Advertisement
E-Paper

অর্থমনর্থম্

বিজেপি আর কংগ্রেস, দুই দলই অপরের দিকে তর্জনী তুলতে ব্যস্ত, তবে প্রধান চাপে পড়েছে শাসক দল বিজেপি-ই। এবং তা ট্রাম্পের কারণেই।

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:২৮
Share
Save

বর্মি বাক্সই হোক আর প্যান্ডোরার বাক্স, এক বার তা খুলে গেলে যে কত দূর রেশ গড়াতে পারে বলা যায় না। ওয়াশিংটন ডি সি-তে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেমনই একটা বাক্স খুলে দিয়েছেন। ভারতীয় রাজনীতি এখন তার সামনে তর্কে বিতর্কে অভিযোগে প্রত্যভিযোগে হাবুডুবু। বিজেপি আর কংগ্রেস, দুই দলই অপরের দিকে তর্জনী তুলতে ব্যস্ত, তবে প্রধান চাপে পড়েছে শাসক দল বিজেপি-ই। এবং তা ট্রাম্পের কারণেই। তাঁর মূল লক্ষ্য পরাজিত প্রতিপক্ষ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাইডেন, এবং বাইডেন সরকারের ‘কুকর্ম’ ফাঁসের উত্তেজনাতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত এক সপ্তাহের মধ্যে বার-পাঁচেক বলেছেন যে আমেরিকা থেকে ঢালাও ‘ইউএসএড’ ভারতের দিকে এসেছিল, উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ভোটের হার বাড়ানো। এর সঙ্গে তিনি অকাতরে এ কথাও জুড়ে দিয়েছেন যে, এই অর্থ প্রধানত গিয়েছিল তাঁর ‘বন্ধু’ নরেন্দ্র মোদীর কাছেই। ‘বন্ধুত্ব’র বিবিধ রকম সংজ্ঞা হয়, বন্ধু ভাবে শত্রু ভজনাও হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এ-হেন ‘ভজনা’ আপাতত বেশ বিপাকেই ফেলেছে মোদীজিকে, তাঁর দলকে ও তাঁর সরকারকে। উপরন্তু, অতি সম্প্রতি দেশের অর্থ মন্ত্রকের বার্ষিক রিপোর্ট স্পষ্টাস্পষ্টি দেখিয়ে দিয়েছে— বাস্তবিক, প্রচুর আমেরিকান অর্থসাহায্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ব্যবহার হয়েছিল। প্রায় ৭৫ কোটি ডলার ঢুকেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সাতটি প্রকল্পে। সুতরাং, সন্দেহ নেই, রহস্য এখন ঘনীভূত হওয়ার বদলে ক্রমশই তরলীভূত। শাসক-বিরোধী বাগ্‌যুদ্ধে বিজেপি পক্ষ নানা ভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মনে হচ্ছে, মোদী সরকারের পক্ষে হয়তো এ বারের ইউএসএড-কাণ্ডের সামাল আদানি-কাণ্ডের মতো অতখানি অনায়াস ও সাবলীল না-ও হতে পারে।

কেবল বিরোধী পক্ষ কংগ্রেসের নয়, দেশের নাগরিক সমাজের সচেতন অংশেরও দাবি, সত্বর সমস্ত তথ্য প্রকাশ্য করা হোক। ইউএসএড-এর অর্থ নির্বাচনে ব্যবহার করা কতখানি সঙ্গত, সে তর্ক আপাতত মুলতুবি রেখেও এটুকু বলতেই হয় যে বিদেশি টাকা ভারতের জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে কতখানি ব্যবহার হয়েছে তার হিসাব বিস্তারিত ভাবে জানতে চাওয়া যেতেই পারে। সেই তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য শাসক দল। একই সঙ্গে এও ঠিক যে কংগ্রেস নিজেও একই দায় বহন করছে। ট্রাম্প তো শুধু মোদীর দিকেই নির্দেশ করেননি, এমনও বলেছেন যে তাঁর ‘আন্দাজ’ মোদীর বদলে অন্য কাউকে জেতানোর লক্ষ্য ছিল পূর্বতন বাইডেন প্রশাসনের। এই আন্দাজ সম্পূর্ণত তাঁর স্বকপোলপ্রসূত হতে পারে, হতে পারে সেই আমলে আমেরিকা থেকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আসা একের পর এক সতর্কবার্তা, মানবাধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতা লঙ্ঘন না করার বার্তার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি। হতে পারে, সত্যই তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণ উপস্থিত। উড়ো কথায় উত্তর না দিয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দলের কর্তব্য, এই অভিযোগ খণ্ডন করা, কিংবা স্পষ্ট স্বীকার করা যে বিদেশি সহায়তা নেওয়া হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নিজের জয়ের পিছনেও বড় মাপের ‘বিদেশি’ প্রভাবের অভিযোগ সর্বজ্ঞাত। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা করা তাঁর ধরন নয়, ফলে ও-সব অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকারও তিনি মনে করেননি। এ-হেন ট্রাম্পের দ্বিতীয় আমল শুরু হতেই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মানদণ্ড হুড়মুড়িয়ে পতনশীল, বিশ্বদুনিয়ায় সকলেই তা নিয়ে মোটের উপর একমত। কিন্তু ভারতের গণতন্ত্র যদি সেই পথ না ধরে পৃৃথিবীর চোখে নিজের সম্মান ও অবস্থান বজায় রাখতে চায়, তা হলে ইউএসএড কেলেঙ্কারির সন্তোষজনক মীমাংসা এখনই দরকার। পূর্ণ স্বচ্ছতা দরকার। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও বলেছেন, বিষয়টি এতই গুরুতর যে স্পষ্ট মীমাংসা চাই। তবে জয়শঙ্করের সরকারের আমলে ভারত যে ‘স্বচ্ছ’ নয়, ইতিমধ্যে তা যথেষ্ট ভাবে প্রমাণিত, আবার ‘আড়াল দিয়ে লুকিয়ে’ চলার নানা পদ্ধতিতেও তা সিদ্ধহস্ত। ভয়টা এইখানেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump BJP Congress Joe Biden USD

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}