সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুবককে খুনের অভিযোগ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্পত্তি ভাগাভাগির জেরে বিবাদ নয়, বরং ছিনতাই করতে গিয়ে ওই যুবককে খুন করেন দুষ্কৃতীরা। ১৪ জুন কেতুগ্রামের আনখোনার ওই ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতারও করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার চার দিন পরে ১৮ জুন মৃতের স্ত্রী, আনখোনার বাসিন্দা চিত্রা মিস্ত্রী অভিযোগ করেন, ওই সন্ধ্যায় দুই বন্ধু কৃষ্ণ সরকার ও অনুপম পাত্রের সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন সুখময় মিস্ত্রী (৩৫)। কাজের সূত্রে মালদায় থাকতেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে আটটা নাগাদ আনখোনা-ইছাপুর রাস্তার বাঁকে তাঁর উপরে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। বাইক থামিয়ে রড, লাঠি দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করা হয়। তিন জনেই বাইক থেকে মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুখময়বাবুর। গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা কৃষ্ণ ও অনুপমকে ভর্তি করানো হয় কান্দরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে কৃষ্ণবাবুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সুস্থ হলে ছেড়ে দেওয়া হয় অনুপমবাবুকে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, রেলের ঠিকাদার সংস্থার কর্মী সুখময়বাবু কাজের সুবাদে সস্ত্রীক মুর্শিদাবাদের খাগড়ায় থাকতেন। আনখোনা গ্রামের ১২ বিঘা জমি নিয়ে মা করুণাময়ী মিস্ত্রী ও ভাই মৃন্ময়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল তাঁর। বছর তিনেক আগে গ্রামে ফেরার পর থেকে অশান্তি আরও বাড়ে। বাড়ির একটি অংশ এক লক্ষ টাকা দিয়ে কেনার পরেও ওই বাড়ি থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রায়শই হুমকি দেওয়া, মারধর করা হত বলে অভিযোগ করেন চিত্রাদেবী। স্বামীর মৃত্যুর পরে করুণাময়ীদেবী, মৃন্ময়, তাঁর স্ত্রী আগমনী ও মৃন্ময়ের শ্যালক মানব মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও দায়ের করেন তিনি।
পুলিশের দাবি, অন্য একটি মামলায় ধৃত, আনখোনার মিরপাড়ার বছর কুড়ির যুবক সাবিরুল শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে খুনের ঘটনার সঙ্গে তাঁর যোগ মেলে। গত ১৫ ডিসেম্বর সাক্ষী হিসাবে তাঁর জবানবন্দি নিতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে সাবিরুলের দুই ভাই মিঠুন শেখ ও চন্দন শেখের যোগ রয়েছে এই হত্যাকান্ডে। তাঁরাই কেতুগ্রামের আবু বক্কর খান ও আনখোনার নাসিম শেখকে দিয়ে ওই হামলা করায় বলেও দাবি করেন তিনি। পুলিশের দাবি, সাবিরুল জবানবন্দিতে জানায়, নাসিম ও আবুর কাছে খবর ছিল যে সুখময় মাঝেমাঝেই বাড়ি আসেন। বাড়ি ফেরার সময় তাঁর সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকাও থাকে। এর ভিত্তিতেই রবিবার রাতে নাসিম ও আবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’জনের কাছ থেকে দুটো ছুরি ও একটি লাঠি উদ্ধার হয়েছে। সুখময় হত্যায় ওই লাঠিটি ব্যবহার হয়েছিল বলেই দাবি পুলিশের। ধৃতদের এ দিন আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy