা। দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের কথা স্বীকার করেছেন মধ্যমগ্রামের মা ও মেয়ে আরতি এবং ফাল্গুনী। কিন্তু পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষকে কেন খুন করেছেন ফাল্গুনী এবং তাঁর মা? সম্পত্তির জন্যই কি খুন? এই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ।

পুলিশ জানতে পেরেছে, যোরহাট এবং কলকাতায় কিছু সম্পত্তি রয়েছে নিঃসন্তান সুমিতার। তার জন্যই খুন করা হয়েছে কি না, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সে কথা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য মঙ্গলবার রাতেই মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লি এলাকায় তাঁদের ভাড়াবাড়িতে ফাল্গুনীকে নিয়ে যায় পুলিশ। আরও একটা প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ফাল্গুনীর সঙ্গে তাঁর শ্বশুড়বাড়ির তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। তার পরেও কেন ফাল্গুনীদের বাড়িতে অসমের যোরহাট থেকে এসেছিলেন পিসিশাশুড়ি সুমিতা?

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় ফাল্গুনী কেবল অতীতের কথাই বলে চলেছেন। তবে কেন খুন করেছেন, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট ভাবে তাঁরা কিছু জানতে পারেননি বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে খবর। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মৃতার গলার ডান দিকে, দুই হাতে কাটে দাগ রয়েছে। সুমিতার মাথার ডান দিকে গভীর ক্ষত রয়েছে। এছাড়াও মাথায় বেশ কিছু কাটা দাগ রয়েছে। দুই পায়ের গোড়ালিতে কাটার ক্ষত রয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তের (স্কাল হেমাটোমা) অস্তিত্ব রয়েছে। ময়নাতদন্ত যে সময়ে করা হয়েছে, তার ৪৮ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

ঝগড়ার জেরে খুন

জেরার মুখে অভিযুক্ত আরতি এবং ফাল্গুনী জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ বছর পঞ্চান্নের সুমিতার সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয় তাঁদের। ঝগড়ার সময় ফাল্গুনী পিসিশাশুড়িকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। দেওয়ালে মাথা ঠুকে যাওয়ার পর জ্ঞান হারান সুমিতা। তাঁর জ্ঞান ফিরলে আর একপ্রস্ত ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার সময় ইট দিয়ে পিসিশাশুড়ির মুখে এবং ঘাড়ে আঘাত করেন ফাল্গুনী। তার পরেই জ্ঞান হারান ওই প্রৌঢ়া। এই ঘটনার সময় আরতি বাড়িতে ছিলেন বলেই জানিয়েছেন ফাল্গুনী। তবে তাঁর এই দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ট্রলি ব্যাগ

পুলিশ জানতে পেরেছে খুনের পরে ট্রলি ব্যাগে ভরা হয়েছিল প্রৌঢ়া সুমিতার দেহ। প্রৌঢ়ার পায়ের একাংশ কাটা ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মা-মেয়ে জানিয়েছেন, ট্রলি ব্যাগে ঢোকানোর জন্য মৃতের পায়ের পাতা দুটো কেটে নেন তাঁরা। মধ্যমগ্রামের ভাড়াবাড়ি থেকে ভ্যানরিকশা চেপে প্রথমে দোলতলা মোড়ে আসেন মা ও মেয়ে। সেখান থেকে একটি নীল-সাদা ট্যাক্সিতে চেপে যান কুমোরটুলি ঘাটের কাছে। তার আগে প্রিন্সেপ ঘাটেও তাঁরা যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই ট্যাক্সির চালক।

আটক স্থানীয়দের হাতে

মঙ্গলবার সকালে ফাল্গুনী এবং আরতি কুমোরটুলি ঘাটের কাছে একটি ট্রলি ব্যাগ গঙ্গায় ফেলার তোড়জোড় করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁদের আচরণ অস্বাভাবিক ঠেকে স্থানীয়দের। তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেই ওই দু’জন দাবি করেন, ট্রলি ব্যাগের ভিতরে একটি কুকুরের দেহ রয়েছে। এর পরে ট্রলি ব্যাগ খুলে দেখা যায়, তার ভিতরে একটি মুণ্ডহীন দেহ রয়েছে। স্থানীয়েরাই খবর দেন পুলিশকে। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে দু’জনকে আটক করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলি ব্যাগটিও। স্থানীয়দের একাংশ পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা দাবি করেন, ওই দুই মহিলা খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ ভাসাতে এসেছিলেন। তাই দু’জনকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়েরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ দু’জনকেই গ্রেফতার করে।

প্রতিবেশীদের দাবি

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আড়াই বছর ধরে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বীরেশপল্লি এলাকায় ভাড়া থাকছেন ফাল্গুনী এবং আরতি। কয়েক দিন আগে এক প্রৌঢ়াকে ওই ভাড়াবাড়িতে ঢুকতে দেখেন স্থানীয়েরা। তবে তিনি যে সম্পর্কে ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি, তা তাঁরা জানতেন না বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযুক্ত মা ও মেয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, প্রায় রাতেই অচেনা লোকজন আসতেন ফাল্গুনী এবং আরতির ভাড়াবাড়িতে। তাঁদের এক প্রতিবেশীর কথায়, “কয়েক দিন আগে রাতে এক মহিলা ওই বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মহিলাকে দেখে কয়েকটা কুকুর চেঁচাতে থাকে। আমি গিয়ে বাড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে আসি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ভাব ছিল না মা ও মেয়ের। নিজেদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা করতেন তাঁরা। এক বার এমনই একটি ঝামেলায় স্থানীয় কাউন্সিলরকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। তার পর থেকে পাড়ায় বিশেষ মিশতেন না দু’জন। তাঁদের আসল বাড়ি কোথায়, তা-ও জানেন না স্থানীয়েরা।

পুলিশ কী বলল

এই ঘটনা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, “সকালে নর্থ পোর্ট থানায় খবর আসে। ঘটনাটি যে হেতু মধ্যমগ্রামে ঘটেছে, তাই সেখানকার পুলিশ বিষয়টি দেখছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে নেব। খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।” মধ্যমগ্রামে কলকাতা পুলিশের একটি দল যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Murder madhyamgram

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}