কালনায় একশো আট শিবমন্দির চত্বরে নানা মন্দিরের গায়ে নকশা নষ্ট হয়ে ইট বেরিয়ে যাওয়ায় উঠেছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র
মূলত এই স্থাপত্যের জোরেই রাজ্যের পর্যটন শিল্পের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠতে চায় এই শহর। পর্যটন উৎসব থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা উদ্যোগেরও কেন্দ্রে থাকে এই স্থাপত্যটিই। কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য ১০৮ শিব মন্দিরের সংস্কারে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ কালনার বাসিন্দাদের একাংশের। মন্দিরের যে অংশে সংস্কারের কাজ চলছে, তার গুণমানও নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
দু’টি বৃত্তে সাজানো অভিনব নির্মাণশৈলীর উদাহরণ এই মন্দিরটি দেখতে ফি বছর ভিড় জমান দেশি, বিদেশি পর্যটকেরা। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্তমানে মন্দিরের নানা জায়গা থেকে ইট, সিমেন্ট খসে পড়ছে। কিছু জায়গায় অবশ্য সংস্কারের কাজ শুরু করেছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ। অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে সংস্কারের কাজ করানোর ফলে মন্দিরের গা থেকে নানা ধরনের নকশা, কারুকার্য হারিয়ে যেতে বসেছে। অভিযোগ, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের নজরদারিতে থাকা আরও বেশ কিছু মন্দিরেও এমন ঘটনা ঘটছে।
অথচ প্রতাপেশ্বর মন্দির, লালজি মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির, ভবাপাগলার মন্দির, দাঁতনকাঠি তলার মসজিদ-সহ নানা পুরাতাত্ত্বিক স্থানে ঠাসা এই শহরের ১০৮ শিব মন্দিরটিই প্রধান আকর্ষণের স্থান। বহু পর্যটক শহরে আসেন, নানা মন্দির গাত্রে থাকা টেরাকোটার কাজ দেখতেও। পর্যটন শিল্পকে আরও চাঙ্গা করতে সম্প্রতি ভাগীরথীর উপরে ৫০০ কোটি টাকা খরচে সেতু তৈরির কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানের মধ্যে সংযোগকারী এই সেতুটি তৈরি হলে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে বলে আশা প্রশাসনের কর্তাদের।
কিন্তু ১০৮ শিবমন্দিরের বর্তমান হাল এই সব ‘আশা’য় জল ঢালতে পারে বলে মনে করছেন কালনাবাসীর একাংশ। কেন এমন আশঙ্কা? মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, বেশ কিছু জায়গায় নোনা ধরেছে। বেশ কিছু জায়গায় ইট বেরিয়ে গিয়েছে। এলাকার লোক সংস্কৃতি গবেষকদের অভিযোগ, সংরক্ষণের কাজ শুরুর পরে দেখা গেল, মন্দির গাত্রের নকশাগুলি সংরক্ষণ করা হল। এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে নকশার জায়গায় সিমেন্ট লেপে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মহকুমাশাসকের (কালনা) অফিসে এলাকার সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে জড়িত কয়েক জনকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে বিষয়টি নিয়ে সরব হন কালনার বাসিন্দা সংস্কৃতিকর্মী মনোরঞ্জন সাহা। ওই বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘পুরাতত্ত্ব বিভাগ অদক্ষ শ্রমিক কাজে লাগাচ্ছে কালনার প্রাচীন মন্দিরগুলির সংস্কারের কাজে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাওয়া টেরাকোটার মূর্তির জায়গা ভরাট করা হচ্ছে সাধারণ ‘প্লেট’ দিয়ে।’’ বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই মনোরঞ্জনবাবুর অভিযোগ সমর্থন করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুরও আশঙ্কা, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দশ-পনেরো বছরের মধ্যে বহু মন্দিরের গঠনশৈলী নষ্ট হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে আমি চিঠি দেব পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণে।’’
বিষয়টি পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (কলকাতা সার্কেল) নজরে ইতিমধ্যেই আনা হয়েছে বলে জানান মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া। পুরাতত্ত্ব বিভাগের এক আধিকারিক মিহিরকান্তি সরকার বলেন, ‘‘কালনার মন্দিরগুলির সম্প্রতি সংস্কার করা হয়নি। তবে অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে, এমনটা শুনিনি। আমি নিজে কালনার মন্দিরগুলি পরিদর্শন করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy