নিহতের বাড়িতে মনিরুল।—নিজস্ব চিত্র।
দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নিহত কর্মীর বাড়িতে এসে পুলিশকে বিরোধী গোষ্ঠীর চাঁইদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পরামর্শ দিলেন লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। যা আসলে অনুব্রত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত, কেতুগ্রামের শেখ সাহানেওয়াজ গোষ্ঠীর নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত বলে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে। এ নিয়ে দলের উপরমহলে নালিশ ঠুকবেন বলে সাহানেওয়াজ নিজেও জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসে বর্ধমানের কেতুগ্রামে বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ইয়াসিন শেখ ওরফে বাদশাকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে ১৫টি গাড়ির কনভয় নিয়ে তাঁর বাড়িতে যায় তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। তাতে মনিরুল ছাড়াও ছিলেন নানুরের তৃণমূলের বিধায়ক গদাধর দাস। তিনি জানান, বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশেই তাঁরা বাদশার বাড়িতে এসেছেন।
চিনিসপুর গ্রামে নিহতের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলার পরে বাদশার বাড়ির কাছে এক খামারে দাঁড়িয়ে মনিরুল বলেন, “গতকাল রাতে পুলিশ কয়েক জন অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। এফআইআরে যাঁদের নাম অনেক নীচে রয়েছে। গরিব মানুষের বাড়ি ভেঙে কী হবে? ওরা তো ভয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রয়েছে। পুলিশকে বলছি, কারা মাথা তা তো আপনারা ভালই জানেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা সন্ত্রাস করছে তাঁদের বাড়িটা ভাঙুন।”
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মনিরুল অবশ্য আগেও শিরোনামে এসেছেন। ২০১০ সালের ৪ জুন বীরভূমে লাভপুরের নবগ্রামে তাঁর বাড়িতে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে সাঁইথিয়ায় প্রকাশ্য সভায় তিন জনকে ‘পায়ের তল দিয়ে পিষে’ মারার কথা বলেওছিলেন তিনি। একই সভামঞ্চ থেকে সাঁইথিয়ার এক কংগ্রেস নেতার ‘মুন্ডু আদায়’ করার হুমকিও দেন। পুলিশ যদিও পরে সেই খুনের মামলার চার্জশিটে তাঁর নাম রাখেনি। এ দিন অবশ্য মনিরুল কারও নাম করেননি। তবে তিনি যেহেতু অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং গোলমালটা যেহেতু তাঁদের গোষ্ঠীর সঙ্গে সাহানেওয়াজ-গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যেই হয়েছে, মনিরুল কাদের কথা বলতে চেয়েছেন তা দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী কার্যত বুঝে গিয়েছেন।
গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া ক্যানাল পুলের কাছে বাদশাকে আটকে প্রথমে মারধর, তার পরে গুলি করে মোটরবাইকে চাপিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। সন্ধ্যায় সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর গ্রামের কামারপুর পুকুরের পাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ মেলে। ঘটনাস্থলে পুলিশ দু’টি কার্তুজ পায়, আমগোড়িয়া থেকে তিনটি মোটরবাইকও পাওয়া যায়। রাতে নিহতের দাদা ইউনিস শেখ কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি জাহের শেখ, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নজরুল শেখ, বেরুগ্রাম অঞ্চল সভাপতি অপরূপ শেখ-সহ সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন বিধায়ক তথা প্রতিনিধি দলের কাছে নিহতের পরিজনেরা অভিযোগ করেন, অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এর পরেই পুলিশের উদ্দেশে মনিরুল বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না কেন? টাকাটা কী মিষ্টি!” ১০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বড় ‘আন্দোলন’ হবে জানিয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি, “ব্যক্তি পুলিশ ভুল করলে আমাদের কানে আসবে। মনে রাখবেন, পুলিশের মাথা কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। আমরা যা দেখে গেলাম শনিবার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট করে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেব।”
তৃণমূলের সাহানেওয়াজ-গোষ্ঠীর লোকজনের ক্ষোভ, বর্ধমান জেলায় দলের পদাধিকারী কিংবা ব্লক নেতাদের অজ্ঞাতেই বীরভূমের নেতাদের নিয়ে এসে ‘রাজনীতি’ করে গেলেন কয়েক জন। সাহানেওয়াজ বলেন, “কেউ-কেউ উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে গেলেন। আমি এ নিয়ে দলের নেতাদের কাছে অভিযোগ জানাব।” খুনে অভিযুক্ত জাহের শেখ ফোনে দাবি করেন, “আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা যথাসময়ে আইনের দ্বারস্থ হব।”
অভিযুক্তেরা ধরা পড়ছে না কেন?
কেতুগ্রাম থানার আইসি বিজয় ঘোষের দাবি, “আমরা রোজ তল্লাশি চালাচ্ছি। কিন্তু অভিযুক্তরা পলাতক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy