(বাঁ দিক থেকে) হিলারি ক্লিন্টন, বিল ক্লিন্টন এবং মনিকা লিউয়েনস্কি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
দুই নারী। দু’জনেই প্রাক্তন। প্রথম জন আমেরিকার ‘প্রাক্তন’ ফার্স্ট লেডি। দ্বিতীয় জন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসস্থান হোয়াইট হাউসের ‘প্রাক্তন’ ইন্টার্ন। দু’জনের মধ্যে এক পুরুষ। তিনিও প্রাক্তন। আমেরিকার ‘প্রাক্তন’ প্রেসিডেন্ট।
হিলারি ক্লিন্টন। মনিকা লিউয়েনস্কি। উইলিয়াম জেফারসন ক্লিন্টন। সারা বিশ্ব যাঁকে ‘বিল’ নামে চেনে। যাঁরা একদা জড়িয়ে গিয়েছিলেন বিতর্কের সুতোয়। সেই ইতিহাস তিন জনেই পিছনে ফেলে এসেছেন বহু বছর। কিন্তু এখনও সেই সুতো মাঝে মাঝে জোড়া লাগে। যেমন লাগছে আমেরিকার নির্বাচনের আবহে।
মনিকা হোয়াইট হাউস তথা রাজনীতির সংস্পর্শে নেই বহুদিন। ক্লিটন পরিবার কিন্তু এখনও পুরোদস্তুর রাজনীতিতে। হিলারি তো ২০১৬ সালে প্রায় হোয়াইট হাউসে ঢুকেও পড়েছিলেন! তেমন হলে তিনিই হতেন আমেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট। যে ইতিহাস তৈরির জন্য এখন লড়ছেন কমলা হ্যারিস। কিন্তু হিলারির নাম উঠলে কমলার চেয়ে অনেক বেশি মনে আসে মনিকার নাম।
বিবাহিত ক্লিন্টন নিজের মুখেই মনিকার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ক্লিন্টন-মনিকার প্রেমকাহিনি নিয়ে মুচমুচে গল্প কম লেখা হয়নি। তার পরে নায়াগ্রা প্পপাত দিয়ে অনেক জল বয়েছে। কেচ্ছার কলঙ্ক আর ইমপিচমেন্টের খাঁড়া মাথায় নিয়েই আট বছর প্রেসিডেন্ট হিসাবে হোয়াইট হাউসে কাটিয়েছেন ক্লিন্টন। আর রাতারাতি জনকৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা মনিকা পরবর্তী সময়ে হোয়াইট হাউস ছেড়ে গিয়ে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ‘সুবক্তা’ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে তাঁর খ্যাতি বেড়েছে। এখন নিজের নামে হ্যান্ডব্যাগ বিপণি চালান মনিকা। ‘ডায়েট প্ল্যান’ নিয়েও পরামর্শ দেন তিনি।
১৯৯৩ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন ক্লিন্টন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে মনিকার সম্পর্ক ছিল। তাঁদের সম্পর্ক যে ‘যৌনগন্ধী’ ছিল, সে বিষয়ে লুকোছাপা করেননি মনিকা। ঘটনাচক্রে, তখন হোয়াইট হাউসে থাকতেন হিলারিও। পরে ক্লিন্টন জানিয়েছিলেন, গোটা বিষয়টি জানিয়ে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। দাবি করেছিলেন, মানসিক চাপ এড়াতেই মনিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।
বিতর্কিত কাহিনি প্রকাশ্যে আসার পর আর হোয়াইট হাউসে পা রাখা হয়নি মনিকার। আর প্রেসিডেন্ট-ঘরনি হিসাবে আট বছর ওয়াশিংটন ডিসি-র পৃথিবীখ্যাত সাদা বাড়িতে কাটানোর পর ২০১৬ সালে অল্পের জন্য সে বাড়িতে ঢুকতে পারেননি হিলারি। সে বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট (পপুলার ভোট)-এ এগিয়ে গিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের জটিল বিধির কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হার মানতে হয় তাঁকে।
ক্লিন্টন পরিবার এখনও রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো ঝোড়ো প্রচার না-করলেও কমলা হ্যারিসের সমর্থনে একাধিক জায়গায় ভাষণ দিয়েছেন বিল ক্লিন্টন। সোমবারও একটি সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জানান, কমলার জয় নিয়ে তিনি আশাবাদী। অগস্টে শিকাগোয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চে কমলার পাশে দাঁড়়িয়ে ট্রাম্পকে ‘স্বার্থপর’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। ভোটে দাঁড়িয়ে চূড়ান্ত সাফল্যের মুখ না-দেখলেও রাজনীতির ময়দান ছাড়েননি তাঁর স্ত্রী হিলারিও। মঙ্গলবার আমেরিকায় ভোটদান পর্ব শুরুর আগেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন তিনি। কমলাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার জন্য ভোট দিন, আমাদের পরিবারের জন্য ভোট দিন।’
আর মনিকা? তিনিও আমেরিকার ভোট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি। একটি সংবাদমাধ্যমে ভোট নিয়ে উত্তেজনা কমানোর ২৫টি উপায় বাতলেছেন একদা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নর্মসহচরী। ‘মনস্তাত্ত্বিক’ মনিকার সেই উপদেশ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভোটের লাইনে যাতে কেউ খালি পেটে না দাঁড়ান, তা নিশ্চিত করতে একটি খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থায় অর্থসাহায্য করার কথাও সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন মনিকা। তবে অতীত তাঁর পিছু ছাড়ছে না। ‘গুগ্ল’ তাঁর সম্পর্কে জানাতে গিয়ে লিখছে, ‘বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার জন্য গোটা বিশ্বে পরিচিত।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy