রেজিয়া বিবি। নিজস্ব চিত্র।
জন্ম থেকেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। ভাল্ভ ছোট থাকায় শ্বাস নিতে বরাবরই সমস্যা হতো বীরভূমের মুরারইয়ের রাজনগর-অম্বুজা গ্রামের রেজিয়া বিবির। তবে টানা চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হন। বছর দুয়েক আগে বিয়ে, তারপর অন্তঃসত্ত্বা হন ওই তরুণী। গর্ভবতী অবস্থায় ফের বাড়ে সমস্যা। চিকিৎসকেরা জানান, ওই রোগ নিয়ে প্রসব করলে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। তবে বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করালেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেও চিকিৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টা এই সাফল্য এনেছে।’’ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বকেশ মজুমদারও বলেন, ‘‘এ সব রোগীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে এক দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার করে সাধারণ প্রসব করানোর ঘটনা সত্যিই বিরল।’’
চিকিৎসকেরা জানান, আমাদের দেহে কম অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বহন করে পালমোনারি আর্টারি। সেই রক্ত ফুসফুসে ঢুকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়ে ‘এওর্টা’ বা মূল ধমনীতে যায়। তারপরে বিশুদ্ধ রক্ত ছড়িয়ে যায় দেহে। কিন্তু রেজিয়ার ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ডের ভাল্ভ তুলনামূলক ছোট থাকায় এই পদ্ধতি বাধা পাচ্ছিল। চিকিৎসকদের ভাষায়, ‘সিভিয়ার পালমোনারি স্টেনোসিসে’ আক্রান্ত ছিলেন একুশ বছরের রেজিয়া বিবি। রেজিয়ার মা রিজিয়া বেগম বলেন, ‘‘টানা চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে বছর দুয়েক আগে মুর্শিদাবাদাদের সুতির কেঁদুয়া গ্রামে বিয়ে হয় মেয়ের। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেই ফের অসুখ মাথা চাড়া দেয়।’’
চিকিৎসকেরা জানান, এ মাসের তিন তারিখ মুর্শিদাবাদ থেকে বর্ধমান মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগে আসেন রেজিয়া বিবি। সেখানকার চিকিৎসক বিবেকমোহন রক্ষিত তাঁকে দেখার পরেই বুঝতে পারেন, বিপদ একেবারে সামনে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করে হৃৎপিন্ডের ভাল্ভ বড় করতে না পারলে রোগীকে বাঁচানো কার্যত অসম্ভব। তার সঙ্গে করাতে হবে সাধারণ প্রসব। সেই মতো বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সুপার স্পেশালিটি’ অনাময় হাসপাতালের হৃদবিভাগে যোগাযোগ করেন বিবেকমোহনবাবু। একদিন ভর্তি থাকার পরেই মঙ্গলবার বিকেলে অস্ত্রোপচার করে বেলুন ঢুকিয়ে ভাল্ভটিকে বড় করা হয়। তার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব করানো হয় রেজিয়ার। চিকিৎসকদের দাবি, মা ও শিশুকন্যা এখন সুস্থ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক বিশ্বরূপ তা বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হলে এ ধরণের রোগীদের অজ্ঞান করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সে সব মাথায় রেখে সময় ধরে আমাদের এগোতে হয়েছে। প্রসবের প্রথম অবস্থায় এ রকম রোগী এলে গর্ভপাত করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।’’
চিকিৎসকেরা জানান, এই সব রোগীরা তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগেন। সামান্য হাঁটাহাঁটি বা কথা বলাতেও হাঁফ ধরে যায়। ফলে কোনও অস্ত্রোপচার, অ্যানাস্থেসিয়া প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থেকেই যায়। বিবেকমোহনবাবুর দাবি, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ রোগী মারা যায়। রেজিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে হৃদপিন্ডের ভাল্ভ অস্ত্রোপচার করে সময় ধরে প্রসব করানো গিয়েছে। ফলে বিরল ঘটনাতেও সাফল্য মিলেছে।’’ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার দাবি, ‘‘দুটি বিভাগের সমন্বয়ে সাফল্য মিলেছে।’’ হৃদরোগের চিকিৎসক গৌতম দত্ত বলেন, ‘‘প্রসবের মুখে এ ধরণের অস্ত্রোপচার নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy