সিংহ বাড়ির পুজোর প্রতিমা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
এই পরিবার ও পুজোগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষ্মণ সেন, বর্ধমানের মহারাজা, রাজা রামমোহন রায়-সহ বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গ। সময়ের ফেরে ইতিহাস ফিকে হলেও ঐতিহ্য একউ রকম থেকে গিয়েছে কাঁকসা-বুদবুদের বিভিন্ন বাড়ির পুজোয়।
১৭৪০ খ্রীস্টাব্দে শুরু হয় কাঁকসার অযোধ্যা গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। পরিবারের সদস্যরা জানান, রামমোহন রায়ের বেদান্তের শিক্ষক উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশ এই পুজোর শুরু করেন। কথিত রয়েছে, বর্ধমান মহারাজার থেকে ১৭ একর জমি পেয়ে তিনি গ্রামে সংস্কৃত টোল প্রতিষ্ঠা করেন। পুজোর শুরুও হয় সেই সময়েই। মুখোপাধ্যায় বাড়ির বর্তমান সদস্য রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানান, একচালার প্রতিমাতে পুজো হয় শাক্তমতে। এখানে গণেশ নয়, কার্তিকের পাশে রয়েছে কলাবউ। ষষ্ঠীর দিন থেকে পুজো শুরু হয়েছে।
বিরুডিহার মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। পরিবারের সদস্যরা জানান, পুত্রসন্তান লাভের আশায় প্রথম পুজো শুরু করেন গৌরীশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। পরিবারের বর্তমান সদস্য দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায় জানান, পুজো উপলক্ষে চার দিন ধরেই চলে খাওয়াদাওয়া।
তিন শতাব্দীর পুরনো কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরের মণ্ডল বাড়ির পুজোও। পরিবারের সদস্য সাধন মণ্ডল জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ রামধন মণ্ডল পুজোর শুরু করেন। এই পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে একটি গল্প। সেটা কেমন? সাধনবাবু জানান, বাড়িতে পুজো না থাকার জন্য না কি রামধনবাবুকে এক বার শ্বশুরবাড়িতে ব্যঙ্গ করা হয়। এরপরে পুরী গিয়ে সমুদ্র-স্নান করে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। জগন্নাথ মন্দিরে রামধনবাবুর নামে এখনও একটি স্বর্কলস রাখা রয়েছে বলে জানান পরিবারের অন্য এক সদস্য গুরুদাসবাবু।
নবমীর দিন গ্রামের বাইরে তিলুইচণ্ডীতলায় পুজো হয়। জনশ্রুতি, এই পুজোটি লক্ষ্মণ সেনের আমলের। নবমীর দিন কুমারী পুজো দেখতে এখানে ভিড় জমান বহু মানুষ। এই গ্রামেরই মুখোপাধ্যায়বাড়ির পুজোও দু’শো বছরের পুরনো। পরিবারের সদস্য মুক্তি মুখোপাধ্যায় জানান, এখানে দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী ও সবস্বতী থাকলেও, থাকে না কার্তিক ও গণেশ।
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বুদবুদের মানকরের বড় কবিরাজ পরিবারকে জমিদারি দেন বর্ধমান রাজা। তখন থেকেই পুজোর শুরু হয়। এ ছাড়াও পারিবারিক পুজোর মধ্যে মানকরের বিশ্বাস বাড়ি, কাঁকসার সিলামপুরের সিংহ বাড়ির পুজোও এলাকায় নজরকাড়া। সিংহ পরিবারে পুজো হয় বৈষ্ণব মতে।
বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা জানান, অতীতের তুলনায় জাঁক কমলেও পুজোর রীতিনীতি, ঐতিহ্য এখনও সেই আগের মতোই থেকে গিয়েছে। আর সে জন্যই বোধহয় পরিবারের গণ্ডী ছাড়িয়ে এই পুজোগুলি নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy