Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Milind Soman Interview

শাহরুখের চেয়ে আমি বেশি ফিট, তবে মানসিক ভাবে ও আমার চেয়ে শক্তিশালী: মিলিন্দ সোমন

সাক্ষাৎকার নিতে গেলে পুশ আপ করতে হয়! পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ইচ্ছা হলে তাঁর মতো ফিটও হতে হবে। ৬০ ছুঁইছুঁই ‘যুবক’-এর দাবি এমন আরও অনেকই থাকে। হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে, কলকাতার ময়দানে বসে শাহরুখ থেকে স্যান্ডউইচ— সব নিয়েই মন খুলে কথা বললেন মিলিন্দ সোমন।

মিলিন্দ সোমন।

মিলিন্দ সোমন। ছবি: সংগৃহীত।

রিচা রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৮
Share: Save:

উচ্চতায় ৫’১১-র খানিকটা বেশি, মেদহীন পেটানো চেহারা, শীতের কুয়াশার মতো ধূসর চুল-দাড়ির ফ্রেমে গ্রিক দেবতার মতো সৌন্দর্য (অন্তত লোকে তা-ই বলে), হেমন্তের কলকাতায় হঠাৎ হাজির মিলিন্দ উষা সোমন। ‘জেবিজে’-এর উদ‍্যোগে শহর চষে ১০ হাজার কিলোমিটার ম্যারাথনের সূচনা করেছেন তিনি।

কথায় আছে, চোখে দেখা জিনিসও অনেক সময়ে বিশ্বাস হতে চায় না। আনন্দবাজার অনলাইন যখন মিলিন্দের মুখোমুখি হল, ‘লৌহমানবের’ সামনের টেবিলে তখন মিষ্টির প্লেট। কেশর-পেস্তা দেওয়া দুটো মালাই চমচমের একটির অর্ধেক নাকি তত ক্ষণে মিলিন্দের পেটে। বাকি দেড়খানা চমচমও রয়েসয়ে খাবেন বলে রেখে দিয়েছেন। ওই একই প্লেটে ঠাসা পুর ভরা লোভনীয় স‍্যান্ডউইচ। পাশেই কাচের বাহারি বোতলে লাল রঙের পানীয়। সম্ভবত বিট দিয়ে তৈরি হবে। কিন্তু মিলিন্দ মিষ্টি খাচ্ছেন! এ দৃশ‍্য এর আগে কখনও কেউ দেখেছে কি না, সন্দেহ আছে। আর তা নিয়েই শুরু হল জোর গল্প। মিষ্টি থেকে মডেলিং— বহু দিন পর নিজেকে মেলে ধরলেন মিলিন্দ।

প্রশ্ন: আপনি মিষ্টি খাচ্ছেন! ঠিক দেখছি, না কি স্বপ্ন?

মিলিন্দ: নিজের গায়ে এক বার চিমটি কেটে দেখে নিন। (হাসি)। কলকাতার মিষ্টি না খেয়ে ফিরিয়ে দেবে, এমন সাহস কার আছে। আমি তো চমচমের প্রেমে পড়ে গিয়েছি। কী অপূর্ব খেতে! আমার খুব ভাল লেগেছে।

প্রশ্ন: শাহুরুখ খান এবং আপনি দু’জনেই ষাটের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। মিষ্টি খেয়েও ফিটনেসে টেক্কা দিতে পারবেন শাহরুখকে? কী মনে হয় আপনার?

মিলিন্দ: আমার মনে হয় আমি পারব। কারণ, আমি নিজের জীবনযাপন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে শাহরুখও প্রচণ্ড ফিট। শারীরিক ভাবে নিজেকে বেশি শক্তিশালী মনে করলেও, শাহরুখ মানসিক ভাবে আমার চেয়ে বেশি ফিট। সমালোচনা, ট্রোলিং তো আছেই, সেই সঙ্গে এতগুলি বছর ধরে সাফল‍্যের শীর্ষ জায়গাটা ধরে রাখা ভীষণ কঠিন। শাহরুখ সে সব অবলীলায় করে ফেলেন। তবে বলিউডে আমার চোখে সবচেয়ে ফিট অভিনেতা হলেন অমিতাভ বচ্চন। জীবনে প্রচুর ওঠানামা দেখেছেন তিনি। বহু খারাপ সময় এসেছে। প্রায় ৮২-তে পৌঁছেও যে ভাবে তিনি একের পর একের পর এক কাজ করে চলেছেন, সেটা সত‍্যিই অনুপ্রেরণার।

প্রশ্ন: পান থেকে চুন খসলে শাহরুখ খানকে সমালোচনায় জেরবার হতে হয় কিন্তু ইতিহাস বলছে সমুদ্রের ধারে নগ্ন হয়ে দৌড়ে আপনিও কম ট্রোলড হননি। সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে কী ভাবে সামলেছিলেন?

মিলিন্দ: (ঠোঁটের কোণে হাসি এনে) এ ক্ষেত্রে আমার একটা কৌশল আছে। কোনও কারণে আমাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে আমি দৌড়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিই। তাতে যেটা হয়, সমালোচনা আমায় ধাওয়া করে ঠিকই, কিন্তু ছুঁতে পারে না।

প্রশ্ন: আপনার বাবা প্রয়াত প্রভাকর সোমন ফারম‍্যাকোলজিস্ট ছিলেন। মা ঊষা সোমন বায়োকেমিস্ট। আপনি নিজেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। পড়াশোনার পরিবেশে বড় হয়ে হঠাৎ মডেল হয়ে গেলেন কী ভাবে?

মিলিন্দ: মডেল হতে চাইনি। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে গিয়েছি। আমার তখন টাকার দরকার ছিল। তাই কাজ খুঁজছিলাম। আমি তখনও জানতাম না যে মডেলিংকে পেশা হিসাবে নেওয়া যায়। মার্জার সরণিতে হাঁটলে টাকা হাতে আসে, সেটাও জানা ছিল না। আমার কাছে হঠাৎই প্রস্তাব আসে। আমাকে কিছু টাকা দেবে কি না জেনে নিয়ে রাজি হই। আমার প্রথম কাজ সদ‍্যপ্রয়াত রোহিত বলের সঙ্গে। পত্রিকার পাতায় ছবি ছাপা হয়েছিল আমার। তখন থেকেই শুরু।

মডেলিং কী, সেটা জানার আগেই মডেল হয়ে যান মিলিন্দ।

মডেলিং কী, সেটা জানার আগেই মডেল হয়ে যান মিলিন্দ।

প্রশ্ন: মিলিন্দ, আপনি তো চাইলে জাতীয় স্তরের সাঁতারুও হতে পারতেন। ১৯৮৬ সালে এশিয়ান গেমসে সাঁতারে হয়তো ভারতকে সোনা এনেও দিতেন। কিন্তু সেই সুযোগ হেলায় হারালেন কেন?

মিলিন্দ: না না হেলায় হারাইনি। আসলে আমি যোগ দিতেই পারিনি। ১৯৮২ সালে আমি দিল্লি এশিয়ানে যোগ দিয়েছিলাম। তার পর ৮৪ সালে ‘ন‍্যাশনাল ওপেন মেনস’ পদক জিতেছিলাম। আর এই দুই কারণে এবং কিছু জটিলতায় আমি ৮৬-র এশিয়ান গেমসে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারিনি। পরে আমার বয়স বেড়ে যাওয়ায়, আর এশিয়ানে যাওয়ার সুযোগই ছিল না।

প্রশ্ন: আপনি তো ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’-এর ৭৫ শতাংশ শুটিং শেষ করার পরে, হঠাৎই ছেড়ে দেন সিনেমা। জানিয়ে দিয়েছিলেন, আপনি আর এই শুটিং করবেন না। সেটাই বা কেন করেছিলেন?

মিলিন্দ: (মুচকি হেসে) আমায় তো ওরা সময়ে জলখাবারই দেয়নি। আমার ঘড়ি ধরে খাবার খাওয়া অভ‍্যাস। কোনও কাজের জন‍্য আমি সেই অভ‍্যাসের বাইরে যেতে চাই না। যেখানে আমার নিয়মভঙ্গ হয়, আমি সেই জায়গা ছেড়ে দিই।

প্রশ্ন: তা হলে বাড়িতে কোন‍ও দিন সময়ে খাবার না পেলে কি গৃহত‍্যাগী হবেন ?

মিলিন্দ: আমি নিশ্চিত বাড়িতে কখনও এমন হবে না। কারণ আমি কোন নিয়মের মধ‍্যে দিয়ে যাই, সেটা বাড়ির প্রতিটি সদস‍্য জানেন। এখনও পর্যন্ত সেই নিয়মের নড়চড় হয়নি। আশা করি ভবিষ‍্যতেও হবে না।

প্রশ্ন: শোনা যায় আপনি নাকি সাবান মাখেন না, সেটা সত‍্যি?

মিলিন্দ: একদম সত‍্যি। কিন্তু আমার ত্বক জেল্লা দিচ্ছে কি না, সেটা আগে বলুন।

প্রশ্ন: বেশ চকচক করছে!

মিলিন্দ: কারণ আমি প্রচুর জল আর ফল খাই। খানিকটা খাই, আর কিছুটা ফল মুখে মেখেও নিই। শুধু সাবান নয়, আমি কোনও ক্রিম, এমনকি সানস্ক্রিনও ব‍্যবহার করি না। অনেকেই জানেন না, সিনেমাতেও আমি কখনও মেকআপ করি না। একমাত্র ‘বাজিরাও মাস্তানি’তে উইগ পরতে হয়েছিল বলে খানিকটা মেকআপ করতে হয়েছিল বাধ‍্য হয়ে। ‘ইমার্জেন্সি’তেও আমি শুধু একটা গোঁফ লাগিয়েছি। ছিটেফোঁটাও মেকআপ নেই। ত্বক ভাল রাখার জন‍্য খাওয়াদাওয়াতেও বদল আনা জরুরি। আর সেই কারণেই নায়িকাদের চেয়েও আমি বেশি ঝলমল করি সব সময়ে। (ঠোঁটে আত্মগরিমার হাসি)।

তাঁর ত্বক নায়িকাদের চেয়েও বেশি ঝলমলে, দাবি মিলিন্দের।

তাঁর ত্বক নায়িকাদের চেয়েও বেশি ঝলমলে, দাবি মিলিন্দের।

প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী অঙ্কিতা কোনওয়ার যোগাসন করতে ভালবাসেন। সমাজমাধ‍্যমে প্রায়ই তিনি তাঁর যোগাসনের ভিডিয়ো দিয়ে থাকেন। আপনাকে কেন যোগাসন করতে দেখা যায় না?

মিলিন্দ: যোগের পরিধি অনেক বিস্তৃত। এটা শুধু আসনে সীমাবদ্ধ নেই। অঙ্কিতা আসন করতে ভালবাসেন। কিন্তু আমি যোগাসন করি না। যোগের মূল লক্ষ‍্য হল মনোযোগ। শুধু আসন নয়, যে কোনও শরীরচর্চা যদি মন দিয়ে করা যায়, সেটাই যোগ। আমি লক্ষ‍্য স্থির রেখে মন দিয়ে দৌড়ই। ওটাও যোগের অংশ।

প্রশ্ন: আপনার মায়ের বয়স ৮৫, আপনার স্ত্রী ৩২। এই দুই প্রজন্মের মানুষকে নিয়মিত শরীরচর্চা করার অনুপ্রেরণা কি আপনিই জুগিয়েছেন?

মিলিন্দ: ফিট থাকার ইচ্ছেটা নিজের হতে হয়। পরামর্শ দিয়ে কিংবা বুঝিয়ে কিছু হয় না। ৭-৮ বছর বয়স থেকে আমি সাঁতার কাটি। তখন তো ফিটনেস শব্দটা অনেকের কাছেই অজানা ছিল। ফিট থাকা নিয়ে এত চর্চাও হত না। আমি নিজেও অনেক কিছু জানতাম না। ধীরে ধীরে সব শিখেছি, জেনেছি। আমার মনে হয় এটা পুরোটাই নিজের ব‍্যাপার।

প্রশ্ন: আপনার পছন্দের ‘ওয়ার্কআউট পার্টনার’ কে? মা না কি স্ত্রী?

মিলিন্দ: অঙ্কিতা আর মা দু'জনেই যোগাসন করেন। আমি দৌড়ই। ওঁরা দু’জনে আবার সেটা করেন না। ফলে একসঙ্গে শরীরচর্চা খুব একটা করা হয় না। তবে মাঝেমাঝে আমি সূর্য নমস্কার করি। কখনও কখনও আমার সঙ্গে ওঁরাও থাকেন। আসলে আমাদের তিন জনেরই শরীরচর্চার ধরন আলাদা।

প্রশ্ন: শরীরচর্চা, ডায়েট বাদ দিয়ে আপনার পাঁচটি ফিটনেস মন্ত্র কী?

মিলিন্দ: আমার ক্ষেত্রে এই মন্ত্র চারটি। আত্মচেতনা, নিজেকে ভালবাসা, সুস্থ থাকার বোধ আর প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Diet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy